করহার নয়, সুশাসনের অভাবই বিনিয়োগের প্রধান বাধা: এনবিআর চেয়ারম্যান

বাংলাদেশে বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণের প্রধান বাধা করহার নয়, বরং আইনের শাসন ও সুশাসনের অভাব বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
আজ (১২ মার্চ) এনবিআর সদর দপ্তরে 'আয়কর আইন ২০২৩: সংস্কার দৃষ্টিভঙ্গি' শীর্ষক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'অনেকে মনে করতেন কর ছাড় দিলে বিনিয়োগ আসবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ব্যবসায়ীরা করকে ভয় পান না। এফডিআই কম হওয়ার মূল কারণ সুশাসনের অভাব।'
তিনি আরও বলেন, 'শূন্য করহার ও নানা প্রণোদনা দিলেও সুশাসন নিশ্চিত না হলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না।'
এনবিআর চেয়ারম্যান বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাবের জন্য অসঙ্গতিপূর্ণ করনীতিকে দায়ী করেন।
তিনি জানান, পরোক্ষ করের ভার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর বেশি পড়ে। 'এখনো মোট রাজস্ব আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে, যা দরিদ্রদের ওপর বেশি চাপ সৃষ্টি করে,' বলেন তিনি।
আলাদা হচ্ছে রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়ন
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়ন আলাদা করার কাজ এ মাসেই শুরু হবে এবং এ বিষয়ে একটি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করা হবে।
তিনি বলেন, আগামী জুলাই থেকে পৃথক নীতি ও প্রশাসনিক কাঠামো চালু করা হবে, যাতে রাজস্ব কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালিত হতে পারে।
'রাজস্ব নীতির প্রধান হিসেবে বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা থাকবেন, পাশাপাশি সহায়ক টিমেও বিশেষজ্ঞরা কাজ করবেন,' বলেন তিনি।
বর্তমানে এনবিআরই রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করে। তবে এ দ্বৈত ভূমিকার ফলে কার্যক্রমে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী, করদাতা ও অর্থনীতিবিদরা নীতি ও প্রশাসন পৃথক করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে রাজস্ব সংস্কার কমিটি গঠন করেছে। গত ডিসেম্বরে কমিটি রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়ন পৃথক করার সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
তবে রাজস্ব নীতি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের হাতে যেতে পারে—এমন খবরে এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকেই নীতি ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব এনবিআর কর্মকর্তাদের হাতেই রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান নিজেও রাজস্ব নীতির দায়িত্ব প্রশাসন ক্যাডারের হাতে দেওয়ার পক্ষে—এমন গুঞ্জন রয়েছে। সাধারণত প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা এনবিআর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এ কারণে এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে সন্দেহ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বিসিএস ট্যাক্সেশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার মোতাসিম বিল্লাহ ফারুকী। সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মহিদুল হাসানও আলোচনায় অংশ নেন।
মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আয়কর কমিশনার ইখতিয়ারউদ্দিন মামুন।