বামপন্থী শীর্ষ নেতাদের সমর্থন, তবুও কঠিন পরীক্ষার মুখে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী মামদানি
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানির নির্বাচনী প্রচারণাকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশাল সমাবেশ। রোববার (২৬ অক্টোবর) আয়োজিত এ সভায় অংশ নিচ্ছেন ডেমোক্র্যাটিক বামপন্থী ধারার দুই শীর্ষ নেতা- সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাশিও-কর্তেজ।
আগামী ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে মামদানি জয়ী হলেও, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর পরিচালনা এবং জাতীয় রাজনীতিতে তাদের উদারনৈতিক (লিবারেল) রাজনীতি যে কার্যকর সেটা প্রমাণ করার মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তাকে পড়তে হতে পারে।
স্যান্ডার্স, ওকাশিও-কর্তেজ ও তাদের গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক (ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট) সহযোগীরা এতদিন আইন প্রণয়নে প্রভাব বিস্তার, ডেমোক্র্যাটিক নীতিকে বাম আদর্শ দিয়ে প্রভাবিত করা এবং জাতীয় রাজনৈতিক আলোচনাকে প্রভাবিত করার ভূমিকা রাখলেও, নিউইয়র্কের মতো সিটির শক্তিশালী কোনো নির্বাহী পদ তারা এখনো দখল করতে পারেননি।
প্রায় এক দশক আগে স্যান্ডার্সের অপ্রত্যাশিত প্রেসিডেন্ট প্রাইমারি নির্বাচনে অংশগ্রহণ গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রীদের যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে নিয়ে আসে। পরে ২০১৮ সালে ওকাশিও-কর্তেজের অভূতপূর্ব বিজয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার দক্ষ প্রচারণা এ প্রভাবকে আরও বিস্তৃত করে।
এখন মামদানি যদি এ নির্বাচনে জয়ী হন, তবে তাদের নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের এটিই হবে সবচেয়ে বড় সুযোগ। তবে কিছু ডেমোক্র্যাটসহ মামদানির সমালোচকরা মনে করেন, তিনি গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতার উদাহরণ হতে পারেন।
মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি জোশ গটহাইমারের ভাষায়, 'এখানে দুটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে- এক, শহর পরিচালনার রুটিন কাজগুলো সামলানো এবং দুই, সমাজতান্ত্রিক-প্লাস প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করা। যার অধিকাংশই কেবল অসম্ভবই নয়, বরং একধরনের পাগলামিপূর্ণ প্রতিশ্রুতি।'
দেশটির অন্যান্য শহরে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রীরা সীমিত বাজেট, জোট গঠনের জটিলতা এবং প্রশাসনিক অদক্ষতার মতো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন।
তবু চারটি মূল নীতি প্রস্তাবের মাধ্যমে মামদানি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছেন। তিনি সার্বজনীন শিশুযত্ন, বিনামূল্যে বাস পরিষেবা, সিটি-মালিকানাধীন মুদি দোকান এবং ভাড়া-স্থিতিশীল অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া স্থগিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে ভোটাররা তাকে বিচার করবেন বাস্তব বিষয়গুলো দিয়ে- যেমন নগরের আবর্জনা পরিষ্কার, অপরাধ দমন, শিক্ষা ব্যবস্থা ও ইঁদুরের উপদ্রব নিরসন।
মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই মামদানি জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট। অতীতের অতিবাম অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পুলিশের প্রতি অতীতে করা বর্ণবাদী মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইবেন এবং বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের নিয়োগকৃত পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশকে পদে বহাল রাখবেন। এছাড়া, গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক ধারা থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করছেন তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে মামদানি বলেন, 'আমি একই সঙ্গে একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী এবং একজন ডেমোক্র্যাটও। একটি আমার রাজনৈতিক মতাদর্শ, অন্যটি আমার দলীয় পরিচয়।'
তবে বামপন্থী ও সমাজতান্ত্রিক আদর্শ থেকে পুরোপুরি সরে আসেননি তিনি। সমাবেশের মঞ্চে বার্নি স্যান্ডার্স ও ওকাশিও-কর্তেজের উপস্থিতিই তা স্পষ্ট করে। মামদানি একবার স্যান্ডার্সকে বর্ণনা করেছিলেন, 'আমার জীবনের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।'
স্যান্ডার্স ও ওকাশিও-কর্তেজ দুজনেই তার প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক সমর্থন দিচ্ছেন। তবে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রাজনীতিকদের অনেকে এখনো মামদানির প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেননি।
মামদানি ইঙ্গিত দিয়েছেন, নিজের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তিনি মতাদর্শিক ছাড় দিতে প্রস্তুত। ইতোমধ্যে তিনি সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু রাবাই (ইহুদি ধর্মগুরু) ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন- যারা পূর্বে তার প্রার্থিতার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, ধনীদের ওপর কর বাড়ানো ছাড়াও রাজস্ব সংগ্রহের বিকল্প উৎস খুঁজে দেখবেন।
এক প্রচারণা সভায় মামদানি বলেন, 'আমরা কেবল নভেম্বরের নির্বাচনে ভোটের আহ্বান জানাতে এখানে আসিনি। আমাদের একটি এজেন্ডা আছে, এবং আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা অবশ্যই আমাদের পূরণ করতে হবে।'
