৮ মাস ধরে বেতন পান না কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীরা, মার্চে হওয়ার সম্ভাবনা

"নিয়মিত অফিস করি, কিন্তু বেতন পাইনা—এর থেকে অপমানের আর কী আছে? আপনজনেরাও এখন টাকা ধার দিতে ভয় পান, কারণ আমাদের বেতন হয়না," আক্ষেপ করে কথাগুলো দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলছিলেন মোর্শেদ হোসেন চৌধুরী। তিনি দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কালীর বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)।
মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে দেশজুড়ে কাজ করছেন কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রায় ১৪,০০০ সিএইচসিপি। এই সবার অবস্থাই এখন মোর্শেদের মতো। মাসে মাত্র ১৬,৭০০ টাকা বেতনের এই চাকরিতে যোগ দিয়েও মাসের পর মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না তারা।
আবার অনেক ক্লিনিকে ওষুধের সংকটও দেখা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবা নেওয়ার হারও কমতে শুরু করেছে।
তবে চলতি মার্চের মাঝামাঝি থেকে সিএইচসিপিদের বেতন দেওয়া শুরু হবে জানিয়েছেন কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. এ এম জাকির হোসেন বলেন, "ঈদের আগেই তারা (সিএইচসিপি) চলতি বছরের তিন মাসের বেতন পাবেন।"
তিনি জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের বেতন হয় 'স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাত কর্মসূচি' (এইচএনপিএসপি)-এর অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায়।
৪র্থ এইচএনপিএসপি শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। ৫ম এইচএনপিএসপি চালু না হওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের বেতন হচ্ছেনা, একইসঙ্গে ওষুধও কেনা যাচ্ছেনা। তবে এবার সেক্টর প্রোগ্রাম থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। ২ বছরের জন্য ৫ম এইচএনপিএসপি চলতে পারে বলে জানান তিনি।
এরইমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের বেতন রেভিনিউ খাত থেকে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার।
ডা. এ এম জাকির হোসেন টিবিএসকে আরও বলেন, "কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা এতদিন অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় বেতন পেতেন। অপারেশনাল প্ল্যান পাশ না হওয়ায় এতদিন তারা বেতন পায়নি। তবে এখন থেকে তারা রেভিনিউ থেকে বেতন পাবেন।"
"চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসের জন্য ১৭৭ কোটি টাকা ছাড় করার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করা যাচ্ছে, মার্চের মাঝামাঝি থেকে বেতন পাবে কর্মীরা, সংকট কিছুটা কেটে যাবে," যোগ করেন তিনি।
২০১৮ সালের আগে নিয়োগ পাওয়া ১৩,০০০ এর বেশি সিএইচসিপি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের বেতন এক সাথে পাবেন। এরপর থেকে নিয়মিত বেতন পাবেন তারা।
তবে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসের বেতন অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় আসবে। অপারেশনাল প্ল্যান পাশ হওয়ার পরই কর্মীরা সে বেতন পাবেন। আর এই অপারেশনাল প্ল্যান পাশ হতে আরও দুই মাস লাগতে পারে বলে জানান ডা. এ এম জাকির হোসেন।
২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের জন্য ৩৮৮ কোটি টাকা রেভিনিউ থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার, কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্টের তথ্য মতে, বর্তমানে সারাদেশে মোট ১৪,২০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, গর্ভবতী ও প্রসূতির স্বাস্থ্য সেবা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, পুষ্টি সেবা, ইপিআইসাধারণ রোগ ও জখমের চিকিৎসা সেবা, অসংক্রামক রোগ শনাক্তকরণ ও রেফারেলসহ প্রায় ১৫টি সেবা দেওয়া হয় কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে।
ক্লিনিকগুলোর ওষুধের সংকট কাটতে সময় লাগবে
বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ঠান্ডা-জ্বর ও কৃমির ওষুধ এবং আয়রন, ফলিক অ্যাসিডসহ বিভিন্ন ধরনের ২১টি ওষুধ ও ২ প্রকার পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী বিনা মূল্যে দেওয়া হয়।
প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকে গড়ে বছরে ১.৫০ লাখ টাকার ওষুধ সরবরাহ করা হয়।
এখন পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকের ওষুধের ব্যয় আসে অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায়। সর্বশেষ অক্টোবর মাসে কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। সাধারণত এক দফার সরবরাহে চার থেকে পাঁচ মাস চলে। ফলে এরই মধ্যে কোনো কোনো ক্লিনিকে ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে।
দিনাজপুরের কালীর বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধের যে মজুদ আছে, তা আগামী মাস নাগাদ শেষ হবে। এরমধ্যে ওষুধ না আসলে সংকটে পড়বে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এখন সব ওষুধ না থাকায় রোগীও কম আসছে বলে জানা গেছে।
ওষুধ সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে ডা. এ এম জাকির হোসেন জানান, ওষুধ অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় কেনা হবে।
তিনি বলেন, "৫ম স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচির (৫ম এইচপিএনএসপি) প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান (পিআইপি) এক্সিট প্ল্যানে অন্তর্ভুক্তির জন্য জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৬ মেয়াদে বাস্তবায়নে অপারেশনাল প্ল্যানের অত্যাবশ্যকীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করতে লাইন ডিরেক্টরদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।"
"এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্ল্যানিং কমিশনে গিয়ে অপারেশনাল প্ল্যান পাশ হতে দুই মাস লাগতে পারে, তারপরই ওষুধ কেনা হবে," যোগ করেন তিনি।