প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদারে নতুন ৫১৬ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদারে দেশজুড়ে ৫১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা করছে সরকার। একইসঙ্গে এসব ক্লিনিকের সেবা উন্নয়ন ও মানোন্নয়নে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
গতকাল (২০ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীতে বিএমআরসি কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সেমিনারে কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্স ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান জানান, দেশব্যাপী ৫১৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে এবং সাইট তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। তবে সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ওষুধ সংকট নিরসনের বিষয়ে আখতারুজ্জামান বলেন, সরকার পরিচালিত এসেনশিয়াল ড্রাগস লিমিটেড (ইডিসিএল) ইতোমধ্যে ১২০ কোটি টাকার ওষুধ সরবরাহ করেছে। এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার বাক্স ওষুধ কমিউনিটি ক্লিনিকে পৌঁছেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ওষুধ সংকট পুরোপুরি সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও জানান, অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকার ওষুধ কেনা হবে। অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি) কার্যকর না থাকায় দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কয়েক মাস ধরে ওষুধ সংকট চলছিল।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, দেশের ৭২ শতাংশ মানুষ মনে করেন আলাদা সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের প্রয়োজন আছে, আর সেই চাহিদা পূরণে কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সেমিনারে ফিল্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিচালক ডা. আসিফ মাহমুদ কমিউনিটি ক্লিনিকের মানোন্নয়নে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি জানান, স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থা হালনাগাদ করা হবে, যাতে বেশি চাহিদাসম্পন্ন এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, অনেক ক্লিনিকে অ্যান্টি-অ্যালার্জি ওষুধের চাহিদা বেশি।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে প্রি-এক্লাম্পসিয়া প্রতিরোধে সহজ ডিপস্টিক পরীক্ষা চালু করা জরুরি। একই সঙ্গে রক্তচাপ মাপার যন্ত্র, গ্লুকোমিটার, নেবুলাইজারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে, যাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদার হয়। বর্তমানে এসব ক্লিনিকের ৫ হাজার ৮০টি চিকিৎসা সরঞ্জাম মেরামতের প্রয়োজন রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে—ভূমি-সংক্রান্ত জটিলতা সমাধান; ঝুঁকিপূর্ণ ক্লিনিকগুলোর হালনাগাদ তালিকা প্রণয়ন; জনবল, অবকাঠামো ও লজিস্টিকস বিষয়ে ডেটাবেস তৈরি; নারী কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের সংখ্যা ৫৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮০ শতাংশে উন্নীত করা এবং তাদেরকে ধাত্রীবিদ্যা প্রশিক্ষণ দেওয়া। এছাড়া দেশের দুর্গম হাওর, চর, পার্বত্য ও উপকূলীয় এলাকায় নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
সেমিনারে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১৩ হাজার ৯২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এরমধ্যে ১৩ হাজার ৩৬৩টি কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং প্রায় ১৪ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী সেখানে কর্মরত আছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ লাখ ৯০ হাজার মানুষ এসব ক্লিনিক থেকে সেবা নিচ্ছেন।
প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) সপ্তাহে ছয় দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিকে সেবা দেন। এছাড়া পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) ও স্বাস্থ্য সহকারীরা (এইচএ) সপ্তাহে দুই দিন প্রতিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান করেন।
দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে আসা রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু।
কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রধান সেবা
ক্লিনিকগুলোতে সাধারণ রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা, প্রসূতি-পূর্ব ও প্রসূতি-পরবর্তী সেবা, শিশুদের টিকাদান, রক্তচাপ পরীক্ষা এবং ডায়াবেটিস স্ক্রিনিংসহ নানাবিধ সেবা দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে ১ লাখের বেশি স্বাভাবিক প্রসব সম্পন্ন হয়েছে।
চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি এসব ক্লিনিকে স্বাস্থ্যশিক্ষা, স্যানিটেশন, পুষ্টি এবং জন্মনিবন্ধন বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো হয়। প্রতিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ৪০–৫০ জন রোগী চিকিৎসা নেন। রোগীর তথ্য লিপিবদ্ধ করে মাসিক প্রতিবেদন অনলাইনে পাঠানো হয়।
এছাড়া, দুর্ঘটনা বা হঠাৎ অসুস্থতার মতো জরুরি পরিস্থিতিতেও তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং গুরুতর রোগীদের আরও উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়।