ট্যানারিতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর চামড়া

ঢাকার সাভারের বিসিক চামড়া শিল্প নগরীতে আজ ঈদের দুপুর থেকেই কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া প্রবেশ শুরু হয়েছে। বেলা ১২টা ২৬ মিনিটে প্রথম ট্রাকটি ৩০০ পিস চামড়া নিয়ে শিল্প নগরীতে ঢোকে। এরপর বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ৭৮টি গাড়িতে মোট ১৭ হাজার পিস চামড়া বিভিন্ন ট্যানারিতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহরাজুল মাইয়ান।
তিনি জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে নির্বিঘ্নে কাঁচা চামড়া প্রবেশ এবং সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে বিসিক, জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো যৌথভাবে কাজ করছে। এজন্য অতিরিক্ত স্বেচ্ছাসেবকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানায় প্রায় সাড়ে ৬শ মেট্রিক টন লবন বিতরণ করা হয়েছে চামড়া সংরক্ষণের জন্য।
বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের (বিটিএ) ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, আজ ও আগামীকাল দুই দিনে সাড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া শিল্প নগরীতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুবকর সরকার বলেন, চামড়া সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে এবং চামড়াবাহী গাড়িগুলো নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে যৌথ কাজ করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর থেকে ট্যানারিগুলোতে কাজের ব্যস্ততা বেড়েছে। রক্তমাখা কাঁচা চামড়া লবনজাত করতে শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাড়ি আসার সাথে সাথে কর্মীরা চামড়া গণনা করে লবন দেওয়ার কাজে নেমে পড়ছেন। শ্রমিকরা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে কাজের চাপ আরও বাড়বে যা আগামীকাল পর্যন্ত চলতে পারে।
আজমীর লেদারের মালিক মো. শহিদুল্লাহ জানান, বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করেছেন তারা। ঈদের দিনেই ২০ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যদিও গত বছর প্রায় ৭০ হাজার পিস চামড়া অবিক্রিত ছিল, তাই এবছর কিছুটা কম সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, এবছর ঈদে মোট ৫০ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
ট্যানারিগুলোতে ঈদের অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও চুক্তিভিত্তিক অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আজমীর লেদারে কাজ করা চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক রাকিব বলেন, ঈদে অতিরিক্ত আয়ের জন্য প্রতি বছর তিনি বিভিন্ন ট্যানারিতে কাজ করেন। চামড়া প্রতি ৪০ টাকা মজুরি পান, যা দলবদ্ধভাবে ভাগাভাগি করে নেন। এতে দিনে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় হয় তার।
তিনি বলেন, 'এটা আমার কাছে অনেকটা উৎসবের মতো। আয়ও হলো, আবার অনেক মানুষ মিলে একসাথে কাজ করারও একটা আলাদা আনন্দ আছে'।
অন্য এক কারখানার একজন শ্রমিক টিবিএসকে বলেন, কাঁচা চামড়া প্রবেশের সাথে সাথে ব্যস্ততাও বেড়েছে তাদের। চামড়া আসার সাথে সাথেই সেগুলো সংরক্ষণে তাৎক্ষণিকভাবে চামড়াগুলো লবনজাত করছেন তারা।
ট্যানারি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিকাল পর্যন্ত শিল্প নগরীতে প্রবেশ করা কাঁচা চামড়াগুলোর অধিকাংশই ঢাকার বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিমখানা থেকে আসা।