চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আগামী মাস থেকে তিনি চীন হতে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যারের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণও আরোপ করবে।
এর আগে শুক্রবারের একটি পোস্টে তিনি বিরল মৃত্তিকা রপ্তানির নিয়মে কড়াকড়ি করায় বেইজিংয়ের কড়া সমালোচনা করেন। চীন 'ভীষণ বৈরী' হয়ে উঠছে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বেইজিং 'বন্দি' করে রাখার চেষ্টা করছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করার হুমকিও দেন ট্রাম্প। পরে অবশ্য তিনি বলেন যে বৈঠকটি বাতিল করেননি, তবে এটি আদৌ 'হবে কি না', তা জানেন না। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'যা-ই হোক না কেন, আমি সেখানে থাকব।'
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর আর্থিক বাজারে ধস নেমেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২.৭ শতাংশ পড়ে যায়, যা এপ্রিলের পর সবচেয়ে বড় পতন।
বিরল মৃত্তিকাসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উৎপাদনে চীনের একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে। এসব পদার্থ গাড়ি, স্মার্টফোনসহ অন্যান্য অনেক পণ্যের অপরিহার্য উপাদান।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্প যখন চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছিলেন, তখন বেইজিং বিরল মৃত্তিকা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপ করে। ফলে এসব পদার্থের ওপর নির্ভরশীল অনেক মার্কিন সংস্থা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। গাড়ি নির্মাতা ফোর্ডকেও সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছিল।
বিরল মৃত্তিকা রপ্তানির নিয়ম কঠোর করার পাশাপাশি চীন মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থা কোয়ালকমের বিরুদ্ধে একচেটিয়া আধিপত্যের তদন্ত শুরু করেছে। কোয়ালকম যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হলেও তাদের ব্যবসার একটি বড় অংশ চীনকেন্দ্রিক।
বেইজিং আরও জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলোর ওপর নতুন বন্দর মাশুল আরোপ করবে। এর মধ্যে মার্কিন সংস্থাগুলোর মালিকানাধীন বা পরিচালিত জাহাজও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, 'চীনে খুব অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটছে! তারা ভীষণ বৈরী হয়ে উঠছে।'
গত মে মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভঙ্গুর বাণিজ্য সমঝোতা চলছে। সে সময় উভয় পক্ষ একে অপরের পণ্যের ওপর থেকে শতভাগের ওপরের শুল্ক প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়েছিল। ওই শুল্কের কারণে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
এই পদক্ষেপের পর বছরের শুরুর তুলনায় চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত মার্কিন শুল্ক অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে চীনে প্রবেশকারী মার্কিন পণ্যকে নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্কের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এরপর থেকে টিকটক, কৃষিপণ্য ক্রয়, বিরল মৃত্তিকা ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো উন্নত প্রযুক্তির বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে কর্মকর্তারা একাধিকবার আলোচনা করেছেন। এ মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি সম্মেলনে দুই পক্ষের আবার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ফেলো ও চীন বিশেষজ্ঞ জনাথন জিন বলেন, শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো মূলত আসন্ন আলোচনাকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা। বিরল -সংক্রান্ত সাম্প্রতিক নির্দেশনাটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না।
তিনি বলেন, 'শি আলোচনার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেওয়ার পথ খুঁজছেন। ট্রাম্প প্রশাসনকে এখন একের পর এক গজিয়ে ওঠা সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবিলার মতো নাজুক খেলায় নামতে হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে চীনে চিন্তিত মনে হয় না তার। 'লিবারেশন ডে-র শুল্ক ও উত্তেজনা হ্রাস-বৃদ্ধির চক্র থেকে চীন শিক্ষা নিয়েছে, তাদের কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বেশি। চীনের দৃষ্টিকোণ থেকে, ট্রাম্প প্রশাসনই প্রথমে পিছু হটেছে।'
আগের বাণিজ্য আলোচনাগুলোতে চীন সেমিকন্ডাক্টরের ওপর মার্কিন বিধিনিষেধ শিথিল করার জন্য চাপ দিয়েছে। এছাড়াও তারা স্থিতিশীল শুল্ক নীতি নিশ্চিত করতে আগ্রহী, যা তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য বিক্রি সহজ করবে। শি অতীতেও বিরল মৃত্তিকা উৎপাদনে তার দেশের আধিপত্যকে দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।