জাতিসংঘ মহাসচিব পদে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা চায় যুক্তরাষ্ট্র, লাতিন আমেরিকার আপত্তির সম্ভাবনা
আগামী জাতিসংঘ মহাসচিব নির্বাচনে বিশ্বের যেকোনো অঞ্চল থেকে প্রার্থী বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার দেশটির পক্ষ থেকে এ ঘোষণা আসার পর ধারণা করা হচ্ছে, মহাসচিব পদে নিজেদের পালা এসেছে মনে করা লাতিন আমেরিকার দেশগুলো এতে ক্ষুব্ধ হতে পারে।
জাতিসংঘের ১০ম মহাসচিব আগামী বছর নির্বাচিত হবেন পাঁচ বছরের জন্য। নতুন মহাসচিবের মেয়াদ শুরু হবে ২০২৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, মহাসচিব পদটি অঞ্চলভিত্তিকভাবে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হয় এবং এবার সেই ক্রমানুসারে পালা লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের উপদূত ডরোথি শিয়া বলেন, 'এত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ যোগ্যতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত এবং প্রার্থীর পরিসর যতটা সম্ভব বিস্তৃত হওয়া দরকার। এই বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র সব আঞ্চলিক গোষ্ঠী থেকে প্রার্থী আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।'
এই নির্বাচন প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বছরের শেষ নাগাদ, যখন ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ ও ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট সাধারণ পরিষদের সভাপতি একযোগে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে মনোনয়নের জন্য চিঠি পাঠাবেন। সদস্য রাষ্ট্রগুলোই প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়।
শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে পানামার উপদূত রিকার্দো মোসকোসো বলেন, 'আমরা আশা করি এই প্রক্রিয়ায় উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা যথাযথভাবে স্বীকৃতি পাবে; বিশেষত লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে।' বর্তমানে পানামা নিরাপত্তা পরিষদের দুই বছরের মেয়াদে সদস্য হিসেবে রয়েছে।
তবে শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স ও রাশিয়ার সম্মতিতেই প্রার্থী নির্বাচিত হবেন।
'যোগ্যতা লিঙ্গের আগে', বলছে রাশিয়া
জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, 'মহাসচিব পদটি অঞ্চলভিত্তিকভাবে পর্যায়ক্রমে দেওয়ার বিষয়টি প্রথা; তবে বাধ্যতামূলক কোনো নিয়ম নয়।'
তিনি বলেন, 'লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর নৈতিক অধিকার আছে এবার তাদের প্রার্থী দেওয়ার। তবে অন্য অঞ্চল থেকেও কেউ চাইলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যোগ্যতা।'
নেবেনজিয়া আরও বলেন, 'যোগ্যতার ভিত্তিতে কোনো নারী বিজয়ী হলে আমার আপত্তি নেই, তবে যোগ্যতাই প্রথম; লিঙ্গ পরিচয় পরে।'
এদিকে জাতিসংঘের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো নারী মহাসচিব নির্বাচনের আহ্বানও জোরদার হয়েছে।
ডেনমার্কের জাতিসংঘ রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিনা মার্কুস লাসেন বলেন, '৮০ বছর পর এবার কোনো নারীকে এই সংস্থার নেতৃত্বে দেখার সময় এসেছে।' বর্তমানে ডেনমার্কও নিরাপত্তা পরিষদের দুই বছরের মেয়াদী সদস্য।
আন্তর্জাতিক সংকটগোষ্ঠীর জাতিসংঘ বিষয়ক পরিচালক রিচার্ড গোয়ান বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারছে, আগামী মহাসচিব নির্বাচনের মাধ্যমে জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের বড় সুযোগ তাদের হাতে এসেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বিষয়টি কিছুটা বৈপরীত্যপূর্ণ। জাতিসংঘের ভেতরের অনেকেই একমত হবেন যে যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচন প্রয়োজন, কিন্তু তারা চিন্তিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্র কি এমন কাউকে চাইছে যিনি বহুপাক্ষিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী, নাকি এমন কাউকে, যিনি জাতিসংঘকে আরও সংকুচিত করতে চান। তবে আমি লাতিন আমেরিকানদের বাদ দেব না। তারা একটি ব্লক হিসেবেই জোরালো লবিং করবে, যাতে এবার তাদের প্রার্থীই সুযোগ পায়।'
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগিতা এখনো শুরু হয়নি, তবুও চিলি ইতিমধ্যে তাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল বাশেলেটকে প্রার্থী করার ঘোষণা দিয়েছে এবং কোস্টারিকা মনোনীত করতে চায় দেশটির সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি রেবেকা গ্রিনস্প্যানকে।
