ফটকাবাজির আদ্যোপান্ত
পঞ্চাশের দশকে গড়পড়তা ব্যাংক ম্যানেজারেরা সাধারণত সম্মানের পাত্রই ছিলেন। একটু সাবধানী গোছের, সকাল-সকাল ঘুমোতে যান, বেশি একটা মদটদ খান না। কিঞ্চিৎ নীরস এবং রক্ষণশীলও মনে হতে পারে তাদের।
সত্তরের দশকে এসে নতুন একধরনের ব্যাংকারের উদ্ভব হলো-কথা বলেন জোরগলায়, জমকালো জামাকাপড় পরেন আর সাথে একটু নাক-উঁচু স্বভাব। এরা একটু ঝুঁকি নিতে ভালোবাসেন, শর্টকাটে ধনী হওয়ার ইচ্ছা। দামি শ্যাম্পেন খান, দ্রুতগতির গাড়িতে চড়েন।
তাদের অর্থ উপার্জনের যে পদ্ধতি, অর্থনীতিতে তার নাম 'স্পেকুলেশন' বা ফটকাবাজি। সাধারণ মানুষ কোনো পণ্য কেনে ব্যবহারের জন্য। চাল কেনে ভাত রান্নার জন্য, তেল কেনে তরকারির জন্য। অন্যদিকে ফটকাবাজরা নিজেদের ব্যবহার করার দরকার না হলেও এগুলো কেনে।
মনে করুন, তাদের যদি কোনো কারণে মনে হয় যে সামনের অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে ধান কম উঠবে, তাহলে তারা ভাদ্র মাসেই বাড়তি চাল কিনে রাখবে। অনুমান ঠিক হলে তারা সেগুলো বেশি দামে বিক্রি করে সহজে লাভবান হয়।
এই ফটকাবাজি আসলে নতুন কিছু না। এর ইতিহাস বহু শতাব্দী পুরোনো। তবে সত্তরের দশকে এর ক্রমে বৃদ্ধি দেখা যায়। ব্যাংকগুলোতে কর্মরত বড় বড় টিম ছিল, যাদের কাজই ছিল যা কিছু বেচাকেনা করা সম্ভব, তার প্রায় সবকিছুই বেচাকেনা করে অর্থ আয় করা। কিছু ফটকাবাজ আবার নিজেদের কোম্পানি খুলে বসেছিল, যেগুলোকে বলা হতো 'হেজ ফান্ড'। এদের ব্যবসার পুরোটাই ছিল ফটকাবাজির ওপর ভর করে।
হাঙ্গেরীয় বংশোদ্ভূত ব্যাংকার জর্জ সরোস খুলেছিলেন 'কোয়ান্টাম ফান্ড' নামে এমনই এক কোম্পানি। তিনি ছিলেন বাকি সব ফটকাবাজদের থেকে একটু আলাদা। তিনি দর্শন ভালোবাসতেন। অন্য ব্যাংকাররা যখন কার রোলেক্স ঘড়ি কত দামি, সে আলোচনায় ব্যস্ত থাকত, তিনি তখন বুঁদ হয়ে থাকতেন বইয়ের পাতায়। দ্রুতই শতাব্দীর অন্যতম বিখ্যাত বিনিয়োগকারী হয়ে ওঠেন সরোস।
সরোসের মতো ফটকাবাজরা যেসব উপায়ে অর্থ উপার্জন করেন, তার একটি হলো মুদ্রা কেনাবেচা-ডলার, ইউরো, ইয়েন এবং আরও অনেক ধরনের মুদ্রা। আজকের দুনিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক বাজার হচ্ছে এই মুদ্রাবাজার। অন্য মুদ্রার বিপরীতে কোনো মুদ্রার মূল্যকে বলা হয় ওই মুদ্রার 'বিনিময় হার'।
ধরুন, একজন বাংলাদেশি দোকানদার আমেরিকান আইফোন আমদানি করতে চান। এখন আইফোন কেনার জন্য তার ডলার দরকার। কিন্তু তার কাছে আছে বাংলাদেশি টাকা। যদি আইফোনের দাম ১০০ ডলার হয়, আর এক টাকার মান হয় এক সেন্ট, তাহলে বাংলাদেশি দোকানদারকে খরচ করতে হবে দশ হাজার টাকা। যদি টাকার মান হয় দুই সেন্ট, তাহলে বাংলাদেশি ক্রেতাকে খরচ করতে হবে পাঁচ হাজার টাকা।
অন্য সব পণ্যের মতোই মুদ্রার মূল্যও নির্ভর করে জোগান ও চাহিদার ওপর। বাংলাদেশে যদি আমেরিকান আইফোন হঠাৎ খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তবে দেশি দোকানদার সেগুলো কিনতে আরও বেশি ডলার চাইবে। ফলে ডলারের দাম বাড়বে। মুদ্রার জোগান ও চাহিদা ওঠানামা করলে বিনিময় হারও ওঠানামা করে।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান যদি বারবার ওঠানামা করে, তাহলে বাংলাদেশি দোকানির জন্য ছয় মাস পরে দোকান চালানোর খরচ কেমন হবে, সেটা অনুমান করা বেশ দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। আজকে ডলারের যে দাম, সেটা তার কাছে কম মনে হতে পারে। ছয় মাস পরে টাকার মান কমে গেলে আইফোন আমদানি করার খরচ বেড়ে যেতে পারে। কিছু কিছু দেশ এই বিনিময় হারকে স্বাধীনভাবে ওঠানামা করতে দেয়। একে বলে 'ফ্লোটিং' বা 'ভাসমান' বিনিময় হার। আবার অনেক দেশ এই বিনিময় হারকে ওঠানামা করতে না দিয়ে একটা নির্দিষ্ট দর ঠিক করে দেয়, যেটাকে বলে 'পেগিং'। আশা করা হয়, বিনিময় হার পেগ করে রাখার কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য কিছুটা স্থিরতা থাকবে, সহজেই বোঝা যাবে তাদের পণ্যের জন্য কত দাম পাবে এবং বিদেশি পণ্য কিনতে কত খরচ হবে।
পেগ করে রাখা মুদ্রা ফটকাবাজদের জন্য বাড়তি আয়ের চমৎকার একটা সুযোগ তৈরি করে-'পেগ আক্রমণের' মাধ্যমে। সত্তরের দশকে আমেরিকান অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান এ নিয়ে একটি তত্ত্ব দেন।
পেগ আক্রমণ বলতে কী বোঝায়, তা বুঝতে হলে আগে জানতে হবে সরকার কীভাবে মুদ্রার মান স্থির রাখে। সরকার এটা করে মুদ্রা কেনাবেচার মাধ্যমে, যাতে তার মান নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে।
ধরুন, বাংলাদেশ সরকার মে মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার একটি নির্দিষ্ট দাম ঠিক করে। জুনে যদি টাকার চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেশি হয়, তবে সরকার আরও টাকা ছাপাতে পারে, যাতে এর দাম নির্ধারিত মানের বেশি না ওঠে। কিন্তু জুলাইয়ে যদি মানুষ প্রচুর ডলার কিনতে শুরু করে এবং ফলস্বরূপ প্রচুর টাকা বিক্রি করে, তবে টাকার দাম কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। দাম ধরে রাখতে সরকারকে তার মজুত ডলার ব্যবহার করে টাকা কিনতে হবে। এই মজুতকে বলা হয় একটি দেশের 'বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ'। বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রুগম্যান তার তত্ত্বে দেখান, যখন সরকার অতিরিক্ত ব্যয় করতে থাকে, তখন ফটকাবাজরা পেগ বা স্থির বিনিময় হারকে আক্রমণ করে। সত্তরের দশকে মেক্সিকো তার মুদ্রার বিনিময় হার ডলারের সাথে পেগ করে রাখে। একই সময়ে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা, আবাসন ও পরিবহন প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয় করছিল। এ ব্যয়ের জন্য জনগণের ওপর বড় কর চাপাতে সরকার অনিচ্ছুক ছিল। তাই তারা বেশি করে পেসো ছাপতে শুরু করে। প্রতি ডলারের বিপরীতে আগের তুলনায় বেশি পেসো ছাপানো হওয়ায়, ডলারের বিপরীতে পেসোর মান কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এই পতন ঘটলে পেগ ভেঙে যেত। এটি ঠেকাতে সরকারকে বাজার থেকে পেসো কিনে নিতে হতো ডলারের রিজার্ভ ব্যবহার করে, যাতে প্রচলিত পেসোর সংখ্যা স্থির থাকে। কিছুদিন এটি কাজও করেছিল; কিন্তু একটা সময়ে এসে সরকারের ডলার ফুরিয়ে যায়।
এরপরেও সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয়ের জন্য আরও পেসো ছাপতে থাকে। কিন্তু যেহেতু আর পেসো কেনার মতো ডলার ছিল না, তাই বাজারে পেসোর সংখ্যা বাড়তেই থাকে। ফলে ডলারের বিপরীতে পেসোর মান পড়ে যাওয়াই অনিবার্য হয়ে ওঠে।
ক্রুগম্যান বলেন, এই পতন ঘটে ডলার পুরোপুরি ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই এবং এর জন্য দায়ী হচ্ছে ফটকাবাজদের আচরণ। তারা জানত সরকার টাকা ছাপছে এবং রিজার্ভে ডলারের মজুত শেষ হয়ে আসছে। তারা জানত ৬০ দিনের মধ্যেই ডলার শেষ হয়ে যাবে। ৬০তম দিনে মুদ্রার মান পড়তে শুরু করলে ফটকাবাজদের সব পেসো বিক্রি করে দিতে হবে, নইলে ক্ষতি হবে। এই বিক্রি করাকেই বলা হয় আক্রমণ। বাস্তবে এটি আরও আগে ঘটে: ৫৯তম দিনে তারা বুঝতে পারে ৬০তম দিনে কী ঘটবে, তাই সেদিনই পেসো বিক্রি করে দেয়। একই যুক্তিতে তারা ৫৮তম দিনেও আগাম ব্যবস্থা নেয়। ফলে রিজার্ভের ডলার পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই ফটকাবাজরা সব পেসো বিক্রি করে অবশিষ্ট ডলারগুলো কিনে নেয়। তখন পেসোর পেগ ভেঙে পড়ে।
অর্থনীতিবিদেরা একে বলেন মুদ্রা সংকট। ফটকাবাজরা লাভবান হয়; কারণ, তারা তাদের সম্পদ দ্রুতই ডলারের মতো বেশি মূল্যবান মুদ্রায় রূপান্তর করে ফেলে।
১৯৭৬ সালে মেক্সিকো সংকটে পড়ে এবং তাদের মুদ্রার মূল্য অনেক কমতে থাকে। মুদ্রার মান এত নিচে নেমে যাওয়ায় আমদানি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। এতে মানুষের আয়ের প্রকৃত মূল্য কমে যায় এবং তারা খরচ কমিয়ে দেয়। অর্থনীতি মন্দার দিকে চলে যায়।
পরে আমেরিকান অর্থনীতিবিদ মরিস অবস্টফেল্ড দেখান, কোনো দেশ টাকা না ছাপলেও মুদ্রা সংকটে পড়তে পারে। এমনকি সবচেয়ে ধনী দেশগুলোরও এ সংকট হয়। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ইউরোপের বেশ কিছু দেশের মুদ্রা পেগ করা ছিল জার্মানির মুদ্রা ডয়চে মার্কের সাথে, যা ছিল তখনকার ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশের মুদ্রা। কিন্তু এই দেশগুলো একটি দোটানায় পড়েছিল।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক ব্রিটেনকে। একদিকে সরকার পেগ বজায় রাখতে চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের সুনাম নির্ভর করছিল এর ওপর। পেগ বাতিল করা হলে ব্যাংকগুলো ব্রিটেনকে কম ভরসাযোগ্য ভাবতে পারে এবং দেশটিকে ঋণ দিতে অনীহা দেখাতে পারে। অন্যদিকে সরকার চেয়েছিল পেগ ছেড়ে পাউন্ডের মান কমতে দিতে। পাউন্ডের মান ধরে রাখতে সরকারের সুদের হার বেশি রাখতে হতো। উচ্চ সুদের হার মানে মানুষ পাউন্ডে টাকা রাখলে বেশি লাভ পায়, ফলে তারা পাউন্ড কেনে, যা পাউন্ডের মান ধরে রাখতে সাহায্য করে।
কিন্তু এই উচ্চ সুদের হার প্রচণ্ড ক্ষতি করছিল ব্রিটিশ বাড়িওয়ালাদের, যারা বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে বাড়ি কিনেছিলেন এবং এখন বিপুল পরিমাণ সুদ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। ব্রিটেনের সংকট আরও বাড়ে, যখন ফটকাবাজরা বিশ্বাস করতে শুরু করে, সরকার আর পেগ ধরে রাখতে পারবে না। তারা আশা করেছিল, পাউন্ডের মান পড়ে যাবে। পেগ আক্রমণ আসে ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখে, যেদিনটিকে বলা হয় 'ব্ল্যাক ওয়েডনেসডে' বা 'কালো বুধবার'। এটি ছিল ফটকাবাজদের সাথে সরকারের এক যুদ্ধ। জর্জ সরোসের মতো যারা আগে থেকেই অনুমান করতে পেরেছিলেন যে পাউন্ডের মান পড়ে যাবে, তারা বিপুল পরিমাণ পাউন্ড বিক্রি করতে শুরু করলেন।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বাজার থেকে পাউন্ড কিনে নিয়ে এই পতন ঠেকানোর চেষ্টা করল। জন মেজর তার মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, সুদের হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করা হবে, যা ছিল বেশ বড়সড় বৃদ্ধি। বৈঠকের পরে স্বরাষ্ট্রসচিব কেনেথ ক্লার্ক তার অফিসে ফিরছিলেন। তার গাড়িচালক পেছনে ঘুরে বলল, 'স্যার, কাজ হয়নি।' চালক রেডিওতে সুদের হার বাড়ানোর খবর শুনতেছিল। কিন্তু পাউন্ড তখনো ধসে পড়ছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ক্লার্ক আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফিরে গেলেন। তারা সুদের হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করলেন।
কিন্তু এতে লাভ কিছু হলো না। ফটকাবাজরা বুঝতে পারছিল যে সরকার শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেবে, তাই তারা পাউন্ড বিক্রি করতে থাকে। সেদিন সন্ধ্যায় সরকার পেগ বাতিল করে এবং জন মেজর পদত্যাগ করার কথাও ভাবেন। অর্থমন্ত্রী নরম্যান ল্যামন্ট বলেছিন, তিনি কয়েক সপ্তাহ পর প্রথমবারের মতো নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলেন; কারণ, তাকে আর পাউন্ডের মান নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছিল না।
সরকার পাউন্ড রক্ষার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করেছিল। অন্যদিকে জর্জ সরোস এক বিলিয়ন পাউন্ড লাভ করেন এবং 'দ্য ম্যান হু ব্রোক দ্য ব্যাংক অব ইংল্যান্ড' উপাধি অর্জন করেন।
অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, স্পেকুলেশন, জল্পনা বা ফটকাবাজি আসলে উপকারী। কোনো দেশের অর্থনীতিতে কী ঘটছে তার প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায় মুদ্রাবাজারের ফটকাবাজরা। সরকার যখন কোনো খারাপ নীতি গ্রহণ করে, যেমন অতিরিক্ত ব্যয় বা অবাস্তবভাবে উচ্চ সুদের হার নির্ধারণ, তখন তারা পেগ আক্রমণ করে। সরোস কেবল এমন একটি পতন থেকেই অর্থ উপার্জন করেছিলেন, যে পতন আসলে অনিবার্যই ছিল। কেউ কেউ বলেন, এসব আক্রমণ সরকারকে আরও যুক্তিসংগত নীতি নিতে উৎসাহিতও করতে পারে।
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে এশিয়ায় ঘটে যাওয়া একের পর এক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য অনেকেই সরাসরি দোষ দিয়েছিলেন ফটকাবাজদের।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন, ফটকাবাজরা অপরাধী। তিনি সরোসকে 'মূর্খ' বলেন এবং মুদ্রা কেনাবেচা নিষিদ্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন। সরোস পাল্টা বলেছিলেন, মাহাথির বিপজ্জনক এবং তাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়।
এশিয়ার সমস্যার শুরু নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে থাইল্যান্ডের অর্থনীতি ধসে পড়ার মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছিল।
ব্যাংককে অসংখ্য নির্মাণাধীন ভবনের কাজ বন্ধ হয়ে যায় মালিকদের হাতে টাকা না থাকার কারণে। খুব দ্রুতই মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো থাইল্যান্ডের সেই অর্থনৈতিক অসুখে আক্রান্ত হয়।
কিন্তু থাইল্যান্ডের সমস্যার সাথে ওই দেশগুলোর সম্পর্কই বা কী?
অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, অর্থনৈতিক সংকট ছোঁয়াচে রোগের মতো এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়াতে পারে। তারা এটাকে বলেন 'অর্থনৈতিক সংক্রমণ' এবং এই সংক্রমণ ছড়ায় ফটকাবাজরা। থাইল্যান্ডে কী ঘটেছে, তা দেখে তারা ভাবতে শুরু করে মালয়েশিয়া ও আশপাশের দেশগুলোতেও একই ধরনের কিছু ঘটতে পারে। যদি এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে তারা আগেভাগেই তাদের মালয়েশিয়ান মুদ্রা বিক্রি করতে চাইবে।
কিন্তু তারা শুধু মালয়েশিয়ার অর্থনীতি নিয়ে চিন্তিত ছিল না। অন্য ফটকাবাজরা কী ভাবছে, তা নিয়েও তারা চিন্তিত ছিল। যদি ফটকাবাজরা মনে করে যে অন্যরাও চিন্তিত এবং তাই মালয়েশিয়ার মুদ্রা বিক্রি করবে, তবে তারাও তাদের মুদ্রা বিক্রি করবে। যথেষ্টসংখ্যক ফটকাবাজ যদি একসাথে এমনটা ভাবে, তবে মুদ্রাটি সত্যিই ধসে পড়ে। অর্থনীতিবিদেরা একে বলেন 'সেলফ-ফুলফিলিং ক্রাইসিস' বা 'স্বয়ংসম্পূর্ণ সংকট'।
জেফরি স্যাক্সের মতো অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, অর্থনীতিতে বড় কোনো সমস্যা না থাকলেও ফটকাবাজরা সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এশিয়ার অর্থনীতিগুলো তখন ভালো করছিল এবং সরকারগুলোও দেশগুলোকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করছিল। তারা সত্তরের দশকের মেক্সিকোর মতো ছিল না। সমালোচকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ফটকাবাজদের আক্রমণটি ছিল সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় এক আতঙ্ক। সে কারণেই মাহাথির এত খেপেছিলেন।
