অনেক ‘প্রথমের’ জন্ম দিয়ে নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জিতলেন জোহরান মামদানি
৩৪ বছর বয়সি রাজ্য আইনপ্রণেতা জোহরান মামদানি মঙ্গলবার নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এই জয়ের মধ্য দিয়ে তার অভাবনীয় রাজনৈতিক উত্থানের পূর্ণতা ঘটল। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি বিগত কয়েক প্রজন্মের মধ্যে শহরটির সবচেয়ে উদারপন্থি মেয়র হতে চলেছেন।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে অনেকগুলো 'প্রথমের' জন্ম দিয়ে ইতিহাসে নাম লেখাতে যাচ্ছেন এ ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট নেতা। তিনি হতে যাচ্ছেন নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মেয়র।
শুধু তা-ই নয়, আগামী ১ জানুয়ারি যখন দায়িত্ব গ্রহণ, তখন মামদানি হবেন এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে শহরটির সর্বকনিষ্ঠ মেয়র।
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রগতিশীল অংশের জন্য এই জয় এক বড় সাফল্য। মামদানি এই নির্বাচনে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করেছেন। তাকে এখন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম শহরের অফুরন্ত চাহিদা সামলানোর পাশাপাশি প্রচারণায় দেওয়া তার উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতিগুলোও পূরণ করতে হবে।
মামদানি পেয়েছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৬৪৬ (৫০.৪ শতাংশ ভোট)। তার নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়া যথাক্রমে পেয়েছেন ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮৩ (৪১.৬ শতাংশ) ও ১ লাখ ৪৬ হাজার ১২৭ (৭.১ শতাংশ) ভোট।
মামদানির এই অভাবনীয় উত্থান ডেমোক্রেটিক পার্টির সেইসব নেতাদের বক্তব্যকে জোরালো করেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন যে মধ্যপন্থি প্রার্থীদের পেছনে না ছুটে দলের উচিত আরও প্রগতিশীল, বামপন্থি প্রার্থীদের সমর্থন করা। তাদের মতে, এভাবেই দলত্যাগকারী 'সুইং ভোটার'দের সমর্থন ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
শহরের বোর্ড অভ ইলেকশনস জানিয়েছে, এই নির্বাচনে ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে। প্রায় ২০ লাখেরও বেশি নিউইয়র্কবাসী ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
মামদানি তার তৃণমূল পর্যায়ের প্রচারণায় মূলত জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে রাখার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব কুমোর রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের প্রচেষ্টাকে ঠেকিয়ে করে দেয়। চার বছর আগে যৌন হয়রানির অভিযোগে পদত্যাগ করা এই সাবেক গভর্নর (যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন) পুরো নির্বাচনি প্রচারণাতেই তার অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচিত হচ্ছিলেন। এছাড়া নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর জন্যও তিনি নিন্দিত হন।
তবে মামদানির জন্য একটি বড় প্রশ্ন হলো, ট্রাম্পকে তিনি কীভাবে সামলাবেন। ট্রাম্প ইতিমধ্যে হুমকি দিয়ে রেখেছেন, মামদানি জিতলে তিনি শহরের নিয়ন্ত্রণ নেবেন এবং মামদানিকে গ্রেপ্তার ও দেশ থেকে বিতাড়িত করবেন।
উল্লেখ্য, মামদানির জন্ম উগান্ডায়। সেখানেই তার শৈশবের প্রথম কয়েক বছর কাটে। তবে তিনি নিউইয়র্ক সিটিতেই বেড়ে ওঠেন এবং ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন।
এছাড়া ট্রাম্প নির্বাচনের আগের দিন কুমোকে সমর্থন জানিয়ে হুমকি দেন, মামদানি জিতলে তিনি নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেবেন।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেন: 'আপনি ব্যক্তিগতভাবে অ্যান্ড্রু কুমোকে পছন্দ করুন বা না করুন, আপনার কাছে আসলে আর কোনো বিকল্প নেই। অবশ্যই তাকে ভোট দিতে হবে এবং আশা করতে হবে যে তিনি দুর্দান্ত কাজ করবেন। তিনি এই কাজের যোগ্য, মামদানি নয়!'
