পিটিআইয়ের বিক্ষোভ ঘিরে ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে ১৪৪ ধারা কঠোরভাবে প্রয়োগের হুঁশিয়ারি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির বিক্ষোভ ঘিরে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে ১৪৪ ধারা কঠোরভাবে প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) তিনি বলেছেন, ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে ১৪৪ ধারার প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে। এই শহরদুটিতে আজ বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছে পিটিআই।
ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, পিটিআই নেতারা ইসলামাবাদ হাইকোর্ট বা রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেল; যেখানেই বিক্ষোভ করতে আসুন না কেন, ১৪৪ ধারার অধীনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি পিটিআই-সমর্থিত আইনপ্রণেতাদের আইন মেনে চলার আহ্বান জানান।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার ক্ষমতাবলে, জেলা প্রশাসন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো এলাকায় চার বা তার বেশি মানুষের সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে পারে।
রাজধানী ইসলামাবাদে প্রশাসন গত ১৮ নভেম্বর থেকে দুই মাসের জন্য জনসমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অন্যদিকে রাওয়ালপিন্ডি জেলা প্রশাসন গত সোমবার পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে তিন দিনের জন্য সব ধরনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
তবে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই দলের প্রতিষ্ঠাতা কারাবন্দি ইমরান খানের সঙ্গে জেলে সাক্ষাতের সুযোগ বন্ধ রাখার প্রতিবাদে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট এবং রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলের বাইরে বিক্ষোভ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিটিআই।
শহর দুটি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাওয়ালপিন্ডিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং আদিয়ালা জেলে যাওয়ার পথে বিভিন্ন পয়েন্টে চৌকি বসানো হয়েছে।
এছাড়া, সেরিনা হোটেল এবং ন্যাশনাল ডেটাবেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অথরিটি (নাডরা) কার্যালয়ের দিক থেকে রেড জোনে [যেখানে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন রয়েছে] যাওয়ার রাস্তাও বন্ধ রাখা হয়েছে।
তালাল চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'সন্ত্রাসবাদীদের কথাও এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে হয়। সন্ত্রাসীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক সমাবেশ, আদালত বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করতে পারে।'
তিনি জানান, 'সন্ত্রাসীরা যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। তারা ভিপিএন ব্যবহার করে এগুলো চালায়, যাতে তাদের পরিচয় ও অবস্থান গোপন থাকে।'
তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথরিটি (পিটিএ) এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তালাল চৌধুরী বলেন, প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা সরকারের উদ্দেশ্য নয়। 'কিন্তু মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ যেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ যে কোনোভাবে নিতেই হবে।'
তিনি বলেন, পেশোয়ার হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন যে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রাজনৈতিক কার্যক্রমে ব্যবহার করা যাবে না।
সেইসঙ্গে তিনি খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করে বলেছেন—যদি প্রাদেশিক সরকারি সম্পদ রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হয়, তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'খাইবার পাখতুনখোয়া পুলিশ শুধু খাইবার পাখতুনখোয়ার ভেতরেই নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত হবে।'
তিনি সতর্ক করে বলেন, 'তারা যদি ইসলামাবাদ বা অন্য কোনো প্রদেশে আসে, তাহলে আগে থেকেই যথাযথভাবে জানাতে হবে। কোনো রাষ্ট্রীয় সম্পদ যদি পূর্ব অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা হয়, তাহলে পেশোয়ার হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে।'
তিনি আরও বলেন, মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, পিটিআই এরই মধ্যে রাওয়ালপিন্ডিতে বহুবার ইমরানের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
তিনি বলেন, নাগরিকদের জীবন ও শহরের শান্তি যেন বিঘ্নিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। 'এ ধরনের বিক্ষোভ যাতে কোনো ক্ষতির কারণ না হয়।'
তালাল চৌধুরী বলেছেন, ২০২৩ সালের ৯ মে ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর হওয়া সহিংস বিক্ষোভের মতো পরিস্থিতি আবারও তৈরি হলে তার ফল পুরো দেশকে ভোগ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীরা নিজেরাই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে এবং পরে সব দায় অস্বীকার করবে।
তিনি আরও বলেন, খাইবার পাখতুনখোয়ারে মুখ্যমন্ত্রীর ইমরানের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি করার কোনো ক্ষমতা নেই।
তালাল চৌধুরী আবারও বলেন, সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি বিবেচনায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এমন সমাবেশ যেন না হয় যেখানে সন্ত্রাসীরা সহজে হামলা চালাতে পারে।
তিনি আরও জানান, ফুলপ্রুফ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তবে এ জন্য রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির সহযোগিতা প্রয়োজন।
তালাল চৌধুরী আবারও সতর্ক করে বলেন, ১৪৪ ধারা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে এবং কোনো প্রাদেশিক সরকারি পদধারী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করলে পেশোয়ার হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদিয়ালা জেল থেকে ইমরানকে ইসলামাবাদের কোনো কারাগারে স্থানান্তর করা হবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে তালাল চৌধুরী বলেন, 'এ বিষয়ে কিছু বলার সময় এখনও হয়নি।'
তিনি বলেন, নতুন কারাগারের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে, এরপর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, 'ওই কারাগার শুধু একজন বন্দির জন্য নির্মিত হচ্ছে না। ইসলামাবাদে এটি প্রয়োজন ছিল, কারণ এখানকার বন্দিদের অন্য জেলায় পাঠাতে হতো।'
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র ও ট্র্যাকিং নম্বর দেওয়া হলে, ইমরানের দুই ছেলেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভিসা দেওয়া হবে।
রাওয়ালপিন্ডিতে নিরাপত্তা জোরদার
এদিকে রাওয়ালপিন্ডির পুলিশ জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায়, অন্তত তিন হাজার পুলিশ সদস্য ট্রাফিক ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, তিন দিনের জন্য রাওয়ালপিন্ডিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং শহরে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ১৪৪ ধারার কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।
পিটিআই নেতা আসাদ কায়সার সোমবার বলেন, পার্লামেন্টের দুই কক্ষের বিরোধী আইনপ্রণেতারা প্রথমে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সামনে বিক্ষোভ করবেন, এরপর রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের সামনে বিক্ষোভ করবেন।
তিনি বলেন, 'ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তার রায় কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং আদিয়ালা জেল প্রশাসনও আদালতের আদেশ মানছে না, এ কারণেই বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, ব্যারিস্টার গহর আলী খানসহ অন্যান্য পিটিআই নেতারা শহর দুটিতে বিক্ষোভ করবেন।
গত সপ্তাহে খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহাইল আফ্রিদি অষ্টমবারের মতো ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি না পেয়ে কারাগারের বাইরে অবস্থান কর্মসূচি করেন।
একইভাবে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদেরও তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
তার স্বাস্থ্য নিয়ে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি তিনি বেঁচে আছেন কি না তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে সরকার এবং আদিয়ালা কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিনি [ইমরান খান] সুস্থ আছেন।
