ফ্রোজেন শোল্ডার: এক বাস্তব শারীরিক সমস্যা, যা বেশি ভোগায় নারীদের

নর্থ ক্যারোলাইনার ডিউক উইমেন'স হেলথের গাইনি বিশেষজ্ঞ অ্যান ফোর্ডের ব্যস্ত দিন কেটে যায় নারীদের চিকিৎসা করে। ফোর্ড লক্ষ্য করেছেন যে, মেনোপজের কাছাকাছি বা মেনোপজ পার করেছেন এমন রোগীরা একটি অদ্ভুত সমস্যা নিয়ে আসেন। এটি হলো অ্যাডেসিভ ক্যাপসুলাইটিস, বা সহজ কথায় 'ফ্রোজেন শোল্ডার'। এটি একটি অল্প পরিচিত, প্রায়শই অসহ্য এবং অনিরাময়যোগ্য রোগ, যার ফলে কাঁধের জোড়া ফুলে যায় এবং নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়।
ফ্রোজেন শোল্ডারের তিন-চতুর্থাংশ রোগীই নারী।আসলে, এই সমস্যাটি মেনোপজ চলাকালীন বা এর কাছাকাছি নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
"শুধু নারী হওয়াটাই এই রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়," বলছেন কাঁধের সমস্যার বিশেষজ্ঞ অর্থোপেডিক সার্জন ডা. জসেলিন উইটস্টেইন। ২০২৪ সালের এক গবেষণায় উইটস্টেইন ও তার সহকর্মীরা লিখেছেন, মেনোপজকালীন নারীদের ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ বিভিন্ন ধরনের হাড় ও গাঁটে ব্যথায় ভোগেন, যার এক-চতুর্থাংশ মানুষ দৈনন্দিন কাজে অক্ষম হয়ে পড়েন।
"অনেকে জানেনই না, জয়েন্ট পেইন বা হঠাৎ কাঁধে ব্যথা আসা মেনোপজেরই উপসর্গ হতে পারে," বলেন উইটস্টেইন।
তবে এই রোগ নিয়ে গবেষণা খুবই কম হয়েছে। ডা. ফোর্ড ও উইটস্টেইন দুজনেই ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনে শিক্ষকতা করেন । তারা ২০২৩ সালে এমন একটি গবেষণা উপস্থাপন করেন, যেখানে দেখা যায় হরমোন থেরাপি (আগে যাকে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বলা হতো) নারীদের ফ্রোজেন শোল্ডার থেকে কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, মেনোপজ কালীন হরমোন থেরাপি বিষয়টি এখন নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে। এবং যেসব নারী মেনোপজের দিকে এগোচ্ছেন বা মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের জন্য এটি সময়োচিত গবেষণা।
'ফিফটি ইয়ার শোল্ডার'
এই রোগটি বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিজে থেকেই হয়। কোন আঘাত বা বাড়তি কাজের ফলে নয়। কাঁধের জয়েন্ট ঘিরে থাকা টিস্যুতে প্রদাহ তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে জয়েন্টকে নড়াচড়ার অযোগ্য করে তোলে। বিশ্বের ২ থেকে ৫ শতাংশ মানুষ এই রোগে ভোগেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী, বয়স ৪০ থেকে ৬০-এর মধ্যে।
"অনেকে ব্যথা সয়ে কাজ চালিয়ে যান। কিন্তু এতে কাঁধ আরও বেশি ফুলে যায় ও ব্যথায় আক্রান্ত হয়," বলেন ডা. উইটস্টেইন।
চিকিৎসা হিসেবে ওষুধ, ইনজেকশন ও ফিজিওথেরাপি থাকলেও কোনো নির্দিষ্ট ও স্থায়ী চিকিৎসা নেই। অনেক সময় কাঁধ স্বাভাবিক হতে মাসের পর মাস বা বছর লেগে যায়।
ডায়াবেটিস রোগী এবং এশীয় নারীরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। উইটস্টেইন জানান, এশিয়ার কিছু কিছু দেশে এই রোগকে 'ফিফটি ইয়ার শোল্ডার' বলে ডাকা হয়, কারণ মেনোপজের সময় এই বয়সে এসে রোগটি বেশি দেখা যায়।
ইস্ট্রোজেন হ্রাস ও গাঁটে ব্যথা
নারীদের যত বয়স বাড়ে, ডিম্বাশয় থেকে ইস্ট্রোজেন উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে যায়। মেনোপজের সময় এই হরমোন ও প্রোজেস্টেরন তৈরি হওয়া পুরো বন্ধ হয়ে যায়। এই হরমোন পরিবর্তন হাড়, হার্ট এবং জয়েন্টের ওপর প্রভাব ফেলে।
প্রায় ৫০ শতাংশ নারী মেনোপজ চলাকালীন গাঁটে ব্যথা অনুভব করেন।
তবে ইস্ট্রোজেন ও হাড়-জয়েন্টের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা এখনো অপ্রতুল। এ কারণে এই ব্যথার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাও এখনও নেই।
ফোর্ড ও উইটস্টেইন মেনোপজাল হরমোন থেরাপি গ্রহণকারী ও না-গ্রহণকারী নারীদের মধ্যে কাঁধে ব্যাথার উপসর্গ কেমন হয়, তা নিয়ে গবেষণা করেন।
তারা ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১,৯৫২ জন নারীর মেডিকেল রেকর্ড বিশ্লেষণ করেন। এতে দেখা হয় কারা হরমোন থেরাপি নিচ্ছেন, কারা ফ্রোজেন শোল্ডারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এর সঙ্গে মেনোপজের সম্পর্ক কী।
গবেষণাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে এটি ফ্রোজেন শোল্ডার ও মেনোপজ নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করছে। গবেষকরা বলছেন, নারীদের হাড় ও গাঁটের ব্যথাকে আর অবহেলা করা যাবে না।
অনুবাদ: নাফিসা ইসলাম মেঘা