কাঁচা চামড়ার দাম এ বছর কিছুটা বেড়েছে, তবে প্রান্তিক পর্যায়ে এখনও ‘ন্যায্যমূল্যের নিচে’

সরকার এ বছর কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে ৫ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছে এবং ৩৫ বছর পর ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এতে প্রত্যাশামতো না হলেও মৌসুমী ব্যবসায়ী ও মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে চামড়া সংগ্রহে আগ্রহ কিছুটা বেড়েছে।
চামড়া বিক্রির অর্থ গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানিদাতারা এবার গতবারের তুলনায় কিছুটা ভালো দাম পাচ্ছেন। তবে তা এখনও ন্যায্য মূল্যের তুলনায় অনেক কম বলে জানাচ্ছেন তারা।
গত বছর কুরবানির ঈদে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার গরুর চামড়া মাত্র দেড়শ টাকায় বিক্রি করেছিলেন ময়মনসিংহের কুমারী গ্রামের আবু ইউসুফ।
এবার একই ধরনের চামড়ার জন্য ৩০০ টাকা প্রস্তাব পেয়েছেন স্থানীয় এক মৌসুমী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। অবসরপ্রাপ্ত এই সরকারি কর্মচারী এটাকেও যথেষ্ট মনে করছেন না। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত তিনি চামড়াটি বিক্রি করেননি।
আবু ইউসুফ টিবিএসকে বলেন, 'সরকার ঢাকায় গরুর চামড়ার সর্বনিম্ন মূল্য ১ হাজার ৩৫০ টাকা আর ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ে যদি তার এক-তৃতীয়াংশও না পাওয়া যায়, তাহলে মূল্য নির্ধারণ করে কী লাভ?'
রাজধানীর মগবাজারের গ্রীনওয়ে এলাকায় স্থানীয়রা চামড়া বিক্রি না করে মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করেছেন।
সেখানকার মসজিদ তত্ত্বাবধায়ক জানান, 'গত বছর বিকেল চারটার মধ্যে ট্যানারির লোকজন এসে চামড়া নিয়ে গিয়েছিল। আজ পাঁচটা বাজলেও কেউ আসেনি। শত শত চামড়া নিয়ে আমরা অপেক্ষা করছি।'
এদিকে বহু বছর ধরে লোকসানের কারণে পাড়া-মহল্লার অনেক যুবক চামড়া কেনাবেচার মৌসুমী ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।
তবে রপ্তানি উন্মুক্ত করার খবরে কিছু মানুষ ভালো দাম পাওয়ার আশায় আবারও চামড়া সংগ্রহ করছেন। তবে দাম বাড়ার নিশ্চিত আভাস না থাকায় তারা রক্ষণশীলভাবে দরদাম করছেন।
ট্যানারি মালিকরা ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন, কারণ এতে স্থানীয় চামড়া শিল্পে চাপ বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
তবে সাধারণ মানুষ এ সিদ্ধান্তে খুশি।
একটি এনজিওর কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, '২০ বছর আগে যে চামড়া হাজার টাকায় বিক্রি হত, তা গত কয়েক বছর ধরে হয় নষ্ট হয়েছে, নয়তো ১০০-২০০ টাকায় বাড়ির গেটে বিক্রি হয়েছে। এবার তা ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'চামড়া দরিদ্র মানুষের জন্য আয়ের একটি উৎস। এটি সাধারণ মানুষের আবেগের বিষয়। সরকার গঠনকালীন কর্তৃপক্ষের উচিত হবে চামড়া বাজারে কোনও সিন্ডিকেট সক্রিয় আছে কি না, তা সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা।'
ঢাকা অঞ্চলের কয়েকজন আড়তদার জানিয়েছেন, সরকার লবণযুক্ত চামড়ার জন্য যে দাম নির্ধারণ করেছে, তা মেনে চলা কঠিন। কারণ লবণসহ অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খরচ কেটে ভালো মানের চামড়া ছাড়া অন্যগুলোতে মুনাফা করা সম্ভব নয়।
তবে ছাড়ানো ভালো চামড়া ৬০০ টাকার বেশি দামে কেনা হচ্ছে বলেও তারা দাবি করেছেন।
বাংলাদেশে সারাবছরে যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়, তার অর্ধেকের বেশি আসে কুরবানির ঈদে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এক কোটি তিন লাখ পশু কুরবানির চাহিদা ছিল, যার সিংহভাগই ছাগল।