মার্কিন পণ্যের ওপর বিনা শুল্কের শর্তে ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা ট্রাম্পের
শেষ মুহূর্তের আলোচনা শেষে ভিয়েতনামের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার তিনি বলেন, এখন থেকে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।
এর আগে গত এপ্রিল মাসে ট্রাম্প ঘোষিত 'পারস্পরিক শুল্কনীতি'র আওতায় এসব পণ্যে ৪৬ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ছিল, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল আগামী সপ্তাহে।
ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, এখন থেকে ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে এবং ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক ব্যাখ্যা করে বলেন, যদি অন্য কোনো দেশ তাদের পণ্য ভিয়েতনামের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়, তাহলে সেসব পণ্যে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে।
তবে নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ করবে না। অর্থাৎ, মার্কিন পণ্য ভিয়েতনামের বাজারে শূন্য শুল্কে প্রবেশ করবে।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, 'ভিয়েতনাম এমন কিছু করতে যাচ্ছে, যা তারা আগে কখনো করেনি। তারা আমাদের বাজারে পূর্ণ প্রবেশাধিকার দেবে।' তিনি আরও বলেন, 'তারা মার্কিন পণ্যের জন্য বাজার খুলে দেবে, কোনো শুল্ক ছাড়াই।'
তবে চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েছে কি না বা ভিয়েতনাম এই শর্তে সম্মত হয়েছে কি না—তা এখনো পরিষ্কার নয়। ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ভিয়েতনাম নিউজ জানিয়েছে, দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক তো লাম বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং এটিকে 'একটি কাঠামোগত চুক্তি' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ফোনালাপে তো লাম যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেন, তারা যেন ভিয়েতনামকে একটি 'বাজার অর্থনীতি' হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং নির্দিষ্ট উচ্চপ্রযুক্তি পণ্যের ওপর রপ্তানি সীমা তুলে নেয়।
'শুল্ক' হচ্ছে মূলত আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত কর, যা সাধারণত আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করতে হয়। যদিও এসব প্রতিষ্ঠান চাইলে নিজেরা খরচ বহন করতে পারে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই খরচ গ্রাহকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
এর ফলে অনেক দেশের আশঙ্কা—যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্যের চাহিদা কমে যাবে।
ট্রাম্প এই চুক্তিকে 'গ্রেট ডিল অব কো-অপারেশন' আখ্যা দিয়েছেন। এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্র 'ট্রান্স-শিপমেন্ট' নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসা পণ্যে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেন, বর্তমানে ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত এক-তৃতীয়াংশ পণ্যই মূলত চীনে তৈরি, যা ভিয়েতনামের মাধ্যমে ঘুরে আসে।
ভিয়েতনাম বর্তমানে নাইকি, অ্যাপল, গ্যাপ এবং লুলুলেমন-এর মতো বড় ব্র্যান্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। চীনে ট্রাম্পের প্রথম দফার শুল্ক আরোপের পর অনেক কোম্পানি তাদের কারখানা ভিয়েতনামে সরিয়ে নেয়।
চীনা পণ্যে ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বিগত বছরগুলোতে ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের আমদানি দ্রুত বেড়েছে। বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৩৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য এসেছে—যা ৫ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ।
একইসঙ্গে, বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। গত বছর ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ১২৩ বিলিয়ন ডলার, যা দেশটির তৃতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি। ২০১৯ সালে এটি ছিল ৫৬ বিলিয়ন ডলার।
ভিয়েতনামের বড় রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স, পোশাক এবং আসবাবপত্র। যদিও এসব ক্ষেত্রে চীন এখনো শীর্ষ অবস্থানে, তবে দ্রুত এগিয়ে আসছে ভিয়েতনাম।
এই চুক্তির ঘোষণার পর ভিয়েতনামে উৎপাদন-নির্ভর বেশ কয়েকটি মার্কিন কোম্পানির শেয়ারদর বেড়ে যায়। নাইকি এবং কলাম্বিয়া স্পোর্টসওয়্যারের শেয়ারদর যথাক্রমে ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। লুলুলেমন এবং ভিএফ করপোরেশনও ইতিবাচক প্রবণতা দেখায়।
বাজারে এই ঘোষণার প্রভাব পড়ে। দুপুর নাগাদ এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায়, নাসডাক কম্পোজিটও শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে যায়। তবে ডাও জোন্স সূচক কিছুটা কমে গেলেও পরে ঘাটতি পুষিয়ে নেয়।
