মধ্যপ্রাচ্যে পেপসির একচ্ছত্র আধিপত্য; কোকা-কোলা কেন এখানে কোণঠাসা হয়ে আছে?
বাগদাদ কিংবা বৈরুতের কোনো ক্যাফেতে বসে এক গ্লাস ঠান্ডা কোমল পানীয় চাইলে আপনার হাতে পেপসি তুলে দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। পৃথিবীর অন্য যেকোনো স্থানের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের চিত্রটি ভিন্ন; এখানে কোকা-কোলাকে একরকম কোণঠাসা করে পেপসি পানীয় বাজার দখল করেছে। এই সাফল্যের কারণ অবশ্য আংশিকভাবে ভাগ্যের খেলা, আর বাকিটা স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝে চতুর কৌশলের ফল।
পেপসির এই একচ্ছত্র আধিপত্যের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। সেই ১৯৬০-এর দশকে আরব দেশগুলো কোকা-কোলাকে বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছিল। ইসরায়েলে একটি বোতলজাতকারখানা খোলার উদ্যোগ নেওয়ায় এই বয়কট শুরু হয়।
যদিও ১৯৮০-এর দশকের শেষে সৌদি আরবে যুব ফুটবল বিশ্বকাপের স্পন্সর হওয়ার সময় এই বয়কটে কিছুটা শিথিলতা আসে, তবুও মাঝের দশকগুলো পেপসিকে তার অবস্থান মজবুত করার দারুণ সুযোগ এনে দেয়।
লেবাননের সফট-ড্রিঙ্কস ব্যবসায়ী কামেল আবদুল্লাহ বলছেন, এই সময়টাতে পেপসি স্থানীয় রাজনীতিকে চতুরভাবে কাজে লাগিয়েছে। ইরাকে তারা আরব অঞ্চলের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক তৈরি করে। যদিও তুর্কি প্রভাব বেশি থাকায় ইরাকি কুর্দিস্তানে কোকাকোলা এগিয়ে আছে।
বাগদাদের সফট ড্রিঙ্ক কোম্পানির পেপসি কারখানার ব্যবস্থাপক হায়দার আল-বাসামের দাবি, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারখানাগুলোর মধ্যে অন্যতম। লেবাননে, পেপসি উৎপাদনের পেছনের পরিবারটি প্রভাবশালী দ্রুজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে। আর কোকা-কোলার বিরুদ্ধে মূল বয়কটের নেতৃত্ব দেওয়া সৌদি আরবে পেপসির বাজার ভাগ ৭০ শতাংশ।
তবে পেপসির এই নীল সমুদ্রে চোখে পড়ার মতো কোকা-কোলার লাল রঙের একটি ব্যতিক্রমী দ্বীপও রয়েছে; ফিলিস্তিন। ১৯৬০-এর দশকে বয়কট শুরু হলেও এই অঞ্চলে কোকা-কোলার চাহিদা কমেনি। কোকা-কোলার লাইসেন্সধারী জাহি খৌরির মতে, পশ্চিম তীরে কোকা-কোলার বাজার ভাগ প্রায় ৯০ শতাংশ। তিনি ২০২২ সালে গাজায় একটি কোকা-কোলা কারখানা খোলেন।
দুর্ভাগ্যবশত, গাজার ওই কারখানাটি সাম্প্রতিক যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যায়। এই যুদ্ধ উভয় কোম্পানিকেই নতুন করে চাপে ফেলেছে, কারণ ইসরায়েলকে আমেরিকার সমর্থনের প্রতিবাদে এই অঞ্চলের মানুষ আমেরিকান ব্র্যান্ডগুলো বয়কট করতে শুরু করে। জর্ডানের ম্যাট্রিক্স বা লেবাননের জি কোলার মতো স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো দ্রুত আমেরিকান কোম্পানিগুলোর আধিপত্যে ভাগ বসাতে শুরু করে।
তবে অনেকের মতেই সেগুলোর স্বাদ কোক-পেপসির মতো ততটা ভালো নয়। এরই মধ্যে কোমল পানীয়ের এই 'বিগ হিটার' কোম্পানিগুলো তাদের সাময়িকভাবে হারানো বাজার পুনরুদ্ধার করতে শুরু করেছে। আপাতত, মধ্যপ্রাচ্যের কোমল পানীয়ের ভূখণ্ড লালের অল্প ছোপসহ 'নীল' হয়েই থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
