‘৬০ মিনিটস’ সাক্ষাৎকার নিয়ে ট্রাম্পের মামলায় পারামাউন্টের সঙ্গে ১৬ মিলিয়ন ডলারে সমঝোতা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা মামলায় ১৬ মিলিয়ন ডলারের সমঝোতায় পৌঁছেছে সিবিএস-এর মূল প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট। মঙ্গলবার রাতে এই সমঝোতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্যারামাউন্ট জানিয়েছে, এই অর্থ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ট্রাম্পকে দেওয়া হবে না, বরং তার ভবিষ্যৎ প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরির জন্য বরাদ্দ থাকবে।
কোম্পানির বিবৃতিতে বলা হয়, অর্থপ্রদানের শর্তে "এ সমঝোতার আওতায়, (ট্রাম্পের কাছে) কোনো ধরনের দুঃখপ্রকাশ বা অনুশোচনা প্রকাশ করা হয়নি।"
এই ঘোষণার পরে আজ বুধবার পুঁজিবাজারে প্রি-মার্কেট ট্রেডিং-এ পারামাউন্টের শেয়ারমূল্য ০.৫ শতাংশ বেড়েছে।
মামলার পটভূমি
গত বছরের অক্টোবরে সিবিএস-এর '৬০ মিনিটস' অনুষ্ঠানে প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প ১০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সাক্ষাৎকারটি বিভ্রান্তিকরভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে, যা ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করতে পারে।
পরবর্তীতে, ফেব্রুয়ারিতে সংশোধিত অভিযোগে তিনি ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়ে ২০ বিলিয়ন ডলার দাবি করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, হ্যারিসের ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে—একই প্রশ্নে দুই রকম উত্তর দেওয়ার মতো করে দেখানোর জন্য দুটি ভিন্ন সংস্করণের সাক্ষাৎকার প্রচার করে সিবিএস।
সিবিএসের অবস্থান ও পরবর্তী পদক্ষেপ
সিবিএস আগে থেকেই মামলাটিকে "সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন" বলে দাবি করে তা খারিজের আবেদন করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত প্যারামাউন্ট সমঝোতার পথে এগিয়ে আসে।
এ সমঝোতার আওতায় '৬০ মিনিটস' ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার প্রচারের পর সম্পূর্ণ লিখিত ট্রান্সক্রিপ্ট প্রকাশ করতে রাজী হয়েছে, তবে আইনি বা জাতীয় নিরাপত্তাজনিত কোনো কারণ থাকলে— সেখান থেকে কিছু অংশ বাদ দেওয়া যেতে পারে।
এবিষয়ে মন্তব্যের জন্য প্যারামাউন্টের চেয়ার শেরি রেডস্টোনের সাথে যোগাযোগ করে রয়টার্স। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
গভীর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অন্যান্য মামলা
ট্রাম্পের আইনি দল এই সমঝোতাকে "আমেরিকার জনগণের জন্য আরেকটি বিজয়" হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এটি এমন এক সময়ে হলো, যখন প্যারামাউন্ট ৮.৪ বিলিয়ন ডলারে স্কাইডান্স মিডিয়ার সঙ্গে একীভূকরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যার জন্য মার্কিন ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের অনুমোদন প্রয়োজন।
এর আগেও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করে সফল হয়েছেন ট্রাম্প। গত ডিসেম্বরে ডিজনি'র মালিকানাধীন এবিসি নিউজ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির মামলায় ১৫ মিলিয়ন ডলার— ট্রাম্পের প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরির জন্য দেওয়ার পাশাপাশি প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ করে।
এছাড়া, জানুয়ারি মাসে মেটা (ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান) ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থগিতের ঘটনার জেরে দায়ের করা মামলায় প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলারের সমঝোতায় পৌঁছেছে।
মিডিয়ার বিরুদ্ধে আরও আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, মিডিয়ার বিরুদ্ধে তিনি আরও আইনি পদক্ষেপ চালিয়ে যাবেন। গত ডিসেম্বরে আইওয়ার 'ডেস মইনস রেজিস্টার' পত্রিকার বিরুদ্ধে এক জরিপকে কেন্দ্র করে তিনি মামলা করেন। ওই জরিপে কমলা হ্যারিস আইওয়ায় ট্রাম্পের তুলনায় তিন শতাংশ এগিয়ে আছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
পত্রিকাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা তাদের প্রতিবেদনের পক্ষে অটল রয়েছে এবং মামলাটি ভিত্তিহীন। চলতি বছরের ৩০ জুন ট্রাম্প এই মামলা ফেডারেল আদালত থেকে তুলে নিয়ে আইওয়া রাজ্যের আদালতে পুনরায় দায়ের করেছেন।