নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচন: আগাম ভোট শুরু, জরিপে এগিয়ে মামদানি
নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে আমেরিকার এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচনগুলোর একটির জন্য আগাম ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হলো।
শনিবার থেকে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিতে শুরু করেছেন। এবারের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানির সাথে, যিনি জনমত জরিপে অনেকটাই এগিয়ে আছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ব্যালটে থাকা ডেমোক্র্যাট নেতা ও নিউ ইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। যদিও বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের নাম ব্যালটে রয়েছে, তিনি গত মাসেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এবং সম্প্রতি অ্যান্ড্রু কুমোকে তার সমর্থন জানিয়েছেন।
'ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট' হিসেবে পরিচিত মামদানি তার উদারপন্থী নীতির মাধ্যমে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তার প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে—সবার জন্য বিনামূল্যে শিশু যত্ন, বিনামূল্যে বাস পরিষেবা এবং শহরের প্রায় ১০ লক্ষ ভাড়া-নিয়ন্ত্রিত অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ রাখা, যা বহু মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।
অন্যদিকে, কুমো মামদানির তীব্র সমালোচনা করেছেন, বিশেষ করে ইজরায়েল প্রসঙ্গে তার অবস্থানের জন্য। মামদানি নির্বাচিত হলে তিনি হবেন নিউ ইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র।
নির্বাচনী প্রচারণায় মামদানিকে মুসলিম-বিদ্বেষী বক্তব্যের শিকার হতে হয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, গাজায় ইজরায়েলের সামরিক অভিযান গণহত্যার সামিল। জাতিসংঘের একটি তদন্ত, গণহত্যা বিশেষজ্ঞ এবং বহু মানবাধিকার সংস্থাও এই মতকে সমর্থন করে।
শুক্রবার এক আবেগঘন বক্তৃতায় মামদানি তার বিরুদ্ধে আনা আক্রমণকে 'বর্ণবাদী ও ভিত্তিহীন' বলে উল্লেখ করেন।
'নিউ ইয়র্কে একজন মুসলিম হিসেবে আপনাকে অপমানিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়, কিন্তু এই অপমান আমাদের অন্যদের থেকে আলাদা করে না। শহরের আরও অনেককেই এর শিকার হতে হয়। বরং এই অপমানকে সহ্য করে নেওয়াই আমাদের আলাদা করে তোলে,' বলেন মামদানি। উল্লেখ্য, গত জুনে ডেমোক্রেটিক পার্টির মেয়র প্রাইমারিতে মামদানি কুমোকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেছিলেন।
কুমো মামদানির নীতিগুলোকে 'অবাস্তব' এবং 'আর্থিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন' বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি রাজ্যের গভর্নর হিসেবে তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে ভোটারদের সমর্থন চেয়েছেন, যদিও একাধিক মহিলার যৌন হয়রানির অভিযোগে ২০২১ সালে তাকে সেই পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল।
নিউ ইয়র্কে ২০১৯ সাল থেকে আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে এবং এটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শহরের নির্বাচনী অর্থায়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনের মেয়র প্রাইমারিতে প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোট আগাম এবং সশরীরে দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে, প্রতিবেশী রাজ্য নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচনও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। সেখানে রিপাবলিকান দলের অ্যাসেম্বলিম্যান জ্যাক সিয়াত্তারেল্লির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য মিকি শেরিল। নিউ জার্সিতে ২০২১ সাল থেকে আগাম ভোটের প্রথা চালু হয়।
এই দুটি রাজ্যের নির্বাচনকে 'অফ-ইয়ার' নির্বাচন বলা হয় (কারণ এগুলি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বছরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না)। এখানকার ফলাফলকে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একটি ভবিষ্যৎ সঙ্কেত বা 'বেলওয়েদার' হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা বুঝতে চাইছে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কোন ধরনের প্রার্থী সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে।
রাটগার্স ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ অ্যাশলি কোনিং-এর মতে, এই নির্বাচনগুলোয় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির অভ্যন্তরীণ বিভাজনগুলো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
তিনি বলেন, 'নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রগতিশীল শিবিরের (মামদানি) সাথে দলের পুরোনো ধারার প্রতিষ্ঠিত নেতাদের (কুমো) লড়াই হচ্ছে, অন্যদিকে নিউ জার্সিতে মধ্যপন্থী প্রার্থী মিকি শেরিলের ওপর ভরসা রাখা হচ্ছে যাতে তিনি রাজ্যের বিশাল মধ্যবিত্ত ভোটারদের মন জয় করতে পারেন।'
এই মাসের শুরুতে নিউ জার্সির গভর্নর প্রার্থীরা তাদের চূড়ান্ত বিতর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের অচলাবস্থা, শেরিলের সামরিক চাকরির রেকর্ড, ট্রাম্পের নীতি এবং রাজ্যের আকাশছোঁয়া জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে একে অপরকে আক্রমণ করেন।
এই নির্বাচনের বিজয়ী, ডেমোক্র্যাট গভর্নর ফিল মারফির স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি মেয়াদ শেষ হওয়ায় নিয়মানুযায়ী আর প্রার্থী হতে পারবেন না।
