৫ মাস ধরে কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ নেই, ভোগান্তিতে প্রান্তিক মানুষ

লক্ষ্মীপুরের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ওষুধ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। রোগীদের উপস্থিতি থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাবে সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে, ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
মেঘনা নদীর তীরবর্তী লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর কালকিনি এলাকার জেলে-বধূ জান্নাত বেগম (৩৫) পেটের পীড়ায় ভুগছিলেন। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে স্থানীয় হযরত আলী কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য গেলেও কাঙ্ক্ষিত ওষুধ পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার তাকে জানান, তার জন্য প্রয়োজনীয় মেট্রোনিডাজল গ্রুপের ওষুধটি পাঁচ মাস ধরে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ওষুধ কেনার সামর্থ্য না থাকায় জান্নাত বেগমকে খালি হাতে ফিরতে হয়।
একই পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন চর কালকিনি এলাকার রাবেয়া, রাহেলা ও শিশু সামিউল। তারা জানান, শহরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য নেই বলে একমাত্র ভরসা বাড়ির পাশের কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না।
সদর উপজেলার চর মনসা গ্রামের নাছিমা, উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রামের মুন্নী ও ফাতেমাও একই অভিযোগ করেন।
উত্তর চর লরেঞ্চ কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মো. এরশাদ জানান, সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ক্লিনিকের জন্য ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছিল। এরপর ছয় মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, 'একদিকে আমরা আট মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না, অন্যদিকে ওষুধও নেই। রোগীরা এসে গালমন্দ করেন, বিষয়টি খারাপ লাগে।'
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার কামরুল আহসান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর সময় ৩২ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হলেও পরে তা কমে আসে। 'সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে ২২ প্রকার ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছিল, কিন্তু গত পাঁচ মাস ধরে নতুন করে কোনো ওষুধ আসেনি।'
আরেক হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার জান্নাতুন নাঈম ইকন জানান, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মেট্রোনিডাজল, অ্যামোক্সিসিলিন ও পেনিসিলিনসহ বেশ কয়েকটি ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে, যেগুলো প্রান্তিক মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অত্যাবশ্যক।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) কাজী মো. মমিন বলেন, 'অফিসিয়াল সমস্যার কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে গত কয়েক মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।'
তবে সমস্যার সমাধান কবে হবে, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তিনি।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ১৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।
প্রায় দুই দশক আগে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এসব ক্লিনিক চালু করা হলেও নানা সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে সেগুলো।