চারুকলার পর গেন্ডারিয়া—আয়োজক 'ফ্যাসিবাদের দোসর' অভিযোগে স্থগিত 'শরৎ উৎসব'

বিভিন্ন পক্ষের 'আপত্তি'র মুখে দুটি ভিন্ন ভেন্যুতে স্থগিত হয়েছে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর 'শরৎ উৎসব ১৪৩২'। প্রতি বছরের মতো এবারও আজ (১০ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় উৎসবটি আয়োজনের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল।
তবে আয়োজকদের একজন 'ফ্যাসিবাদের দোসর'—এমন অভিযোগের পর 'বিশৃঙ্খলা এড়াতে' গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠান স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় অনুষদ কর্তৃপক্ষ। 'বৈষম্যবিরোধী ফ্যাসিবাদ বিরোধী লেখক সাংবাদিক ফোরাম' নামে একটি সংগঠন এই অভিযোগ করেছে বলে জানিয়েছেন চারুকলা অনুষদের ডিন।
পরে বিকল্প হিসেবে গেন্ডারিয়ার কচিকাঁচার মেলার প্রাঙ্গণে উৎসবের ব্যবস্থা করা হলেও সেখানে 'বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় পুলিশ আয়োজন স্থগিত করে দেয়' বলে জানান আয়োজকরা। শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণকারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে গান গেয়ে এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন। এছাড়া সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভিনের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং পূর্বসূচি অনু্যায়ী হয় শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
আয়োজনের বিষয়ে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতকাল সন্ধ্যা ৬টার সময় জানিয়েছে, এখানে আয়োজন করা যাবে না, "গোলযোগ" হওয়ার আশঙ্কা আছে। আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ ছিল। বাধ্য হয়ে আমরা চারুকলা থেকে চলে আসি গেন্ডারিয়ায় কচিকাঁচার মেলার মাঠে। সেখানেও দেখি পুলিশের ঝামেলা সকালে। এখানে এরকম বলা হয়েছে—নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো দলের সমাবেশ নাকি সভা আছে এখানে।'
'প্রকৃতির মধ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত কিছু নাই। প্রকৃতি আসে প্রকৃতি যায়। আমরা প্রকৃতির বন্দনা নিয়ে কাজ করি। এরকম বিষয়টা বন্ধ করে কার লাভ হলো, আমি জানি না', যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, 'প্রায় ১৯ বছর ধরে চলা এই শরৎ উৎসব কোনো রাজনৈতিক আয়োজন নয়। ভুঁইফোড় অনেক সংগঠন এসব আয়োজনকে কুক্ষিগত করতেই নানান ষড়যন্ত্র করছে। তবে প্রকৃতি নিজের নিয়মেই তাদের জবাব দেবে।'
অনুমতি স্থগিত প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা যেন না ঘটে সে কারণে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছে। চারুকলা অনুষদ তো অনুমতি দিয়েছিল। অনুমতি দেওয়ার পরই তো আজ প্রোগ্রাম হওয়ার কথা ছিল—উনারা সবকিছু প্রস্তুত করেছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'এই অনুষ্ঠানের যারা আয়োজক তাদের একজনের বিরুদ্ধে গতকাল সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করেছে "বৈষম্যবিরোধী ফ্যাসিবাদ বিরোধী লেখক সাংবাদিক ফোরাম"। তারা জানিয়েছে, যারা আয়োজক তাদের একজন "ফ্যাসিবাদের দোসর"। তাদের [অভিযোগকারী] অনেক লোকজন আসছে, বলেছে এ প্রোগ্রাম করতে দিয়েন না। এ কারণে আমরা স্থগিত করেছি, প্রোগ্রাম বাতিল করিনি।'
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আগামীকাল শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও চারুকলা অনুষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ডিন। সভায় উৎসবের আয়োজকদেরও ডাকা হয়েছে।