৪৮ ঘণ্টা ব্ল্যাকআউটের পর আফগানিস্তানে ফিরল ইন্টারনেট; কাবুলের রাস্তায় আফগানদের উদযাপন

আফগানিস্তানে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা পুনরায় চালু হওয়ায় রাস্তায় নেমে আনন্দ প্রকাশ করেছে স্থানীয় মানুষ। তালেবান সরকার সেবাগুলো বন্ধ করার পর এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। খবর বিবিসি'র।
স্থানীয় সংবাদদাতারা জানান, যোগাযোগ সেবা আবার চালু হচ্ছে। ইন্টারনেট পর্যবেক্ষক সংস্থা নেটব্লক্স জানায়, নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী আংশিকভাবে সংযোগ পুনঃস্থাপিত হয়েছে।
সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, তালেবান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশজুড়ে ইন্টারনেট চালু হয়েছে।
৪৮ ঘণ্টার এই অচলাবস্থায় দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিমান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে, জরুরি সেবা সীমিত হয়ে যায় এবং নারী ও কিশোরীদের আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই নারীদের অধিকার মারাত্মকভাবে খর্বিত হয়েছে।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কাবুলে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে জানান, তারা আবার ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন। সেখানকার একজন বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, 'সবার মুখে আনন্দ। সবাই ফোন হাতে নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছে। নারী-পুরুষ, এমনকি তালেবান যোদ্ধারাও ফোনে কথা বলছিল। এখন শহরে ভিড় বেড়েছে।'
কাতারে অবস্থানরত তালেবানের জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র সুহাইল শাহীন বলেন, বুধবার বিকেলের মধ্যেই 'সব ধরনের যোগাযোগ' পুনরায় চালু করা হয়েছে। তবে এ বন্ধের কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি তালেবান সরকার।
গত মাসে বালখ প্রদেশে তালেবান গভর্নরের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, 'অশ্লীলতা প্রতিরোধে' ইন্টারনেট বন্ধ করা হচ্ছে। ক্ষমতায় ফেরার পর তালেবান শরিয়াহ আইনের নিজেদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নানা বিধিনিষেধ জারি করেছে।
আরও পড়ুন: ইন্টারনেট বন্ধ করে দিল তালেবান সরকার, আফগানিস্তানজুড়ে টেলিযোগাযোগ ব্ল্যাকআউট
আফগান নারীরা জানান, ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করার পর বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল ইন্টারনেট। কর্মসংস্থানও কঠোরভাবে সীমিত করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে নারী লেখকদের লেখা বই সরিয়ে নেওয়া হয়।
সোমবার ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার পর আফগানিস্তান কার্যত বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, এ ধরনের ব্ল্যাকআউট দেশের অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং ভয়াবহ মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করবে।
ব্ল্যাকআউটের সময় কাবুলের কেন্দ্র ছিল অস্বাভাবিক নীরব। ব্যাংক বন্ধ ছিল, শপিং সেন্টার ফাঁকা। মুদ্রা বিনিময় বাজারে আন্তর্জাতিক লেনদেন থেমে যায়। ফলে প্রবাসীদের পাঠানো জরুরি অর্থ দেশে পৌঁছায়নি। ভ্রমণ এজেন্সিগুলোও বন্ধ ছিল বা কেবল আংশিক সেবা দিচ্ছিল। দেশের ভেতরে ও বাইরে সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল হয়।
একজন দোকানদার বিবিসিকে বলেন, 'এ যেন ধীরে ধীরে মৃত্যুর মতো। যখন কোনো আশাই থাকে না, উন্নতির সুযোগ নেই, কথা বলার স্বাধীনতা নেই, সন্তানের ভবিষ্যতের আশা নেই, ব্যবসায় স্থিতিশীলতা নেই, শিক্ষার কোনো ফল নেই— তখন জীবনকে এমনই মনে হয়।'
তবে বুধবার পরিস্থিতি পাল্টায়। মানুষ আবার ইন্টারনেট ব্যবহার ও ফোনে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়।
ডেলিভারি ড্রাইভার সোহরাব আহমাদি বলেন, 'এটা ঠিক কোরবানির ঈদের মতো; নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতির মতো। আমরা অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে খুশি।'
২৪ বছর বয়সী মাহ, যিনি ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে এখন যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করছেন, জানান পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পেরে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি বলেন, 'মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় আমি কেঁদেছি, তবে খুশিতেও কেঁদেছি। অন্তত আমি তার কণ্ঠস্বর শুনতে পেরেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'আপনি জানেন না আফগানিস্তানে এরপর কী ঘটবে, কারণ কিছুই নিয়ন্ত্রণে নেই।'