ইসরায়েলি জিম্মি, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি; মধ্যপ্রাচ্যে ‘ঐতিহাসিক ভোর’ ঘোষণা করলেন ট্রাম্প
দুই বছরের গাজা যুদ্ধ বন্ধের এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে সোমবার এক ঐতিহাসিক বন্দি ও জিম্মি বিনিময়ের ঘটনায় উল্লাসে করেছেন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা। খবর বিবিসি'র।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ শেষের পরিকল্পনার প্রথম ধাপে হামাস সব জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। একই সময় ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি ও আটক ব্যক্তিকে ছেড়ে দিয়েছে।
ইসরায়েলে মুক্ত জিম্মিদের বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাদের স্বজনরা। কেউ চিৎকার করে কাঁদেন, কেউ নিঃশব্দে আনন্দে ডুবে যান।
অন্যদিকে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে মুক্ত বন্দিদের স্বাগত জানাতে ভিড় করেন হাজারো ফিলিস্তিনি। যখন বাসে করে বন্দিদের ফিরিয়ে আনা হয়, তখন পতাকা হাতে উল্লাসে ফেটে পড়েন তারা।
এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলে পৌঁছান। জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের অল্প সময় পরই তিনি পার্লামেন্ট 'নেসেট'-এ ভাষণ দেন। ট্রাম্প বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক ঐতিহাসিক ভোরের সূচনা হয়েছে।'
পরে তিনি মিশরের শারম আল-শেখে যান। সেখানে ২০টিরও বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন গাজা শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ নিয়ে।
সম্মেলনে মিশর, কাতার, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির লক্ষ্য, দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটানো। যুদ্ধে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির এ সাফল্য ও পরিবারের পুনর্মিলনের আনন্দের মাঝেও সামনে রয়ে গেছে অনেক চ্যালেঞ্জ। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে এখনো পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপগুলোতে রয়েছে নানা জটিলতা। এসব বাধা কাটিয়ে এগোতে হলে দরকার হবে কঠিন ও দীর্ঘ আলোচনার।
সোমবারের এই জিম্মি ও বন্দি বিনিময়ের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ। এর আগে শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, আর সপ্তাহের শেষে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবাহ বাড়তে থাকে।
সোমবার মুক্তি পাওয়া প্রিয়জনকে বুকে জড়িয়ে আবেগে ভেসে ওঠেন ইসরায়েলি জিম্মি আরবেল ইয়েহুদ। তার সঙ্গী অ্যারিয়েল কুনিও ওই দিনই মুক্তি পান।
ইয়েহুদ বলেন, 'আনন্দে ও আবেগে আমি অভিভূত। দুই বছরেরও বেশি সময় পরে অ্যারিয়েলকে আবার দেখব—এই আশাই আমাকে প্রতিদিন বাঁচিয়ে রেখেছিল।'
তবে বিনিময় পরিকল্পনামাফিক চললেও, শুধু চার নিহত জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় হামাসের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারগুলো।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নিহত জিম্মিদের পরিচয় নিশ্চিত করতে ফরেনসিক পরীক্ষা চালানো হবে। এরপরই তাদের পরিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় এখনো অন্তত ২৪ জন জিম্মির মরদেহ রয়ে গেছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর পক্ষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব মরদেহ খুঁজে বের করা সম্ভব নাও হতে পারে।
চুক্তির অংশ হিসেবে, ইসরায়েল মুক্তি দিয়েছে প্রায় ১,৭০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে। তারা বিনাদোষে কারাবন্দি ছিলেন।
এক ফিলিস্তিনি নারী তার সন্তানকে ফেরত পেয়ে বুকে জড়িয়ে বলেন, 'এবার আমার হৃদয় শান্ত হয়েছে। '
আরেক ফিলিস্তিনি পুরুষ বলেন, 'সত্যি বলতে, আনন্দ ও উল্লাস বর্ণনা করা যায় না, কষ্টের মাঝেও… আজ আমরা উদযাপন করতে এসেছি।'
ইসরায়েল আরও ২৫০ জন আজীবন কারাদণ্ড পাওয়া ফিলিস্তিনি কয়েদিকে মুক্তি দিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০০ জনকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে নির্বাসিত করা হয়েছে এবং অল্প কয়েকজনকে পূর্ব জেরুজালেমে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর, ট্রাম্প নেসেটে যান। ২০০৮ সালের পর এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেখানে ভাষণ দেয়।
দীর্ঘ ভাষণে তিনি বলেন।, 'অবশেষে, শুধু ইসরায়েলিদের জন্য নয়, ফিলিস্তিনিদের জন্যও দীর্ঘ ও কষ্টদায়ক দুঃস্বপ্ন শেষ হলো।' এসময় কিছু রাজনীতিবিদ 'ট্রাম্প, ট্রাম্প, ট্রাম্প' চিৎকারও করেন।
এরই মাঝে একজন বিরোধীদলীয় সদস্য 'ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিন' লেখা কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এরপর ট্রাম্প শারম আল-শেখে যান। সেখানে তিনি ২০-এর বেশি বিশ্বনেতার সঙ্গে দেখা করেন— যাদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল মাঁখো এবং অনেক মুসলিম ও আরব দেশের নেতা। তিনি 'মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি' লেখা মঞ্চে অন্য নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলেন।
এছাড়া সেখানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনি গাজার জন্য 'বোর্ড অফ পিস'-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে কাজ করবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর, ট্রাম্প নেসেটে যান। ২০০৮ সালের পর এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেখানে ভাষণ দেয়।
দীর্ঘ ভাষণে তিনি বলেন।, 'অবশেষে, শুধু ইসরায়েলিদের জন্য নয়, ফিলিস্তিনিদের জন্যও দীর্ঘ ও কষ্টদায়ক দুঃস্বপ্ন শেষ হলো।' এসময় কিছু রাজনীতিবিদ 'ট্রাম্প, ট্রাম্প, ট্রাম্প' চিৎকারও করেন।
এরই মাঝে একজন বিরোধীদলীয় সদস্য 'ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিন' লেখা কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এরপর ট্রাম্প শারম আল-শেখে যান। সেখানে তিনি ২০-এর বেশি বিশ্বনেতার সঙ্গে দেখা করেন— যাদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল মাঁখো এবং অনেক মুসলিম ও আরব দেশের নেতা। তিনি 'মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি' লেখা মঞ্চে অন্য নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলেন।
এছাড়া সেখানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনি গাজার জন্য 'বোর্ড অফ পিস'-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে কাজ করবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা শুরুতে ফিলিস্তিনি বিশেষজ্ঞদের একটি অস্থায়ী স্থানান্তর কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে, যা 'বোর্ড অফ পিস'-এর তত্ত্বাবধানে থাকবে। পরে গাজার ক্ষমতা ফিলিস্তিন প্রশাসনের (পিএ) হাতে হস্তান্তর করা হবে, তবে পিএকে প্রথমে সংস্কার করতে হবে।
কিন্তু পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ এগোতে কঠিন আলোচনার প্রয়োজন। বিরোধের বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে— ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের পরিমাণ ও সময়সীমা, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা।
হামাস আগে জানিয়েছিল, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হলে তারা অস্ত্র ত্যাগ করবে না এবং গাজার বিদেশি শাসনের ধারণাও প্রত্যাখ্যান করেছে। নেতানিয়াহু ভবিষ্যতে পিএ-এর কোনো অংশগ্রহণের বিরোধিতা করছেন।
শান্তি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, 'এটি শুরু হয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'সব ধাপ কিছুটা একে অপরের সঙ্গে মিশে আছে।'
ইসরায়েল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ ইসরায়েলের আক্রমণের জবাবে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। হামাসের ওই আক্রমণে ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণে ৬৭,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
