১২ বছরের স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ফ্রান্সে প্রথমবার কোনো নারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
গোটা ফ্রান্সকে স্তব্ধ করে দেওয়া এক মামলায় ১২ বছর বয়সী লোলা দাভিয়েতের ধর্ষণ ও খুনের দায়ে দাহবিয়া বেনকিরেদকে দেশটির বিরল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২৭ বছর বয়সী এই আলজেরীয় নারীকে অন্তত ৩০ বছর কারাভোগ করতে হবে বলে আদালতের রায়ে বলা হয়েছে। তিন বিচারক ও ছয় সদস্যের জুরির প্যানেল সর্বসম্মতভাবে এই দণ্ড দেন।
ফ্রান্সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অত্যন্ত বিরল, এবং বেনকিরেদ হচ্ছেন দেশটির প্রথম নারী যিনি এ শাস্তি পেলেন। এর আগে এ রায় পেয়েছিলেন সিরিয়াল কিলার মিশেল ফুরনিরে এবং ২০১৫ সালের প্যারিস হামলার অন্যতম অভিযুক্ত সালাহ আবদেসলেম। ২০১৫ সালের ওই হামলায় ১৩০ জন নিহত হন।
রায় ঘোষণার পর লোলার মা ডেলফিন দাভিয়ে বলেন, 'আমরা ন্যায়বিচারে বিশ্বাস রেখেছিলাম, এবং সেটিই আমরা পেয়েছি।'
২০২২ সালের অক্টোবরে লোলাকে হত্যা করা হয়। প্যারিসে যে ভবনে সে থাকত, তার আঙিনায় একটি প্লাস্টিকের স্টোরেজ বক্সে লোলার মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল।
বেনকিরেদ আলজেরীয় অভিবাসী, যাকে ফ্রান্স ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনার পর ফ্রান্সের ডানপন্থি রাজনীতিকেরা বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন।
আদালতের প্রসিকিউটর বেনকিরেদের জন্য সম্ভাব্য দীর্ঘতম শাস্তির আবেদন করেছিলেন। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরীক্ষার পর বেনকিরেদের মধ্যে সাইকোপ্যাথিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেলেও তাকে সুস্থ বলে ঘোষণা করা হয়।
জুরি পরামর্শ শুরুর আগে বেনকিরেদ আদালতে বলেন, 'আমি ক্ষমা চাই। আমি যা করেছি তা ভয়াবহ। আমার আর কিছু বলার নেই।'
বেনকিরেদ ফ্রান্সে একটি স্টুডেন্ট ভিসায় ছিলেন, কিন্তু এটি নবায়ন করতে ব্যর্থ হন। ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্যারিসের একটি বিমানবন্দরে তাকে আটক করা হয় এবং দেশ ছাড়ার জন্য ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়।
২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর বিকেলে ধারণ করা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তখন ২৪ বছর বয়সী বেনকিরেদ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর লোলার কাছে যান। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেনকিরেদ লোলাকে তার বড় বোনের ভাড়া করা একটি অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যান।
তারপর প্রায় দেড় ঘণ্টার মধ্যে বেনকিরেদ শিশুটিকে যৌন নির্যাতনের পর কাঁচি ও বক্স কাটার দিয়ে আক্রমণ করেন। পরে ডাক্ট টেপ দিয়ে তার হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলা হয়, ফলে শ্বাসরোধে মৃত্যু হয় লোলার।
