সকাল থেকে হাদির সঙ্গে নির্বাচনি প্রচারণায় ছিলেন গুলি করা দুই সন্দেহভাজন: দাবি সতীর্থদের
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হাদির সতীর্থ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারী সন্দেহে যে দুজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তারা গত কয়েক দিন ধরেই হাদির নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন। এমনকি ঘটনার দিন শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল থেকেও তারা হাদির সঙ্গেই ছিলেন।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর বিজয় নগর বক্স কালভার্ট রোডের ডিআর টাওয়ারের সামনে গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানে তার অস্ত্রপচার চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় ছিলেন শরিফ ওসমান হাদি। রিকশায় তার সঙ্গে ছিলেন তার ভাই। এ সময় মোটরসাইকেলে করে আসা দুই দুর্বৃত্ত খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে। গুলিটি হাদির কানের নিচে বিদ্ধ হয়ে ঘাড় দিয়ে মাথায় চলে যায়।
সন্দেহভাজনদের পরিচয় ও গতিবিধি
জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ইসরাফিল ফরায়েজী জানান, হামলাকারী দুজন গত কয়েক দিন ধরে হাদির সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছিলেন। তারা নিজেদের কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেননি। তারা হাদিকে পছন্দ করেন এবং স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে প্রচারণায় অংশ নিতে চান বলে জানিয়েছিলেন। ফলে সরল বিশ্বাসে হাদি তাদের প্রচারণায় যুক্ত করেন।
ইসরাফিল ফরায়েজী আরও বলেন, 'সন্দেহভাজন ওই দুজন সবসময় মাস্ক পরা থাকতেন। তাদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তারা ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলে তা খুলতেন না। হাদি ভাই বিষয়টিকে তখন গুরুত্ব দেননি।'
হাদির সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার সকালেও ওই দুজন হাদির সঙ্গে ছিলেন। হাদি সকালে সেগুনবাগিচা ও মতিঝিল এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালান। তাদের একজনের পরনে ছিল পাঞ্জাবি এবং অন্যজনের পরনে ছিল কোট-প্যান্ট।
মসজিদের সামনে অপেক্ষা
প্রচারণা শেষে মতিঝিলে খলিলের দোকানের সামনের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন হাদি। এ সময় তার সঙ্গে থাকা পিআর [জনসংযোগ] টিমের সদস্যরাও নামাজ পড়তে মসজিদে প্রবেশ করেন। তবে সন্দেহভাজন ওই দুজন মসজিদে না গিয়ে বাইরেই অপেক্ষা করছিলেন এবং হাদির গতিবিধি লক্ষ্য করছিলেন।
ডাকসুর স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, 'জুমার নামাজের সময় পিআর টিমের সবাই হাদি ভাইয়ের সঙ্গে নামাজ পড়েছেন, কিন্তু ওই দুজন মসজিদে যায়নি। তারা বাইরে দাঁড়িয়ে হাদি ভাইয়ের ওপর নজর রাখছিল।'
নামাজ শেষে হাদি রিকশায় করে বক্স কালভার্ট রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার পেছনে আরও দুটি রিকশায় ছিলেন পিআর টিমের সদস্যরা। তখনই মোটরসাইকেলে এসে ওই দুজন হামলা চালায়।
সন্দেহজনক আচরণ ও ফুটেজ
আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ জানান, সন্দেহভাজন দুজন সকাল থেকেই সন্দেহজনকভাবে চলাফেরা করছিলেন। পিআর টিমের সদস্যরা তাদের ছবি তুলতে চাইলেও তারা তুলতে দেননি। এমনকি তারা নিজেদের ছবি তোলায় নিষেধও করেছিলেন।
তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে তাদের ছবি আছে। তদন্তের স্বার্থে এবং যাতে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন, তাই আমরা এখনই ছবি প্রকাশ করছি না। তবে মোটরসাইকেলে চড়ে যাওয়ার একটি ফুটেজ আমরা পেয়েছি, সেখানেও এই দুজনকে দেখা গেছে।'
মিনহাজ আরও বলেন, 'যারা পরিকল্পিতভাবে এই আক্রমণ চালিয়েছে, তারা প্রমাণ লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করবে বলে আমাদের ধারণা।'
এদিকে অনলাইন সংবাদ পোর্টাল দ্য ডিসেন্ট-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাইক থেকে গুলি ছোঁড়া দুই ব্যক্তি আজ দুপুরে মতিঝিল ওয়াপদা মাদ্রাসা (জামিআ দারুল উলুম মতিঝিল) এলাকায় হাদীর সাথেই মাস্ক পরা অবস্থায় জনসংযোগে অংশ নিয়েছিল।
তবে এই বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শারীরিক অবস্থা
ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে হাদিকে দেখে আসার পর আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ বলেন, 'হাদি ভাইয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্যই এই আক্রমণ চালানো হয়েছিল। গুলিটি কানের নিচ দিয়ে ঢুকে ঘাড় হয়ে মাথায় বিদ্ধ হয়েছে। প্রথমে তার পালস পাওয়া যাচ্ছিল না এবং ব্রেইন কাজ করছিল না। তবে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, তার পালস পাওয়া গেছে। এতে চিকিৎসকরা কিছুটা আশার আলো দেখছেন।'
