স্ত্রী গর্ভবতী ও কিডনি জটিলতা জানিয়ে শুনানিতে তৌহিদ আফ্রিদির জামিন চান আইনজীবী

মামলায় গর্ভবতী স্ত্রী ও কিডনি জটিলতার কথা জানিয়ে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির জামিন চেয়েছিলেন তার আইনজীবী। আজ সোমবার সোমবার (২৫ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালতে রিমান্ড শুনানি চলাকালে তিনি জামিন চান।
তৌহিদ আফ্রিদি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আসাদুল হক বাবু হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আজ তৌহিদ আফ্রিদির রিমান্ড শুনানি হয়। একই মামলায় তার বাবাও বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
এদিন বেলা আড়াইটার দিকে তৌহিদ আফ্রিদিকে আদালতে আনা হয়। এরপর তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। এ সময় এজলাসে হট্টগোল শুরু হয়। হট্টগোলের মধ্যেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, তৌহিদ আফ্রিদি ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশ-বিদেশে আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তিনি মাই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে পতিত সরকারের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ও আজ্ঞাবহ হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি সেলিব্রেটি ও অন্যান্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দিয়ে আন্দোলন বন্ধের জন্য প্ররোচিত করেন এবং যারা দ্বিমত পোষণ করেছিলেন, তাদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান।
আরও পড়ুন: কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
আরও বলা হয়, একইসঙ্গে তৌহিদ আফ্রিদি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলেনের বিপক্ষে লাইভ প্রচার করে উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে আন্দোলনের বিরোধীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ যোগান। তার এই কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচারে গুলি চালান। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আসাদুল মারা যান বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
এরপর তৌহিদ আফ্রিদির রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন তার আইনজীবী খায়রুল ইসলাম। তিনি শুনানিতে বলেন, মামলার ঘটনার সঙ্গে আসামির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ভিক্টিম (আসাদুল) নিহত হয়েছেন। এখানে আসামির কোনো ভূমিকা নেই। গত বছরের ১১ নভেম্বর এ মামলার বাদী হলফনামা দিয়ে বলেছেন তথ্যগত ভুলের কারণে তৌহিদ আফ্রিদির নাম যোগ হয়েছে। তাকে এই মামলায় খালাস দিলে বাদীর কোনো বাধা নেই।
তিনি আরও বলেন, তৌহিদ আফ্রিদি কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। তার চিকিৎসাও চলছে। অতিরিক্ত হাঁটাচলায় তার প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসে। এছাড়া তার স্ত্রী গর্ভবতী। মানবিক দিক বিবেচনায় তার জামিন মঞ্জুর করা হোক।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে বাদীর আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল, ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন ও ঢাকা বারের সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান মুকুল রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানিতে তারা বলেন, এই আসামি (তৌহিদ আফ্রিদি) লাইভে এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের ওপর নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালাতে উৎসাহিত করেন। তাকে রিমান্ডে নিলে জানা যাবে কারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত, কার কী নির্দেশনা ছিল, কারা অর্থদাতা ও অস্ত্রদাতা। এই আসামি ডিবি হারুনের সঙ্গে একাধিক লাইভ করেছেন।
পরে আবারও আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন তৌহিদ আফ্রিদি। আন্দোলনের সময় ছাত্রদের পক্ষে তার একাধিক পোস্ট আছে। এ সময় এজলাসে ফের হট্টগোল শুরু হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তৌহিদ আফ্রিদির বাবা নাসির উদ্দিন সাথীর ছবি দেখিয়ে বলেন, আসামির আলাদা রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তার বাবা ব্যবসায়ী। কোনো রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি নেই।
পরে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তৌহিদ আফ্রিদির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার রাতে বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি পুলিশ।