কোক না পেপসি?
'দ্য ইকোনমিকস অব ইমপারফেক্ট কম্পিটিশন'
প্রচণ্ড তেষ্টা নিয়ে পাড়ার দোকানে কিংবা কোনো সুপারশপে ঢুকলে যে কারোরই মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড় হবে। ঠান্ডা পানীয়র শীতল তাকে দেখা যাবে কোক, পেপসি, ফ্যান্টা বা সেভেন-আপসহ আরও কত কত ব্র্যান্ড যে সারিবদ্ধভাবে ক্রেতার দিকে তাকিয়ে আছে!
শুধু কি পানীয়? এক প্যাকেট চিপস বা সামান্য টুথপেস্ট কিনতে গেলেও একই অবস্থা। বিকল্পের যেন শেষ নেই।
ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ আলফ্রেড মার্শালের নাম অর্থনীতির ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। তিনিই বিখ্যাত 'চাহিদা ও জোগান'-এর তত্ত্বটি নিখুঁতভাবে সবার সামনে এনেছিলেন। কিন্তু তার সেই যুগে হিসাব ছিল সোজা— মানুষের শীতে পরার জন্য টুপি দরকার, দরকার খাবার জন্য রুটি আর বাসন মাজার জন্য কয়লা।
কিন্তু অর্থনীতি যত এগিয়েছে, এসব সাধারণ পণ্যের রূপও তত বদলেছে। এখন আর শুধু 'হ্যাট' বা টুপি নেই, বাজারে আছে হরেক রকমের স্টাইল। আছে নানা পদের রুটি। আর থালাবাসন ধোয়ার লিকুইডের তো ডজন ডজন ব্র্যান্ড।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে পশ্চিমের কোম্পানিগুলো অনেক বেশি কৌশলী হতে শুরু করে। ক্রেতাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করতে তারা নিত্যনতুন সব পণ্য বাজারে আনতে থাকে। বাজারের এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে অর্থনীতিবিদদের পুরোনো তত্ত্বে আর কুলিয়ে উঠছিল না। ফলে প্রয়োজন হয়ে পড়ে নতুন কিছু ভাবার। ঠিক তখনই, ১৯৩০-এর দশকে দৃশ্যপটে এলেন এক নারী। নাম জোয়ান রবিনসন।
জোয়ান রবিনসন ছিলেন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির এক প্রফেসরের স্ত্রী। কিন্তু অর্থনীতির অভিজাত মহলে তিনি ছিলেন অনেকটা 'বহিরাগত'। কেন? কারণ, তিনি নারী। ১৯২০-এর দশকে জোয়ান যখন কেমব্রিজে পড়তেন, তখন নারীরা পরীক্ষায় পাস করলেও বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ডিগ্রি দিত না! তাই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এই দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভাঙতে হলে গতানুগতিক পথে হাঁটলে চলবে না।
১৯৩৩ সালে তিনি লিখলেন তার প্রথম বই 'দ্য ইকোনমিকস অব ইমপারফেক্ট কম্পিটিশন'। এই বইয়ে তিনি কোম্পানিগুলোর আচরণের এক নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন। বইটি প্রকাশের পর এক পার্টিতে আলফ্রেড মার্শালের স্ত্রী জোয়ানকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন, 'ইশ! আলফ্রেড (যিনি ৯ বছর আগেই মারা গিয়েছিলেন) যদি আজ বেঁচে থাকতেন! তিনি সব সময় ভাবতেন মেয়েরা অর্থনীতি বোঝে না, তুমি তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছ।'
জোয়ান রবিনসন সত্যিই সে সময় প্রমাণ করেছিলেন, অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা নারীদেরও আছে। তবে এখানেই শেষ নয়। জোয়ানের বই বের হওয়ার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই আটলান্টিকের ওপারে আমেরিকার এডওয়ার্ড চেম্বারলিন প্রায় একই বিষয় নিয়ে একটি বই লিখলেন। চেম্বারলিন ছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। শুরু হলো এক অঘোষিত লড়াই। চেম্বারলিন সারা জীবন দাবি করে গেলেন, তার থিওরি আলাদা, কিন্তু আসলে দুজনেই বলছিলেন প্রায় একই কথা।
রবিনসন ও চেম্বারলিনের আগে অর্থনীতিবিদদের মাথায় ছিল 'পারফেক্ট কম্পিটিশন' বা পূর্ণ প্রতিযোগিতার ধারণা, যেখানে অনেক বিক্রেতা থাকবে এবং সবাই একই পণ্য একই রকম দামে বিক্রি করবে। কেউ দাম বাড়াতে পারবে না, বাড়ালেই কাস্টমার অন্য দোকানে চলে যাবে। শিল্পবিপ্লবের শুরুর দিকে ছোট ছোট পারিবারিক ব্যবসায় এমনটা দেখা যেত। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে, আধুনিক বিশ্বে এই মডেল অচল হয়ে পড়েছে।
এর ঠিক উল্টো ধারণা হলো 'মনোপলি' বা একচেটিয়া বাজার, যেখানে একজনই বিক্রেতা। কিন্তু বাস্তবে 'খাঁটি মনোপলি' পাওয়াও কঠিন। ধরুন, দুনিয়ার সব টমেটো সস কি একটি কোম্পানিই বানায়? না, অন্য কোম্পানিও আছে।
অর্থাৎ বাস্তব জগৎটা আসলে সাদা-কালো নয়। রবিনসন আর চেম্বারলিন বললেন, অর্থনীতির জগৎটা আসলে 'ধূসর'। তারা এই ধূসর রংটাকেই অর্থাৎ বাজারের বাস্তব চিত্রটাকেই অর্থনীতির খাতায় তুলে আনতে চাইলেন। তারা প্রশ্ন তুললেন বাস্তব জীবনে ব্যবসাগুলো আসলে কীভাবে চলে?
তাদের তত্ত্বটি ছিল মনোপলি আর প্রতিযোগিতার এক অদ্ভুত মিশেল। ১৯৩০ সালের সাবানের বাজারের দিকে তাকালেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। সব সাবানের কাজ এক হলেও প্রতিটি ব্র্যান্ডের বৈশিষ্ট্য ছিল ভিন্ন। যেমন 'পিয়ার্স' সাবান স্বচ্ছ। 'ইম্পেরিয়াল লেদার'-এর গর্ব তাদের রাশিয়ান রাজকীয় সুবাস নিয়ে। আবার 'আইভরি সোপ'-এর চমক ছিল এটি পানিতে ভাসে! অর্থাৎ গোসলের সময় বাথটাবে সাবান হারিয়ে ফেলার ভয় নেই।
মজার ব্যাপার হলো, যার যার বৈশিষ্ট্যে তারা সবাই একেকজন রাজা বা 'মনোপলিস্ট'। রাজকীয় সুবাসের টানে ইম্পেরিয়াল লেদার দাম একটু বাড়ালেও ভক্তরা তাদের ছেড়ে যাবে না। কারণ, ওই ঘ্রাণ তো আর কোথাও নেই! কিন্তু দাম যদি আকাশছোঁয়া হয়? তখন আবার ক্রেতা বলতে পারে, 'থাক, পিয়ার্সই ভালো!' অর্থাৎ বিশেষ গুণের কারণে কোম্পানিগুলো কিছুটা মনোপলি ভোগ করে ঠিকই, কিন্তু অন্য ব্র্যান্ডগুলোর অস্তিত্ব তাদের পুরোপুরি এক"ছত্র অধিপতি হতে দেয় না।
চেম্বারলিনের মতে, ভিড়ের মধ্যে নিজের পণ্যকে প্রতিযোগীদের চেয়ে আলাদা প্রমাণ করার এক মোক্ষম হাতিয়ার হলো 'বিজ্ঞাপন'। মজার ব্যাপার হলো, অনেক সময় এসব বিজ্ঞাপনে পণ্যের ব্যাপারে কোনো তথ্যই থাকে না।
১৯২০ সালের আমেরিকান কোম্পানি 'হুইটম্যান্স'-এর চকলেটের বিজ্ঞাপনের কথাই ধরা যাক। বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, এক গলফ খেলোয়াড় আর কয়েকজন ফ্যাশনেবল তরুণী চকচকে নতুন এক গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আয়েশ করে চকলেট খাচ্ছে।
বিজ্ঞাপনটির বার্তা ছিল পরিষ্কার, এই চকলেট খাওয়া মানেই যেন ওই 'অভিজাত লাইফস্টাইলের' অংশ হওয়া। আজকের দিনের পারফিউম বা গাড়ির বিজ্ঞাপনেও তো আমরা ঠিক একই চিত্র দেখি। পারফিউমের সুবাস কেমন বা গাড়িটা কতটা টেকসই, সচরাচর তার চেয়ে চাকচিক্যই সেখানে মুখ্য হয়ে ওঠে।
মূলত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই 'ব্র্যান্ড ইমেজ' তৈরি করেই কোম্পানিগুলো ক্রেতার চোখে নিজেদের পণ্যকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তোলে। আর ক্রেতার চোখে এই 'আলাদা' হওয়ার জোরেই প্রতিযোগিতার বাজারে থেকেও তারা এক চিমটি 'মনোপলি' বা একচেটিয়া ক্ষমতার স্বাদ পায়।
তো রবিনসন আর চেম্বারলিনের এই তত্ত্বটি পরিচিতি পেল 'মনোপলিস্টিক কম্পিটিশন' নামে। একে আবার 'ইমপারফেক্ট কম্পিটিশন' বা 'অপূর্ণ প্রতিযোগিতা'ও বলা হয়। 'অপূর্ণ' বলার কারণ, এই ধারণাটি পাঠ্যবইয়ের সেই 'পূর্ণ' প্রতিযোগিতার ধারেকাছেও নেই।
ভালো নাকি খারাপ?
রবিনসন ও চেম্বারলিনের এই 'ধূসর' জগৎটা সমাজের জন্য ভালো নাকি খারাপ, তা বিচার করা সত্যিই কঠিন। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দুটোই আছে। একদিকে কাস্টমার হিসেবে আমরা কোক, পেপসি বা বাজারে থাকা হরেক রকমের ড্রিংকস থেকে পছন্দ করার সুযোগ পাই— এই বৈচিত্র্যটা আমাদের ভালোই লাগে।
কিন্তু উল্টো পিঠটাও আছে। এই ইন্ডাস্ট্রিগুলোর মূল লক্ষ্য থাকে নতুন নতুন ব্র্যান্ড নামিয়ে প্রতিযোগীদের কাস্টমার বাগানো। আচ্ছা, সত্যি করে বলুন তো, সামান্য একটু নকশা করা বোতলে নতুন কোনো পারফিউমের কি খুব দরকার আছে? কিংবা এর জন্য যে বিশাল খরচে বিজ্ঞাপন প্রচার চলে, তার কি প্রয়োজন আছে? অনেকেই বলেন, সম্ভবত নেই। এই অর্থে, 'মনোপলিস্টিক কম্পিটিশন' আসলে সমাজের সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারে না।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জোয়ান রবিনসন প্রচলিত অর্থনীতির কড়া সমালোচক হয়ে উঠলেন। যে অর্থনীতির পাঠ নিয়ে তিনি বড় হয়েছেন, তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করলেন। তিনি বলতেন, 'অর্থনীতি পড়ার আসল উদ্দেশ্য হলো অর্থনীতিবিদদের ধোঁকাবাজি থেকে নিজেকে বাঁচানো।'
তিনি ছিলেন ভীষণ সাহসী, তর্ক করতে পিছপা হতেন না, প্রয়োজনে প্রতিপক্ষের মুখের ওপর কড়া কথা শুনিয়ে দিতেও দ্বিধা করতেন না। বিশেষ করে আমেরিকান অর্থনীতিবিদদের ওপর তিনি বিরক্ত ছিলেন। তারা অর্থনীতিকে বুঝতে জটিল সব গণিত বা অঙ্কের ওপর নির্ভর করতেন, যা রবিনসন একদমই দেখতে পারতেন না। তিনি বলতেন, 'আমি যেহেতু অঙ্ক শিখিনি, তাই আমাকে মাথা খাটিয়ে ভাবতে হয়েছে।' (যদিও এ লড়াইয়ে তিনি হেরেছিলেন; কারণ, আজকের অর্থনীতিতে গণিতের ব্যবহার ডালভাত হয়ে গেছে)।
উল্টো রথ: মনোপসনি
রবিনসন অদ্ভুত সব প্রশ্ন করে মানুষকে বিপদে ফেলতে পছন্দ করতেন। যেমন মনোপলিস্টিক কম্পিটিশন বাদ দিয়ে তিনি ভাবলেন মনোপলির থিওরিটা যদি উল্টে দেওয়া যায়? অর্থাৎ বাজারে যদি বিক্রেতা একজন না হয়ে 'ক্রেতা' একজন হয়, তখন কী হবে? বিক্রেতার মনোপলিকে উল্টে তিনি ক্রেতার একচ্ছত্র আধিপত্যের নাম দিলেন 'মনোপসনি'।
বিষয়টি বুঝতে একটি রেস্তোরাঁর কথা ভাবা যায়, যারা পানীয় জেলেদের ধরা সব মাছ একাই কিনে নেয়। এখানে মাছের বাজারে ওই রেস্তোরাঁই মনোপসনিস্ট। আরও সহজ উদাহরণ হতে পারে একটি ছোট শহরের পাশে বিশাল এক কার্পেট কারখানা। ওই এলাকার একমাত্র চাকরিদাতা বা নিয়োগকারী তারাই। অর্থাৎ তারা শ্রমের বাজারের একমাত্র ক্রেতা। যেহেতু আর কোনো কাজ নেই, তাই কারখানার মালিক যা বেতন দেবে, শ্রমিকদের তা-ই মেনে নিতে হবে। এভাবেই মালিকেরা বেতনের হার কমিয়ে নিজের লাভ বাড়ায়।
প্রচলিত অর্থনীতি বলে, শ্রমিকেরা উৎপাদনে যতটুকু অবদান রাখে, তার সমান পারিশ্রমিক পায়। কিন্তু রবিনসন দেখালেন, মনোপসনি থাকলে মালিকেরা তাদের সেই পাওনার চেয়ে কম টাকা দেয়। এখানে কার্ল মার্ক্সের কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায়, যিনি বলেছিলেন, মালিকেরা শ্রমিকদের শোষণ করে। (যদিও মার্ক্সের যুক্তি ছিল ভিন্ন; তিনি বলেছিলেন কাজের সময় ও শ্রম বাড়িয়ে শ্রমিকদের শোষণ করা হয়)।
অর্থনীতির প্রচলিত পদ্ধতি ব্যবহার করেই রবিনসন এমন এক সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন, যা সনাতন অর্থনীতিবিদদের জন্য ছিল বেশ অস্বস্তিকর। তিনি এই যুক্তি দেখিয়ে বললেন, শ্রমিকদের বেতন ঠিক রাখতে হলে ন্যূনতম মজুরি আইন এবং শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠন (ট্রেড ইউনিয়ন) দরকার, যারা মালিকপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে। অনেক অর্থনীতিবিদ এসব বিষয়কে ভয় পেতেন; ভাবতেন, এতে বুঝি বাজারের স্বাভাবিক গতি নষ্ট হবে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রবিনসন আরও প্রথাবিরোধী হয়ে উঠলেন। তিনি কমিউনিস্ট দেশগুলোর প্রশংসা করতে শুরু করলেন। আলফ্রেড মার্শালের তত্ত্ব পড়ে বড় হওয়া কারও মুখে এমন কথা ছিল অকল্পনীয়; কারণ, মার্শালের থিওরি ছিল পুঁজিবাদ, বাজার আর মুনাফার পক্ষে।
১৯৭৫ সাল ছিল আন্তর্জাতিক নারী বর্ষ। বিখ্যাত 'বিজনেস উইক' ম্যাগাজিন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, সেবার অর্থনীতিতে নোবেল প্রাইজ জিতবেন জোয়ান রবিনসন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তা পাননি। মনে করা হয়, হয়তো তার বিপ্লবী সব মতামতের কারণে জুরি বোর্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
'অলিগোপলি' ও নতুন জটিলতা
রবিনসন আর চেম্বারলিনের পর অর্থনীতিবিদদের মনোযোগ গেল 'অলিগোপলি'র দিকে। এটি এমন এক বাজার, যা হাতে গোনা কয়েকটি বিশাল কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে দেখা গেল, আস্ত একেকটি শিল্প খাত দখল করে আছে হাতে গোনা দুয়েকটি বড় কোম্পানি।
উদাহরণস্বরূপ, পুরো জার্মানির ভারী শিল্প নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র ৫টি কোম্পানি। এদের একটি হলো 'ক্রুপ', যারা কয়লাখনি থেকে শুরু করে লোহা, স্টিল সবকিছুর মালিক। এরা হাজার হাজার কর্মী খাটাত, এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির সামরিক বাহিনীকে অস্ত্রও জোগান দিত। অন্যদিকে ব্রিটেনে তেরোটি ছোট কোম্পানি মিলে তৈরি হলো বিশাল 'ইম্পেরিয়াল টোব্যাকো'।
ক্রুপ বা ইম্পেরিয়াল টোব্যাকোর মতো দানবীয় কোম্পানিগুলো পারফেক্ট কম্পিটিশন বা মনোপলি—কোনোটিই মানত না। এমনকি রবিনসনের থিওরি দিয়েও এদের ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল না। কারণ, এরা শুধু পণ্য আলাদা করেই ক্ষান্ত হতো না। কখনো এরা দল পাকিয়ে পুরো বাজার নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিত, যাতে মুনাফা বাড়ে। আবার কখনো একে অপরকে ধ্বংস করতে 'প্রাইস ওয়ার' বা দাম কমানোর যুদ্ধে নামত। রবিনসনের তত্ত্বে এই ধরনের চালগুলোর ব্যাখ্যা ছিল না।
আসলে সাদা (পূর্ণ প্রতিযোগিতা) বা কালো (মনোপলি)—এই দুই প্রান্তের জন্য থিওরি বানানো সহজ। কিন্তু মাঝখানের এই অবস্থাটা ব্যাখ্যা করা কঠিন। কারণ, 'মাঝামাঝি' বা 'ইমপারফেক্ট' হওয়ার হাজারটা রাস্তা আছে। কিন্তু তারপরও, আধুনিক অর্থনীতির এই জটিল গোলকধাঁধা বোঝার প্রথম চাবিটি কিন্তু জোয়ান রবিনসনই আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
