কাঁচা চামড়ার সংগ্রহ এবছর ১০-১৫ শতাংশ কম হবে, বলছেন ট্যানারি মালিকরা

গত বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ তুলনামূলক কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশের চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত ট্যানারি মালিকেরা। তারা বলছেন, এ বছর প্রায় ৮০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ হতে পারে, যেখানে গত বছর ৯০ লাখেরও বেশি চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদের ভাষ্য, কাঁচা চামড়া সংগ্রহ কমার কারণ মূলত মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতির কারণে এবার কোরবানিও অন্যান্য বারের চেয়ে কম হয়েছে।
তার ধারণা, সামগ্রিকভাবে কোরবানির সংখ্যা কম হলেও এ বছর গরু ও মহিষ কোরবানির সংখ্যা কিছুটা বেড়ে ৫০ লাখের মতো হতে পারে। কারণ, এবার মানুষের ভাগে বড় গরু বা মহিষ কোরবানির সংখ্যা বেড়েছে।
অন্যদিকে ছাগল কোরবানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে প্রায় ৩০ লাখে নেমেছে বলে মনে করা হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ৫০ লাখেরও বেশি।
বিটিএ এবার উট ও মহিষের চামড়াসহ প্রায় ৫০ লাখ লবণযুক্ত গরুর চামড়া সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে। তবে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এক ধরনের চর্মরোগের কারণে অনেক গরুর চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে চামড়ার বাজারমূল্য কমতে পারে বলে আশঙ্কার করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ছাগল কোরবানির সংখ্যা কম হওয়া এবং চামড়া প্রক্রিয়াকরণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে এ বছর ছাগলের ভালো মানের চামড়া পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে, জানান শাহীন আহমেদ।
বিটিএর তথ্যমতে, আজ মঙ্গলবার (১০ জুন) পর্যন্ত দেশের প্রধান চামড়া শিল্প কেন্দ্র সাভার চামরা শিল্প নগরীতে প্রায় ৪.০৫ লাখ লবণযুক্ত গরুর চামড়া এবং প্রায় ৫০ হাজার ছাগলের চামড়া সরবরাহ করা হয়েছে।
শাহীন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ট্যানারি মালিকেরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া কিনছে (ঢাকার মধ্যে প্রতি বর্গফুট ৬০-৬৫ টাকা এবং রাজধানীর বাইরে ৫৫-৬০ টাকা)। আঞ্চলিক ব্যবসায়ীরা সারাদেশে লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহ করছে। এই সপ্তাহের শেষের দিকে ঢাকায় চামড়া সরবরাহের চালান বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
১৯৯০ সালের পর সরকার প্রথমবারের মতো ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ায় বছরের পর বছর ধরে যে কাঁচা চামড়ার দাম ছিল নিম্নমুখী, সেই চামড়ার দাম এবছর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
উল্লেখ্য, পশুর শরীর থেকে প্রথমে চামড়া ও পরে পশম ছাড়িয়ে প্রক্রিয়াজাত করার পর যে চামড়া পাওয়া যায় তাকেই ওয়েট ব্লু চামড়া বলা হয়। ১৯৯০ সালের আগপর্যন্ত এ ধরনের চামড়া বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হতো।
ওয়েট ব্লু চামড়া এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এবং ফিনিশড লেদারে পরিণত করতে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন হয়।
রপ্তানির সুযোগের ফলে দাম বৃদ্ধি পেলেও স্থানীয় ট্যানারদের আশঙ্কা- রপ্তানিকারকেরা বিদেশে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি দাম পেলে ওয়েট ব্লু চামড়ার অভ্যন্তরীণ ঘাটতি তৈরি হবে।
বিটিএ জানিয়েছে, তাদের ১২৫ সদস্যের ট্যানারি স্থানীয়ভাবে সম্পূর্ণ মূল্য সংযোজনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন করতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এগুলোর পাশাপাশি দেশব্যাপী দেড় শরও বেশি চামড়া প্রক্রিয়াকরণ কারখানা পরিচালনা করছে।
বিটিএর সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান টিবিএসকে বলেন, এ শিল্প যদি কেবল ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানিতে মনোযোগ দেয়, তাহলে বর্তমান বিনিয়োগের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ প্রয়োজন হবে।
বর্তমানে মাত্র তিন ডজন ট্যানারি আর্থিকভাবে স্থিতিশীল। বাকিরা ক্রমাগত বিভিন্ন সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
মিজানুর রহমান বলেন, আমরা আশাবাদী আন্তর্জাতিক বাজারে ওয়েট ব্লু চামড়ার দাম নাটকীয়ভাবে বাড়বে না। আমাদের স্থাপন করা নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা যতটা সম্ভব কার্যকর বা উন্নত করত হবে।
তিনি আরও জানান, ওয়েট ব্লু চামড়ার রপ্তানি মূল্য বর্তমানে দেশীয় মূল্যের হারের তুলনায় খুব বেশি নয়।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি আয় করা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাত বছরে প্রায় ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে।