চার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান পেল এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫
বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে তুলে ধরা এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় চার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫ দেওয়া হয়েছে।
পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেড, এনজেড টেক্স গ্রুপ, ফ্ল্যামিংগো ফ্যাশনস লিমিটেড, জনতা জুট মিলস লিমিটেড ও সাদাত জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। দেশের সেরা রপ্তানিকারকদের সম্মাননা জানাতে এইচএসবিসির ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগের এটি ছিল নবম আসর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় অবস্থিত ব্রিটিশ হাইকমিশন এই আয়োজনে সহায়তা করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক ও সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে রপ্তানির অপরিসীম গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, 'প্রতিযোগিতামূলক রপ্তানি নীতিমালার মাধ্যমে আমাদের রপ্তানি খাতকে আরও বৈচিত্র্যময় করে গড়ে তুলতে হবে। রপ্তানিকারকদের তাদের জন্য উন্মুক্ত সুযোগগুলো আরও বেশি কাজে লাগাতে হবে।'
গভর্নর আরও বলেন, 'যারা পুরস্কৃত হয়েছেন, তাদের নিয়ে আমি গর্বিত। কারণ অর্থনীতিতে তাদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়ার দেশগুলো রপ্তানিতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে।'
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতার প্রশংসা করে বলেন, 'যখন বাংলাদেশের কোনো পণ্য বিদেশে যায় এবং তাতে "মেড ইন বাংলাদেশ" লেখা থাকে, তখন সেটি বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতীক হয়ে ওঠে। বিশ্ববাজারে আমাদের রপ্তানিকারকদের উপস্থিতি বাড়াতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং রপ্তানিনির্ভর প্রবৃদ্ধিতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আর্থিক, ফ্যাশন, জ্বালানি ও শিক্ষার মতো খাতে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের অংশীদারত্বের কথা তুলে ধরেন। সারাহ কুক বলেন, 'এইচএসবিসি তাদের বৈশ্বিক দক্ষতা দিয়ে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।' সবুজ অর্থায়ন ও ডিজিটাল বাণিজ্যে ব্যাংকের সহায়তার প্রশংসাও করেন তিনি।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বাংলাদেশে ব্যবসা সহজীকরণ কার্যক্রম জোরদারে যুক্তরাজ্যের চলমান প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করেন। এসব প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে কাস্টমস প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন ও ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিমের আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান, যা ২০২৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ 'এনহান্সড প্রেফারেন্সেস' স্তরে উন্নীত হবে এবং তৈরি পোশাকসহ ৯২ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ধরে রাখতে পারবে।
বাণিজ্যের বাইরেও যুক্তরাজ্য ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট ও ইউকে এক্সপোর্ট ফিন্যান্স-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য শক্তি ও এভিয়েশন খাতে প্রকল্পের জন্য তারা ২০০ কোটি পাউন্ড সহায়তা দিচ্ছে।
হাইকমিশনার বলেন, 'আমাদের দুই দেশের এই সহযোগিতা প্রমাণ করে, আমরা একত্রে এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়তে পারি যা হবে উদ্ভাবনী, স্থিতিস্থাপক এবং পরিবেশবান্ধব।'
এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মো. মাহবুব উর রহমান রপ্তানিকারকদের দৃঢ়তা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, দেশের মোট রপ্তানিতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত উদ্যোক্তাদের অবদান প্রায় ৩৫ শতাংশ অবদান। তিনি বাজারের বৈচিত্র্যকরণ এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির সর্বোচ্চ সুফল পেতে কৌশলগত বিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
