ইউক্রেনের গণতন্ত্র নিয়ে ট্রাম্প প্রশ্ন তোলায় 'নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত' জানালেন জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমিরি জেলেনস্কির বিরুদ্ধে ক্ষমতা আকঁড়ে থাকার অভিযোগ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের এ অভিযোগের পর যুদ্ধের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে প্রস্তুত বলে জানালেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, যদি ইউক্রেনের সংসদ এবং বিদেশি মিত্ররা এতে অনুমতি দেন তাহলে আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবেন।
ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে স্পষ্টতই বিরক্ত জেলেনস্কি বলেন, 'এটি ইউক্রেনের জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয়, অন্য দেশের লোকদের নয়—যদিও আমরা আমাদের অংশীদারদের প্রতি পূর্ণ সম্মান জানাই।'
তবে তিনি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভোট আয়োজনের উপায় খুঁজে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জেলেনস্কি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, 'যেহেতু আজ এই প্রশ্নটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং আমাদের অংশীদাররা তুলেছেন, তাই খুব সংক্ষেপে বলছি, দেখুন, আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।'
তিনি আরও বলেন, 'এর পাশাপাশি আমি যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করছি—প্রয়োজনে ইউরোপীয় সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে—নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে। আর তখন আগামী ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যেই ইউক্রেন নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত থাকবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার ইচ্ছা এবং প্রস্তুতি দুটোই আছে।'
মঙ্গলবারের আগে প্রকাশিত পলিটিকো-কে দেওয়া এক দীর্ঘ ও অসংলগ্ন সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, 'তাদের অনেক দিন ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি। আপনি জানেন, তারা গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু একসময় এসে বিষয়টি আর গণতন্ত্র থাকে না।'
জেলেনস্কির পাঁচ বছরের মেয়াদ গত বছরের মে মাসে শেষ হয়েছে। তবে ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে যুদ্ধকালীন সময়ে নির্বাচন নিষিদ্ধ। এমনকি তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরাও বারবার বলেছেন, যুদ্ধ চলার কারণে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনের অনুকূল নয়।
বিরোধী দল হোলোস-এর সংসদ সদস্য সেরহি রাখমানিন বলেন, 'এটি শুধু ক্ষতি করবে। তিনি দেশের প্রধান কমান্ডার, আর দেশ এমন অবস্থায় রয়েছে যেখানে আমাদের সেই সুযোগ নেই, তার সঙ্গে আমাদের যেসব সমস্যা থাকতে পারে তা যাই হোক। এটি শুধুমাত্র শত্রুর পক্ষে কাজ করবে।'
জেলেনস্কি বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুটি মূল প্রশ্ন সমাধান করা প্রয়োজন। প্রথমটি হলো লজিস্টিক সমস্যা—কিভাবে সেনাবাহিনী, মিলিয়ন মিলিয়ন স্থানচ্যুত মানুষ এবং দখলাধীন এলাকায় বসবাসকারীরা ভোট দিতে পারবে। দ্বিতীয়টি হলো আইনগত বিষয়—যুদ্ধকালীন আইন কার্যকর থাকায় কীভাবে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা সম্ভব।
তিনি নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে মিত্রদের পরামর্শ চেয়েছেন এবং আইন সংশোধনের মাধ্যমে যুদ্ধকালীন সময়েও নির্বাচন সম্ভব করার বিষয়ে সংসদ সদস্যদের পরামর্শ চাইছেন। জেলেনস্কি বলেন, 'আমি অংশীদারদের প্রস্তাবনার অপেক্ষায় আছি, সংসদ সদস্যদের প্রস্তাবনার অপেক্ষায় আছি, এবং নির্বাচনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।'
জেলেনস্কি এটি বলেন ইউরোপের বিভিন্ন রাজধানীতে কূটনৈতিক সফর শেষ করে ইউক্রেনে ফেরার পথে। এই সফর এমন সময় হয়েছে যখন হোয়াইট হাউস কিয়েভের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে শান্তি চুক্তিতে সই করার জন্য।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন সবরকম চেষ্টা করবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক আয়োজন করতে।
তিনি আরও জানান, রাশিয়া সম্মতি দিলে কিয়েভ শক্তি সরবরাহ সংক্রান্ত যুদ্ধবিরতি গ্রহণের জন্য প্রস্তুত।
সপ্তাহান্তে, ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র দোহায় এক সম্মেলনে বলেন, জেলেনস্কি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন কারণ তিনি ভয় পান, নাহলে ক্ষমতা হারাবেন। তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, যদি যুদ্ধ শীঘ্রই শেষ না হয়, ট্রাম্প ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে পারেন।
ছেলের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, 'এটা ঠিক নয়। কিন্তু একেবারেই ভুলও নয়,' যা অস্পষ্ট প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যায়।
অপরদিকে, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দেওয়া উচিত—এমন ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপ ইউক্রেনের ভীষণভাবে অপছন্দ। অন্যদিকে, রাশিয়া যে কোনো চুক্তিতে রাজি হতে প্রস্তুত, তারও কোনো লক্ষণ নেই, এমনকি সেই চুক্তি মস্কোর জন্য সুবিধাজনক হলেও তারা প্রস্তুত নয়।
