ওয়ার্নার ব্রাদার্স কিনতে প্যারামাউন্টের ১০৮ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব
হলিউডে এখন টানটান উত্তেজনা। ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি কেনার লড়াইয়ে এবার নতুন মোড়। সোমবার প্যারামাউন্ট স্কাইড্যান্স ওয়ার্নার ব্রাদার্সের জন্য ১০৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৮৪০ কোটি ডলারের এক বিশাল প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য একটাই—নেটফ্লিক্সকে হটিয়ে একটি বিশাল মিডিয়া সাম্রাজ্য গড়ে তোলা।
গত শুক্রবারই মনে হচ্ছিল সব শেষ। নেটফ্লিক্স ৭২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের টিভি, ফিল্ম স্টুডিও এবং স্ট্রিমিং ব্যবসা কিনে নেওয়ার প্রায় সব ঠিকঠাক করে ফেলেছিল। কিন্তু প্যারামাউন্টের এই নতুন 'শত্রুতাপূর্ণ' বা জোরপূর্বক কেনার প্রস্তাব সেই হিসেব উল্টে দিয়েছে। অর্থাৎ ব্যাটম্যান, সুপারম্যান কিংবা হ্যারি পটার কার ঘরে যাবে, সেই লড়াই এখনই থামছে না।
সোমবার বিকেলে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের বোর্ড জানিয়েছে, তারা প্যারামাউন্টের প্রস্তাব খতিয়ে দেখবে। তবে আপাতত তারা নেটফ্লিক্সের সঙ্গেই থাকার পক্ষে।
প্যারামাউন্টের প্রস্তাবে কী আছে?
প্যারামাউন্ট শেয়ার প্রতি ৩০ ডলার নগদ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এই টাকার জোগান দিচ্ছে জ্যারেড কুশনারের কোম্পানি 'অ্যাফিনিটি পার্টনারস'। কুশনার হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি সরকারি তহবিল এবং ধনকুবের ল্যারি এলিসনের পরিবার এই টাকার পেছনে আছে। ল্যারি এলিসন প্যারামাউন্ট প্রধান ডেভিড এলিসনের বাবা এবং হোয়াইট হাউসের বেশ ঘনিষ্ঠ।
প্যারামাউন্টের দাবি, তাদের প্রস্তাবটি নেটফ্লিক্সের চেয়ে অনেক ভালো। তারা শেয়ারহোল্ডারদের ১৮ বিলিয়ন ডলার বেশি নগদ টাকা দিচ্ছে। তাছাড়া পুরো ওয়ার্নার ব্রাদার্স (কেবল টিভি সহ) তারা কিনবে, যেখানে নেটফ্লিক্স শুধু স্টুডিও আর স্ট্রিমিং অংশ কিনছে।
প্যারামাউন্টের সিইও ডেভিড এলিসন বলেন, "আমাদের প্রস্তাব হলিউডকে আরও শক্তিশালী করবে। এতে টাকার নিশ্চয়তা বেশি এবং এটি সিনেমার বাজার ও দর্শকদের জন্যও ভালো।"
এই লড়াইয়ে রাজনীতিও জড়িয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুটি বড় টিভি অপারেটর এক হলে একচেটিয়া ব্যবসার অভিযোগ উঠতে পারে। ডেমোক্রেটিক সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেছেন, "প্যারামাউন্ট ও ওয়ার্নার ব্রাদার্স এক হলে তা হবে একচেটিয়া ব্যবসার চূড়ান্ত রূপ।" তিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের এই চুক্তিতে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, কোনো পক্ষই তার বন্ধু নয় এবং তিনি সঠিক কাজটিই করতে চান।
নেটফ্লিক্সের সিইও টেড সারানডোস অবশ্য আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, "প্যারামাউন্টের এই প্রস্তাব প্রত্যাশিতই ছিল। তারা ৬ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের কথা বলছে। এই সাশ্রয় কোথা থেকে আসবে? নিশ্চয়ই চাকরি ছাঁটাই করে? আমরা কিন্তু চাকরি কাটি না, তৈরি করি।"
নাটকীয় মোড়
যদি ওয়ার্নার ব্রাদার্স এখন প্যারামাউন্টের প্রস্তাব মেনে নেয়, তবে তাদের নেটফ্লিক্সকে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে হবে। আবার নেটফ্লিক্স যদি চুক্তি থেকে সরে আসে, তাদের দিতে হবে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।
শেয়ার বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। প্যারামাউন্টের শেয়ারের দাম ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে, ওয়ার্নার ব্রাদার্সের বেড়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে নেটফ্লিক্সের শেয়ার ৪ শতাংশ কমেছে।
বিশ্লেষক রস বেনেস বলেন, "এই নাটক এখনই শেষ হচ্ছে না। প্যারামাউন্ট এখন শেয়ারহোল্ডার আর রাজনীতিবিদদের কাজে লাগিয়ে নেটফ্লিক্সকে আটকানোর চেষ্টা করবে। এই লড়াই আরও লম্বা হতে পারে।"
প্যারামাউন্টের অভিযোগ, ওয়ার্নার ব্রাদার্স তাদের সঙ্গে ঠিকমতো আলোচনাই করেনি এবং আগেই নেটফ্লিক্সকে বিজয়ী ধরে নিয়েছে। সিইও ডেভিড এলিসন বলেন, পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যেই পক্ষপাতিত্ব আছে।
সব মিলিয়ে হলিউডের এই মহানাটক এখন কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
