Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
September 13, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, SEPTEMBER 13, 2025
গাবতলী পশুর হাট: ১০৬ বছরে লাল মিয়া নায়েবের হাট

ফিচার

সালেহ শফিক
27 June, 2023, 03:40 pm
Last modified: 27 June, 2023, 03:53 pm

Related News

  • ট্যানারিতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর চামড়া
  • কাঁচা চামড়ার দাম এ বছর কিছুটা বেড়েছে, তবে প্রান্তিক পর্যায়ে এখনও ‘ন্যায্যমূল্যের নিচে’
  • বরিশালের কামারপট্টিতে কোরবানির সরঞ্জামের ব্যস্ততা, জমে উঠেছে দা-বটি বিক্রি
  • ঈদের আগে ক্রেতা সঙ্কট ও দাম কম, শঙ্কায় ঢাকার গরু বিক্রেতারা
  • ঈদ উপলক্ষ্যে ঢাকায় ১৭ অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা: কার ঝুলিতে সবচেয়ে বেশি?

গাবতলী পশুর হাট: ১০৬ বছরে লাল মিয়া নায়েবের হাট

১৯১৭ সালে মিরপুর ছিল পল্লীগ্রাম। শহর থেকে ছিল অনেক দূরে। ছোট ছোট গ্রাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। তখন লোকে পায়ে হেঁটে, গরুর গাড়ি চড়ে বা নৌকায় করে হাটে আসত নবাবগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, গাজীপুর বা নরসিংদী থেকে। কেউ কি তখন ভাবতে পেরেছিল গাবতলী হাটের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে? লাল মিয়া নেই, গাবগাছও খুঁজে পাওয়া সহজ হয় না কিন্তু হাটটি রয়ে গেছে। ঢাকায় এবারও বসছে ১৯টি হাট কিন্তু এতসবের মধ্যে গাবতলী যে বিশেষ তা আর না বললেও চলে। 
সালেহ শফিক
27 June, 2023, 03:40 pm
Last modified: 27 June, 2023, 03:53 pm
ছবি- রাজীব ধর/ টিবিএস

কোরবানীর ঈদ আসার পনের-কুড়ি দিন আগে থেকেই সাজতে থাকে গাবতলীতে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় স্থায়ী পশুর হাট। বাঁশ বাঁধা হয় নির্মাণ সামগ্রী রাখার খোলা ময়দানের এমাথা থেকে ওমাথা, চা-পানের দোকানগুলো বেশি করে পণ্য তোলে, গরুর বেপারিরা কোন হাটে কত দর তার খোঁজ নিয়ে আসে, মহাজন কোরবানীর গরু কিনতে লোক পাঠান আরিচা হাট অথবা জামালপুরের সরিষাবাড়ি। ১৭ জুন দুপুরে গিয়ে দেখলাম তুমুল ব্যস্ততা হাটের উত্তর ধারের কামারের দোকানগুলোতে। কামাররা দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না, নাওয়া খাওয়া তো শিকেয় উঠেছে। গরম খুব, কিন্তু ঈদের মৌসুম যে এটা, তাই একটু সময়ও জিরিয়ে নিতে চাইছেন না। 

১৭-১৮ বছর বয়সী শাহজাহান এসেছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে। দুটি চাপাতি আর চারটি চাকু দরকার তার ওস্তাদের। এক কেজি ৫০ গ্রাম ওজনের একটি চাপাতির দাম ৮০০ টাকা আর ছয় ইঞ্চি মাপের চাকুর দাম দুই থেকে আড়াইশ টাকা। সবমিলিয়ে ২৩০০ টাকা দাম ধরলেন হরিহর কর্মকার। শাহজাহান দোটানায় পড়ে গেল। এতো দাম! হরিহর বললেন, "কয়লার দাম বাড়ছে দেড় গুণ আর লোহাতেও কোনো ভেজাল নাই। দাম কমাইয়াই ধরছি। আর কমাইতে পারুম না।" শাহজাহান ঠান্ডা ছেলে, নরম গলায় বলল, "সব মিলায়ে দুই হাজার টাকা ধরেন।" কিন্তু হরিহর তার কথায় কান দিলেন না। 

শেষে শাহজাহান নিজের ওস্তাদকে ফোন দিয়ে সবটা বলে অনুমতি নিয়ে নিল। শাহজাহানের সম্মতি পেয়ে হরিহর ইলেকট্রিক করাত দিয়ে চাপাতিগুলোয় টেম্পার (ধারালো ও চকচকে করা) দিতে থাকল। সে এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "আমাদের ওইদিকে তো কামারের দোকান কম নাই কিন্তু সেরা চাপাতি এখানেই পাওয়া যায়। তাই আসা-যাওয়ার কষ্ট যতই হোক এখান থেকেই চাপাতি, চাকু নেই।' হরিহর কামারের দোকানে হাত কুড়াল, লোহার কাঠি, বটিও পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে ৯-১০টি কামারের দোকান আছে গাবতলীতে।"

নাবালক দোকানী কালাপাহাড় দেখেছে

গরুর স্থায়ী শেড/ ছবি- সালেহ শফিক

রোদের তাপে অল্প হেঁটেই হাঁপিয়ে উঠছি। বাঁশ বাঁধার জায়গাতে পৌঁছাতে প্রয়োজনের তুলনায় সময় লাগল বেশি। খানিক জিরিয়ে নিয়ে এক শ্রমিককে জিজ্ঞেস করলাম, কত দিন ধরে এই কাজ করছেন? জবাব দিলেন, ৫-৬ দিন ধরে। কতজন শ্রমিক কাজে লেগেছে? "দুই আড়াইশ জন হবে।" কতগুলো বাঁশ লাগল? "১০ হাজারের কম হবে না।" বাঁশের মাচানের ওপর মোটা প্লাস্টিকের শামিয়ানা টানা হবে। হাটে ঢোকার মুখে একটা বড় গেট হচ্ছে যার দুপাশে দুটি মিনার ও মাঝখানে একটি গম্বুজ থাকছে। হাটের এই অংশটা অস্থায়ী। ঈদের পর সরিয়ে ফেলা হবে, তবে পশ্চিম দিকের হাটটি স্থায়ী, সারাবছর সেখানে বেঁচাকেনা চলে। 

এবার হাঁটতে হাঁটতে  গেলাম হাসিল ঘরের কাছে। হাসিল ঘরের ছাদের কাছে ইজারাদারের নাম লেখা, লুৎফর রহমান। আগেই জানা হয়েছিল তিনি চিত্রনায়ক ডিপজলের ভাইয়ের শ্যালক। হাসিল ঘরের উল্টেদিকে কয়েকটি চায়ের দোকান, দুটি গরুসজ্জার (গলার মালা, মাথার তাজ, ঘণ্টা বাঁধা রঙিন দড়ি) দোকান আছে। একটি চায়ের দোকানে বসে গলাটা ভিজিয়ে নিতে চাইলাম, নইলে আর চলছে না। 

দোকানদারের বয়স মোটে আট। তার মা বোরকা পরে দোকানের এক ধারে বসে আছেন। দুজনেই কথা বলতে ভালোবাসেন। দোকানটা আসলে চালান ছেলেটার বাবা। কিন্তু এখন তিনি বাসায় ঘুমাচ্ছেন বলে ছেলে আর মাকে দোকান সামলাতে হচ্ছে। মা কথা শুরু করলেন প্রথমে, "এই হাট ঘুমায় না। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। ঝাড়ুদার, সাফাইওয়ালা, হাসিলঘরের লোকজন, ইলেকট্রিশিয়ান, কাঠমিস্ত্রী, মেকানিক-সব পদের লোক আছে এখানে। এই যে ঈদ আসতেছে, কম করেও ৪০০ লোক খাটবে। এখানে গরুর সঙ্গে বেপারিরাও রাত জাগে, বেপারির লোকেরাও ঘুমায় না। তাদের জন্য আমরাও দোকান খোলা রাখি। রাতে বেচাকিনা দিনের সমানই বলতে পারেন।" 

দোকানীর বাড়ি ফরিদপুর। সেখানে তারা দুই তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি তুলছে। ছেলের (যে এখন দোকানদারি করছে) মুসলমানিতে ৪ মণ ওজনের গরু কোরবানী দিয়েছে, সব মিলিয়ে ৬ লাখ টাকা খরচ। ছেলেটা কয়েকবারই কিছু বলার জন্য মুখ খুলেও আবার বন্ধ রাখছিল মায়ের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে। শেষে একটু সুযোগ পেয়েই বলল, "আমারে এই হাটের চাইর ভাগের তিন ভাগ লোকই চেনে। আদর করে, ঠান্ডা (কোক, পেপসি বা ফান্টা) খাওয়ায়। গতবার হাটে তিনটা বড় গরু উঠছিল। একটার নাম আছিল 'রাজা-বাদশা'। শুনছি কোনো এক লবণ কোম্পানি ত্রিশ লাখ টাকা দিয়ে কিন্যা নিছিল, আরেকটা উঠছিল, নাম 'কালাপাহাড়'।" গরুর হাট তোমার কেমন লাগে? উত্তর দিলেন মা, "বলতে পারেন, এই হাটেই সে বড় হইছে। স্কুল শেষ কইরা হাটে আইসা ঘুইরা বেড়ায়। দুপুরের পর অরে আর ঘরে রাখন যায় না। খায়ও না ঠিকমতো।" 

পশুর হাটে শামিয়ানা বাঁধার জন্য তৈরি হচ্ছে বাঁশের কাঠামো/ ছবি- সালেহ শফিক

গরু বাঁধার দড়িও বিক্রি করে নাবালক দোকানী। ৮ আর ১২ হাত দৈর্ঘ্যের হয় এসব দড়ি। উপকরণ-পাট ও প্লাস্টিক। পাটের দড়ি ৬০ টাকা। প্লাস্টিকের দড়ির নানান দাম, ৮০ থেকে ১৫০ টাকা।    
 
অস্থায়ী আর ভ্রাম্যমাণ দোকান

হাটে আরো আছে কিছু অস্থায়ী ভাতের হোটেল। মূলত বেপারীরাই সেখানকার কাস্টমার। সেসঙ্গে আছে কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকান। যেমন ঠান্ডা লেবুর শরবতের দোকান, বকুল ভাইয়ের কুলফি আইসক্রিমের দোকান। তবে বেশি বিক্রি হচ্ছে আনারস। ছোট ছোট আনারসগুলো লবণ মাখিয়ে খাচ্ছেন অনেকেই। একেকটির দাম ১৫-২০ টাকা। 

সবুজ মিয়ার আমের দোকানে অবশ্য ভিড় নেই বেশি। বাড়ি তার কুড়িগ্রাম। মুখটা রোদে পুড়ে কালচে হয়ে গেছে। বছরের ছয় মাস গাবতলী হাটে থাকেন আর বাকি ছয় মাস গ্রামে গিয়ে চাষাবাদ করেন। যে শেডের কাছে তার দোকান সেখানে মহিষ আছে চারটি, আর আছে বেশ কয়েকটি ধবধবে সাদা গরু। বেশ উঁচু আর দীর্ঘ গরুগুলো দেখতে খুব সুন্দর। মহিষগুলোও ভারী ওজনদার। এখন পর্যন্ত যতগুলো শেড দেখেছি তার মধ্যে এখানকার পশুগুলোই বেশি আকর্ষণীয়। একটি ষাড় দেখিয়ে একজন ইউটিউবারকে সবুজ মিয়া বললেন, "এক টন গোশত পাওয়া যাবে এই মহিষ থেকে।" ইউটিউবার ১ টনে কত মণ হয় তা যখন ভেবে পাচ্ছেন না তখন সবুজ মিয়াই বললেন, "সাড়ে ২৭ মণে এক টন।" হাটে ইউটিউবারের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে, হাট জমলে আরো বাড়বে। তাদের নিজেদের চ্যানেল আছে, মোটাতাজা গরু দেখিয়ে আনন্দ দেন দর্শকদের।

তবে সবুজ মিয়ার মোটাতাজা গরুর প্রতি তেমন আকর্ষণ দেখা গেল না। তিনি বললেন, "আপনে খাইছেন কি না জানি না, বাসমতি একটা চাউল ছিল। পাঁচ বাড়িতে গন্ধ ছড়ায়ে পড়ত। এখনকার চাউলে যেমন স্বাদ নাই, গরুর গোশতেও আগের স্বাদ পাইবেন না। গরুরে আগে আমরা খইল খাওয়াইছি, ভাতের ফ্যান দিছি, মাঠে ছাইড়া দিয়া ঘাস খাওয়াইছি। পুকুর থেকা কচুরিপানা আইনা দিছি। এখন গরুরে গাজর, বিলাতি লাউ খাওয়ায়। বিলাতি লাউয়ের জুস তো নেশা পানি। তারপর আছে মোটাতাজাকরণ ওষুধ। গাও গতরে এখনকার পশুগুলো মোটা তাজা সত্য কিন্তু স্বাদ বলতে কিচ্ছু নাই।"

শুধু খড় বিক্রির দোকান আছে এই হাটে চারটি। এগুলো আছে হাটের একেবারে পশ্চিমদিকে,  তুরাগ নদের পার ঘেষে। মানিকগঞ্জের ইলিয়াস মিয়ারও একটি দোকান আছে। বাবা-চাচারা কৃষিকাজ করেন। গ্রামে তাদের বেশ জমি-জমা আছে। বছরের নির্দিষ্ট সময় নিজেও আবাদ করেন। খড়ের গাদা আছে বাড়িতে। 

তিনি বলছিলেন, "দুই ধরনের খড় আমরা বিক্রি করি- চিকন আর মোটা। চিকন খড়গুলো একটু ধারালো হয়, কুচি কুচি করে কেটে চিটাগুড়ের সঙ্গে খাওয়াতে হয়। আর মোটা খড় নরম হয়, গরুর খেতে অসুবিধা হয় না। এগুলো গুটি স্বর্ণা ধানের খড়। ৭ টাকা দরে এক আটি আমরা কিনি। বিক্রি করি ৯-১০ টাকা দরে। এই ঈদে ১ কোটি আটি বিক্রির টার্গেট আমাদের। সারা ঢাকাতেই খড় সাপ্লাই হয় গাবতলী হাট থেকে।" 

গাবতলী পশুর হাটে সারাবছরই বেচাকেনা চলে এবং দিনে-রাতে কখনোই হাট বন্ধ থাকে না। সাধারণ দিনগুলোতে তিন বা সাড়ে তিন হাজার পশু বিক্রি হয় আর ঈদের মৌসুমে লক্ষাধিক। এসব পশুগুলোর মধ্যে গরু ছাড়াও আছে মহিষ, ভেড়া, ছাগল, দুম্বা ইত্যাদি। প্রতি হাজারে ক্রেতাকে হাসিল দিতে হয় ৩৫ টাকা। গাবতলী হাটে স্থায়ী শেড আছে শয়ের বেশি। একেকটা শেড যেন একেকটা গরুর আড়ৎ। এগুলো লম্বায় চল্লিশ ফুট আর প্রস্থে হবে ১২-১৫ ফুট। প্রায় সব শেডেই বড় বড় সিমেন্টের তৈরি চাড়ি (বড় গামলা) দেখলাম। এতে করে গমের ভুষি বা চালের কুড়া পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে দেওয়া হয় গরুকে। শেডগুলোর জন্য বেপারীদের আলাদা ভাড়া গুনতে হয় না। এগুলো তারা পেয়েছেন আত্মীয়তাসূত্রে বা বন্ধুতাসূত্রে। এখানে ব্যবসা করে অনেকে যেমন কোটিপতি হয়েছেন, অনেককে আবার ঘর-বাড়ি বিক্রি করে দায় মেটাতে হয়েছে।

স্তুপ করে রাখা খড়/ ছবি- সালেহ শফিক

হাটের একেবারে দক্ষিণ দিকে টুকরির দোকান আছে শহীদ মোল্লার। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি হয় টুকরি যা দিয়ে মালামাল (ঘাস) বহন করা হয়। বড় টুকরির দাম ১৫০ টাকা, ছোট টুকরির দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা। শহীদ মোল্লা গরুর বেপারীও বটে। তিনি বলছিলেন, "সাভার, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গী, ডেমরাসহ নানা জায়গার কসাইদের গরু সাপ্লাই দেই। এখানে খাতাপত্র কিছু নেই। মুখে মুখে সব লেনদেন। বড়জোড় সিগারেটের প্যাকেটে লিখে রাখি। কত কসাই যে দাম শোধ না কইরা পলাইছে তার হিসাব নাই। কেউ কেউ মারাও গেছে। সব টাকা উসুল করা গেলে এতোদিনে ঢাকায় বাড়ি করে ফেলতাম।"
 
১০৬ বছর বয়সী হাট

বারবারই মনে হচ্ছিল, সারা দেশে মশহুর এই পশুর হাটের একটা ইতিহাস থাকবে। জমিদার মুন্সি লাল মিয়া নামের একজনের কথা জানলাম যিনি হাটের জন্য জমি দান করেছিলেন। প্রথম দফার খোঁজ শুরু করেছিলাম ১৫ জুন। মিরপুর এক নম্বর থেকে হাঁটতে হাঁটতে মাজার রোড গেলাম। লাল মিয়ার কথা দেখলাম অনেকেই জানেন, বিশেষ করে যারা বয়স্ক। একজন আমাকে বললেন, "সোজা যেতে থাকুন। এই পথের মাথায় পাবেন একটা কবরস্থান, তার পাশেই মসজিদ। লাল মিয়ার দান করা জায়গাতেই এগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।"

যেতে যেতে লালকুঠি মসজিদের সামনে এক বয়স্ক লোককে পেলাম। তিনি ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। জানতে চাইলাম, আপনি কত বছর ধরে ঢাকায় আছেন?

উত্তর দিলেন, "আমরা এখানকার স্থানীয়।" মুন্সি লাল মিয়া জমিদারের কথা শুনেছেন? "হ্যা শুনেছি। তিনি আসলে ছিলেন জমিদারের নায়েব। পরে জমিদারের কাছ থেকেই বিস্তর জমি কিনে নিয়েছিলেন। ১৯৩১ সালে মাজার রোডে ৩১.৯০ একর জমি তিনি ওয়াকফ করে দিয়ে যান। এর ফলে সম্পত্তির আয় উত্তরাধিকাররা ভোগ করতে পারবেন ঠিকই কিন্তু বিক্রি করতে পারবেন না।"

"এখন বাবলা সাহেব (জাহাঙ্গীর আলম বাবলা) এস্টেটের মোতাওয়াল্লি। লাল মিয়া জমিদারই শুরু করেছিলেন গাবতলী গরুর হাট। এখন যেখানে ওয়াকফ এস্টেটের অফিস তার কাছেই হাট বসত, কম করেও একশ বছর আগের কথা," বলেন তিনি।

মাজার রোডকেই বলা হয় পুরাতন গাবতলী। লাল মিয়া জমিদারের কাচারি ছিল আরো পশ্চিমে বাগবাড়িতে। জানতে পারলাম, ১৯১৭ সালে তিনি প্রথম পশুর হাট বসিয়েছিলেন। সেটা এমন এক সময় যখন কোরবানীর ঈদকে বলা হতো বকরী ঈদ। ওই নামকরণের ঐতিহাসিক কারণ আছে, তখন পূর্ববঙ্গের অনেক জমিদার ছিলেন হিন্দু। তাদের জমিদারিতে গোহত্যা নিষিদ্ধ ছিল। সেকারণে বকরি কোরবানী দেওয়ার চল চালু হয়েছিল। বকরী ঈদ নামও হয়েছে সে থেকেই। গত শতকের গোড়ায় ঈদুল ফিতর আর কোরবানীর ঈদে ছুটি ছিল একদিন।

শোনা যায়, লাল মিয়ার একটি বাগান ছিল বড়সড়। তাতে গাবগাছের সংখ্যা বেশি ছিল বলে জায়গার নাম গাবতলী হয়। তিনি বিদ্যানুরাগী আর দাতা ছিলেন। একটি দাতব্য চিকিৎসালয়, তিনটি মসজিদ, সাধারণের জন্য একটি কবরস্থান এবং একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত হাট থেকে যা খাজনা পাওয়া যেত তা খরচ করা হতো দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায়। শুরুর দিকে প্রতি পশু বাবদ চার আনা খাজনা আদায় করা হতো। হাট বসত সপ্তাহে একদিন। পথ চলতে চলতে একসময় কবরস্থানটি দেখতে পেলাম যার নাম জান্নাতুল মাওয়া। দাতার নাম লেখা আছে মুন্সী লাল মিয়া। আরেকটু এগিয়েই লাল মিয়ার মাজার দেখলাম। এখানে তার ওফাত বা মৃত্যুর সন লেখা আছে ১৯৪১ সাল। লাল মিয়ার প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসালয়টির নাম দুধ মেহের দাতব্য চিকিৎসালয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দেওয়া হয়, সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত।

হাটটি জমজমাট হওয়ার পেছনে তুরাগ নদের যথেষ্ট অবদান আছে। এখানে নৌকা ঘাট ছিল, তাই দূরদূরান্ত থেকে নৌ পথে হাটে আসার সুযোগ ছিল ক্রেতাদের। পরে ১৯৫৪ সালে যখন ঢাকা-মানিকগঞ্জ সড়ক তৈরি হয় তখন মাজার রোডে বাস স্টেশনও চালু হয়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে গাবতলী হাট থেকে সরকার রাজস্ব আদায় শুরু করে। ১৯৮২ সালে হাটটি সাভারের ফুলবাড়িতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। তখন লালে ফকিরের (ডিপজল সাহেবের নানা) নেতৃত্বে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আবার একে গাবতলীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।  

হাটের তিন বেপারী

শেডের নিচে একটি লম্বা টুলের ওপর বসেছিলেন ওয়াসেক মিয়া (ছদ্মনাম)। ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি পশু ব্যবসা করেন। মোটে তিনটি গরু ছিল তার শেডে, সবগুলোই হালকা পাতলা। তিনটির মিলিত দাম ১ লাখ ত্রিশ হাজার বললেন। তার কাছে জানা গেল, ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার একটি গরুর পরিবহন খরচ মোটামুটি ১৫০০ টাকা। তবে জায়গার দূরত্ব বুঝে হেরফের হয়। সাধারণ সময়ে গরু প্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভ করতে পারেন। তার দুই ছেলে। বড় ছেলের বিয়ে দিতে গিয়ে ভাবলেন, আগে ঘর তোলা দরকার কিন্তু ঘর তোলার টাকা তার নেই। শেষে কিছু জমি বিক্রি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। পড়শিরা তখন বলেছিল, তাহলে কী ব্যবসা করলা এতদিন ধরে?

ওয়াসেক মিয়া বললেন, "যার জ্বালা সে বোঝে। ব্যবসা করলেই যদি লাখ লাখ টাকার মালিক হওয়া যেত তাহলে তো আর কথাই ছিল না। গত কোরবানীর ঈদে গরু তুলেছিলেন ঈদের পাঁচ দিন আগে। দুই দিন যেতে না যেতে কয়েকটি গরু নেতিয়ে পড়ল। গাহেক (কাস্টমার) দ্যাখে কিন্তু কিছু না বলেই চলে যায়। ঈদের আগের দিন আমিও পড়লাম জ্বরে কিন্তু জায়গা ছেড়ে তো নড়তে পারি না। ছেলেরা এসে হোটেলে নিয়ে তুলতে চাইল। কিন্তু আমি গেলে বিক্রির আশা সব নষ্ট হবে কারণ ছেলেরা গরুর দড়িও বাঁধতে পারে না ঠিকমতো। শেষে ঈদের পরে কসাইদের সেধে সেধে বাকিতে গরু দিয়ে আসছি।"

ওয়াসেক মিয়ার দুই শেড পরে মধ্যবয়সী এক বেপারিকে পেলাম। তার গরুর সংখ্যা ১০-১২টি হবে। বললেন, "গরু সাধারণভাবে দুই ধরনের হয়। একটা ক্রস অন্যটা বাংলা। ক্রস গরু আগে কোরবানী দেওয়ার জন্য কেউ নিত না। ইদানিং নিচ্ছে কারণ গোশত বেশি হয়। দেড় লাখ টাকার দুই রকম গরুতে মাংসের হেরফের হয়ে যায় প্রায় ১ মণ। তবে কোরবানীর জন্য এখনো বেশি লোক বাংলা গরু পছন্দ করে।"

অধিকাংশ শেডেই চালার কিছু নিচে কাঠের তৈরি একটি মাচান থাকে। তাতে গরুর খাবারের বস্তা (শুটকি মাছ, লবণ, ঝিনুকের গুড়া, খেসারি ভাংগা ইত্যাদি) স্তুপ করা থাকে। আবার লম্বা টানা দড়ির ওপর লুঙ্গি, গামছা, জামাও দেখলাম। বুঝে নিতে কষ্ট হলো না বেপারি আর তার কর্মীদের পোশাক এগুলো। বেপারীদের অনেকে হোটেলে খায়, কর্মীরা মাস চুক্তিতে বাটির খাবার খায়। তুরাগ নদীতে তারা গোসল করে।

তৃতীয় যে বেপারীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম তার বয়স ৭০ এর কাছাকাছি। তবে শক্তপোক্ত মানুষ। চল্লিশ বছর হতে চলল তিনি গরু ব্যবসায় জড়িত। আগের দিনগুলোতেই ব্যবসা ভালো হতো বলে জানালেন তিনি। কারণ কী? জানতে চাইলে বললেন, "এখন সবকিছুর দাম বাড়তি। কোনো কিছুতে হাত দিলেই মনে হয় ছ্যাকা (গরম) লাগে। গরুর সব খাবারের দাম বেশি। খাবারের দাম বেশি হলে গরুর দাম কম হয় ক্যামনে? নিজের তো একটা বিবেক আছে। দেড় মণের একটা গরুর দাম ৬০-৬৫ হাজার টাকা চাওয়া যায়? অথচ না চাইয়া উপায় নাই। গাড়ি ভাড়া আছে, যারা দেখভাল করে তাদের মজুরি দিতে হয়, তাই ব্যবসা করে শান্তি পাই না। যে গরু ২০-২২ হাজার টাকায় বেচছি সেই গরু ৭০-৮০ হাজার টাকায় বেচতে হয় এখন। দিন বদলায়, তাই বলে এতো বদলায়?"

কোন এলাকায় গরু বেশি পাওয়া যায় এখন? উত্তর পেলাম, "কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোরে বেশি গরু পাওয়া যায়। এর মধ্যে কুষ্টিয়ায় বেশি। সেখানে প্রতি বাড়িতেই দু তিনটে করে গরু পালে। আমরা নগদ টাকাতেই গরু কিনে আনি।"

ভাবতে অবাকই লাগছে, ১৯১৭ সালে মিরপুর ছিল পল্লীগ্রাম। শহর থেকে ছিল অনেক দূরে। ছোট ছোট গ্রাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। তখন লোকে পায়ে হেঁটে, গরুর গাড়ি চড়ে বা নৌকায় করে হাটে আসত নবাবগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, গাজীপুর বা নরসিংদী থেকে। কেউ কি তখন ভাবতে পেরেছিল এ হাটের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে? লাল মিয়া নেই, গাবগাছও খুঁজে পাওয়া সহজ হয় না কিন্তু হাটটি রয়ে গেছে। ঢাকায় এবারও বসছে ১৯টি হাট কিন্তু এতসবের মধ্যে গাবতলী যে বিশেষ তা আর না বললেও চলে। 

Related Topics

টপ নিউজ

হাট / গরুর হাট / কোরবানির গরুর চামড়া

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • যেভাবে গড়ে উঠেছিল পুড়িয়ে দেওয়া নেপালের সবচেয়ে উঁচু হিলটন কাঠমান্ডু হোটেল
  • জাকসু নির্বাচন: ১৭ হলের ভোট গণনা শেষ, ৫ হলের অনানুষ্ঠানিক ফল প্রকাশ
  • অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করলেন জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য মাফরুহী সাত্তার
  • শিক্ষকেরাও ব্যবহার করছেন চ্যাটজিপিটি, তবে কিছু শিক্ষার্থী এতে অখুশি
  • জাকসু নির্বাচন: ৫ হলের অনানুষ্ঠানিক ফল প্রকাশ হওয়ায় নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ
  • আইফোন ১৭ উন্মোচনের পর ১১২ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য হারাল অ্যাপল; কেন নাখোশ ক্রেতা-বিনিয়োগকারীরা?

Related News

  • ট্যানারিতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর চামড়া
  • কাঁচা চামড়ার দাম এ বছর কিছুটা বেড়েছে, তবে প্রান্তিক পর্যায়ে এখনও ‘ন্যায্যমূল্যের নিচে’
  • বরিশালের কামারপট্টিতে কোরবানির সরঞ্জামের ব্যস্ততা, জমে উঠেছে দা-বটি বিক্রি
  • ঈদের আগে ক্রেতা সঙ্কট ও দাম কম, শঙ্কায় ঢাকার গরু বিক্রেতারা
  • ঈদ উপলক্ষ্যে ঢাকায় ১৭ অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা: কার ঝুলিতে সবচেয়ে বেশি?

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

যেভাবে গড়ে উঠেছিল পুড়িয়ে দেওয়া নেপালের সবচেয়ে উঁচু হিলটন কাঠমান্ডু হোটেল

2
বাংলাদেশ

জাকসু নির্বাচন: ১৭ হলের ভোট গণনা শেষ, ৫ হলের অনানুষ্ঠানিক ফল প্রকাশ

3
বাংলাদেশ

অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করলেন জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য মাফরুহী সাত্তার

4
আন্তর্জাতিক

শিক্ষকেরাও ব্যবহার করছেন চ্যাটজিপিটি, তবে কিছু শিক্ষার্থী এতে অখুশি

5
বাংলাদেশ

জাকসু নির্বাচন: ৫ হলের অনানুষ্ঠানিক ফল প্রকাশ হওয়ায় নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ

6
আন্তর্জাতিক

আইফোন ১৭ উন্মোচনের পর ১১২ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য হারাল অ্যাপল; কেন নাখোশ ক্রেতা-বিনিয়োগকারীরা?

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net