বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সনদ না পাওয়ায় থমকে আছে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন রপ্তানির স্বপ্ন
প্রায় এক দশক পেরিয়ে গেলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও'র ম্যাচিউরিটি লেভেল–৩ (এমএল–৩) সনদ না পাওয়ায় বৈশ্বিক ভ্যাকসিন বাজারে এখনো জায়গা করে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভ্যাকসিন আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির জন্য এই সনদটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল পূর্বশর্ত বা প্রি-কোয়ালিফিকেশন; কিন্তু দেশের ওষুধখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা—বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)—এখনো সেই যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমএল–৩ মূল্যায়নে নয়টি ক্ষেত্র পরীক্ষা করে—ভ্যাকসিন নিবন্ধন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, বাজার মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ, নলেজ ম্যানেজমেন্ট, মান নিয়ন্ত্রণ, পরীক্ষাগার সক্ষমতা, আইনি অধিকার, লজিস্টিক সহযোগিতা এবং মানবসম্পদ। কিছু অগ্রগতি হলেও এখনো নিয়ন্ত্রক কাঠামো, তদারকি সক্ষমতা, বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন, গুণগত নিশ্চয়ন ও সিস্টেম–সংহত কার্যক্রম—এসব ক্ষেত্রে আরও উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে।
ওষুধ খাত–সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই সনদ পাওয়া গেলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভ্যাকসিন ও টিকা রপ্তানির পরিমাণ ৫০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে এবং এখাতে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
২০১৬ সালে এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করে অধিদপ্তর কিছুক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। কিন্তু সনদ না পাওয়ায় বাংলাদেশ এখনো বৈশ্বিক টিকা বাজারের মূলধারায় প্রবেশ করতে পারছে না; এদিকে ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণের পর ওষুধ শিল্পের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলেও খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন শুরু হয় ২০১১ সালে। বর্তমানে ইনসেপ্টা, পপুলার ও হেলথকেয়ার—এই তিন ওষুধ কোম্পানি ১৫–১৬ ধরনের মানব ও পশুচিকিৎসা ভ্যাকসিন তৈরি করে। এর মধ্যে ইনসেপ্টা খুব অল্প পরিমাণে ছোট কয়েকটি আফ্রিকান দেশে রপ্তানি করে থাকে।
কিন্তু এমএল–৩ সনদ না থাকায় ব্যাপক রপ্তানির পথ আটকে আছে। ডব্লিউএইচওর এই সনদ কোনো দেশের ওষুধখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য, কার্যকর ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি।
সম্প্রতি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রতিবেদন—যা টিবিএস দেখেছে—ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে দ্রুত এমএল-৩ সনদ অর্জনে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় গঠিত এই কমিটি, একইসঙ্গে এলডিসি উত্তরণের পর নগদ সহায়তার বিকল্প হিসেবে ওষুধ রপ্তানিতে কী কী সুবিধা দেওয়া যায় তাও খতিয়ে দেখতে বলেছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ''ডিজিডিএ ওষুধ, টিকা এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের উৎপাদন ও গুণপত মান নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হলেও—তারা এখনও ডব্লিউএইচও থেকে এমএল-৩ সনদ অর্জন করতে পারেনি, যা টিকা উৎপাদন ও টিকার মান নিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য।''
''এই সনদ ছাড়া বাংলাদেশে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের প্রি-কোয়ালিফিকেশন আবেদনই গ্রহণ করে না ডব্লিউএইচও। এর ফলে বাংলাদেশি উৎপাদনকারীরা অধিকতর রেগুলেটেড দেশগুলোতে টিকা রপ্তানি করতে পারে না।''
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাবেক এক কর্মকর্তা টিবিএস-কে বলেন, "বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এমএল-৩ অর্জন। কারণ এটি দেশের ওষুধ ও ভ্যাকসিন শিল্পকে বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার নতুন স্তরে পৌঁছে দেবে এবং উদীয়মান বাজারে আস্থা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।"
"তবে এমএল-৩ অর্জন কোনোভাবেই সহজ লক্ষ্য নয়—এটি একটি দেশের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের বৈজ্ঞানিক দক্ষতা, সক্ষমতা ও মান নিয়ন্ত্রণের স্বীকৃতি। ওষুধ, ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা সামগ্রীকে বৈজ্ঞানিকভাবে মূল্যায়ন এবং মান নির্ধারণের জন্য যেভাবে উন্নত দেশগুলোর রেগুলেটরি সায়েন্টিস্টরা কাজ করে, এমএল-৩ সেই মানদণ্ডেই একটি দেশের সক্ষমতাকে পরিমাপ করে।"
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমএল–৩ শুধু একটি সনদ নয়—এটি আস্থার প্রতীক। ২০২৫ সালের অক্টোবরে ইথিওপিয়া আফ্রিকায় নবম দেশ হিসেবে এমএল–৩ অর্জন করে। এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সেনেগাল ও রুয়ান্ডা এই স্বীকৃতি পায়। এই মাইলফলক অর্জনের মধ্যে দিয়ে এসব দেশ দেখিয়েছে যে তারা নিজস্ব জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ, কার্যকর ও উচ্চ মানের চিকিৎসাপণ্য নিশ্চিত করতে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ।
২০২৫ সালের শেষ দিক পর্যন্ত বিশ্বে ৭০টিরও কম দেশ তাদের জাতীয় ঔষধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের জন্য কোনো না কোনো স্তরে এমএল–৩ অর্জন করতে পেরেছে। ভারতের ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো (এনআরএ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান) ২০২৪ সালের অক্টোবরে এই সনদ পায় এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করে।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির (বাপি) প্রেসিডেন্ট আবদুল মুক্তাদির জানান, বিশ্বব্যাপী রপ্তানি অনুমোদন পাওয়ার জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে কঠোর তদারকি, উৎপাদন স্থাপনার পরিদর্শন এবং গুণমান বৈশ্বিক মানে পৌঁছেছে কি না– তা নিশ্চিত করতে হবে। যদিও দেশের অধিকাংশ ওষুধ কোম্পানির উচ্চ উৎপাদন মান রয়েছে, তবুও অধিদপ্তর এখনও প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রক সক্ষমতা (রেগুলেটরি ম্যাচিউরিটি) অর্জন করতে পারেনি।
তিনি টিবিএসকে বলেন, ডব্লিউএইচও ইতোমধ্যে কিছু ঘাটতি চিহ্নিত করে দিয়েছে—সেগুলো পূরণ করাই এখন জরুরি।
এমএল–৩ অর্জনে ঔষধ প্রশাসনের ঘাটতি
২০১৬ সালে এমএল–৩ অর্জনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে এই সক্ষমতা গড়ে তোলার পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মানবসম্পদ। যেখানে মার্কেট অথরাইজেশন বা ইন্সপেকশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে ২০–৩০ জন দক্ষ বিশেষজ্ঞ থাকা উচিত, সেখানে বর্তমানে আছে মাত্র ৪–৬ জন। পর্যাপ্ত সংখ্যক রেগুলেটরি সায়েন্টিস্ট, প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও শক্তিশালী টেকনিক্যাল টিমের অভাব দীর্ঘদিন ধরেই অগ্রগতিকে ধীর করে রেখেছে।
এছাড়া আইন–কানুন, অবকাঠামো, বিশ্লেষণক্ষমতা এবং আধুনিক ল্যাব সুবিধার ঘাটতি বহু ফাংশন বা কার্যক্রমে স্কোর কমিয়ে দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত ৯টি ফাংশনের কিছুতে বাংলাদেশ ৮৫–৯৫ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রগতি দেখালেও, কিছু কার্যক্রম এখনও লেভেল–১ বা লেভেল–২ অবস্থায় রয়ে গেছে। যতক্ষণ না প্রতিটি ফাংশন ন্যূনতম লেভেল–২ তে পৌঁছাবে, ততক্ষণ এমএল-৩ সার্টিফিকেশন পাওয়া সম্ভব নয় বলে জানান কর্মকর্তারা।
বাপির সভাপতি আবদুল মুক্তাদির বলেন, ''নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলে, বাংলাদেশ এমএল-৩ সনদ অর্জন করতে পারবে না। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি মনিটরিং সেল প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং ডব্লিউএইচও'র অনুমোদন অর্জনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে।''
যা বলছেন ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা
ঔষধ প্রশাসনের সূত্রগুলো জানায়, ২০১৬ সালের মার্চ থেকে সংস্থাটি ডব্লিউএইচও'র মানদণ্ড অনুযায়ী সিস্টেম পর্যালোচনা ও সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ করছে। এ জন্য আইন সংশোধন, গাইডলাইন প্রণয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত প্রস্তুতিসহ বেশকিছু কাজ এগিয়ে নেয়া হয়।
২০২১ সালে ডব্লিউএইচও'র বিশেষজ্ঞ দল এসে নয়টি নিয়মিত কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করে এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দেয়। এসব ঘাটতি পূরণে কারেকটিভ অ্যান্ড প্রিভেনশন অ্যাকশন (সিএপিএ) বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অধিদপ্তরের একজন সাবেক কর্মকর্তা টিবিএস-কে বলেন, কিছু সিএপিএ বাস্তবায়ন হলেও—সবগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সেগুলো পূরণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা–কে পুনর্মূল্যায়নের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বান জানাতে হবে—নতুন করে টিম এলে তারা দেখবে আগের পর্যবেক্ষণের কতটা পূরণ হয়েছে, ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে এবং বাংলাদেশ এমএল-৩ অর্জনের উপযুক্ত কি না।
তিনি আরো বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে এমএল-৩ খুবই গুরুত্বপূর্ণ সূচক। তাই ঔষধ প্রশাসনের উচিত দ্রুত ডব্লিউএইচও-কে পুনর্মূল্যায়নের আমন্ত্রণ পাঠানো এবং বাকি সিএপিএ–গুলো শেষ করা। নয়তো বাংলাদেশের ভ্যাকসিন রপ্তানিকারকরা বিশ্ববাজারে বড় বাধার মুখে পড়তে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. আকতার হোসেন স্বীকার করেন যে, আমাদের কিছু লিমিটেশন (সীমাবদ্ধতা) আছে। সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে কিছু লিমিটেশন থাকে, আমাদের জনশক্তি ও সম্পদের স্বল্পতা রয়েছে। তবে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।
তিনি বলেন, "অধিদপ্তর ডব্লিউএইচও মানদণ্ড অনুযায়ী কাজ করছে, প্রয়োজনীয় আইন বাস্তবায়ন এবং পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের কাজ করছে।"
তবে ডব্লিউএইচওকে অডিট করার জন্য কোন চিঠি দেয়া হয়েছে কিনা বা কবে নাগাদ আবার তাদের টিম আসতে পারে—সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি ডা. আকতার হোসেন।
শিল্প নেতাদের তাগিদ: আর দেরি নয়
ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের নেতারা বলছেন, বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন উৎপাদন করার পরও রপ্তানি করতে না পারা দেশের জন্য বড় ক্ষতি। তারা মনে করেন—প্রতিটি মাসের দেরিতেই বাজার হারানোর ঝুঁকি বাড়ছে।
বাপির সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন টিবিএসকে বলেন, "বাংলাদেশে উৎপাদিত ভ্যাকসিন আন্তর্জাতিক বাজারে ছাড়ার আগে প্রতিটি লট আলাদাভাবে পরীক্ষা ও সার্টিফাই করতে হয়। এই পরীক্ষাটি করতে হলে দেশের নিজস্ব ল্যাবকে আন্তর্জাতিক মানে সক্ষম হতে হবে। এজন্য বাংলাদেশকে দ্রুত এমএল–৩ অর্জন করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "ডিজিডিএ-র ল্যাব যদি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়, তাহলে ডব্লিউএইচও ঘোষণা করবে যে বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসনের সনদ বৈশ্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য। এতে স্থানীয় ল্যাবেই টেস্ট ও সার্টিফিকেশন সম্পন্ন করে সরাসরি রপ্তানি করা সম্ভব হবে।"
এক নজরে দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প
ইনসেপ্টা, পপুলার ও হেলথকেয়ার—এই তিনটি প্রতিষ্ঠান দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন করে। ইনসেপ্টা ২০১১ সালে উৎপাদন শুরু করে এবং নিউমোনিয়া, সার্ভিক্যাল ক্যানসার, র্যাবিসসহ ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ মানব ভ্যাকসিন তৈরি করছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি ১৩ ধরনের প্রাণিসম্পদ ভ্যাকসিনও উৎপাদন করে।
এছাড়া এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) মুন্সীগঞ্জে ৩,১১৫ কোটি টাকায় দেশের প্রথম সরকারি ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট স্থাপন করছে। ২০২৭ সালের মধ্যে এই প্ল্যান্টে এইচপিভি, জাপানিজ এনসেফালাইটিস, টাইফয়েড কনজুগেট, মেনিনজোকোকাল, বায়ভ্যালেন্ট ওরাল পোলিও, টিট/টিডি, কলেরা ও ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ ১৫টি ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।
সরকারের লক্ষ্য—দেশের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ভ্যাকসিন বিদেশে রপ্তানি করা।
ওষুধখাতে রপ্তানির মূল চ্যালেঞ্জ
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সুবিধার ঘাটতি: আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখনো ইউএসএফডিএ/ইইউ অনুমোদিত বায়োইকুইভ্যালেন্স বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার পূর্ণ সক্ষমতা নেই। ফলে স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে এসব পরীক্ষা পাশের দেশগুলোতে পাঠাতে হয়—যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সিআরও (কন্ট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন) প্রতিষ্ঠা হলে রপ্তানি সহজ হবে।
তবে ঔষধ প্রশাসনের সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ১৭–১৮টি সিআরও কার্যক্রম চালাচ্ছে, এবং বায়োইকুইভ্যালেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পরিচালনার সক্ষমতা বেসরকারি খাতে গড়ে উঠছে।
এপিআই পার্কের ধীরগতি: মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ২০০৮ সালে চালু হওয়া এপিআই পার্ক এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। অনিয়মিত গ্যাস সরবরাহের কারণে সেখানে স্থাপিত কারখানাগুলো উৎপাদন শুরু করতে পারছে না। বিশ্লেষকদের মতে নিরবচ্ছিন্ন ইউটিলিটি সেবা না পেলে এপিআই উৎপাদন কখনো গতি পাবে না।
এপিআই পরীক্ষায় এনডিটিএলের সক্ষমতা জরুরি: জাতীয় ওষুধ পরীক্ষাগার (এনডিটিএল) ডব্লিউএইচও–প্রত্যায়িত হলেও বর্তমানে নমুনা এপিআই পরীক্ষা করে না। ফলে স্থানীয় উৎপাদকদের বিদেশে পরীক্ষা করাতে হয়। শিল্প সমিতি ও আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি মনে করে—এনডিটিএলে এপিআই পরীক্ষার সক্ষমতা গড়ে উঠলে খরচ কমবে, আমদানি নির্ভরতা কমবে, রপ্তানির সময় বাঁচবে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়বে।
রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াতে জিএমপি ও সিজিএমপি নিশ্চিত করা: দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর উৎপাদন মান উন্নত হলেও বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি) ও চলমান জিএমপি (সিজিএমপি) পুরোপুরি নিশ্চিত করা গেলে রপ্তানি সক্ষমতা আরও অনেকটাই বাড়বে।
