প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের অফিসে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীদের ভাঙচুর-আগুন, আজ পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে না
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দৈনিক প্রথম আলোর অফিসের কয়েকটি তলায় ভাঙচুর করেছে ক্ষুদ্ধ জনতা, দেওয়া হয়েছে আগুন। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের কার্যালয়েও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই হামলা চালায়।
বিক্ষোভকারীরা ডেইলি স্টারের কার্যালয়েও আগুন দেয়, যা ভয়াবহভাবে ছড়াতে শুরু করে। পরে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি এসে আগুন নেভাতে সমর্থ হয়। আগুন লাগার সময় অফিসের ভেতরে আমাদের অনেকেই আটকা পড়েন বলে জানা যায়।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, "ডেইলি স্টারের ছাদে ৩০ জনের মত সাংবাদিক আটকে আছে।"
পরে ফায়ার সার্ভিসের ক্রেন দিয়ে তাদের উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়।
জানা যায়, আগুন লাগানোর আতঙ্কিত হয়ে ছাদে চলে যান ভেতরে অবস্থানকারী সংবাদকর্মীরা। ডেইলি স্টারের আহমেদ দিপ্ত ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড দেন। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, "এমন লেট নাইট ডিউটি যেন কারও জীবনে না আসুক। ছাদে আটকা পড়ছি, মাফ কইরা দিয়েন। ভবনে আগুন দিছে, দেখা নাও হতে পারে।"
আগুনের ধোঁয়ায় ভেতরে থাকা অনেকেই এসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন।
রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পোঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদীর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর ছাত্র-জনতার একটি অংশ শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে কারওয়ান বাজারের দিকে অগ্রসর হয়। মিছিলটি প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে পৌঁছে ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
রাত ১১টার দিকে ক্ষুদ্ধ বিক্ষোভকারীরা প্রথম আলোর কার্যালয়ের দিকে আসে, এবং পরে ভবনটিকে ঘিরে ফেলে। এসময় কিছু তরুণ চারতোলা ভবন বেয়ে ওঠে, এবং ফ্লোরগুলোয় ভাঙচুর শুরু করে।
হামলায় কার্যালয়ের বেশিরভাগ জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়। পরবর্তীতে রাত ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে টেবিল-চেয়ার ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বাইরে রাস্তায় বের করে নিয়ে আসে এবং সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
https://www.facebook.com/share/v/1ESg5owSF3/
প্রথম আলো'র অন্তত দুইজন সংবাদকর্মী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) মুঠোফোনে এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, হামলার পর থেকে এখনো প্রথম আলো কার্যালয়ের ভেতরে অনেক সংবাদকর্মী ও কর্মকর্তা আটকা পড়ে আছেন। এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে ডেইলি স্টার কার্যালয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সময় বিক্ষোভকারীদের 'ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ', 'নারায়ে তাকবীর' সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রাত ২টায় পাওয়া সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, এখনও শাহবাগে অবস্থান করছে বিক্ষোভকারীরা।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (২টা ৫ মিনিট) এখনও শাহবাগে দু'পাশে আলাদাভাবে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন এনসিপি ও ডাকসু -ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।
শাহবাগে জুলাই মিনারের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। এসময় আসিফ মাহমুদ, মাহফুজ আলম, এনসিপির আহবায়ক নাহিদ হোসেন, নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সালেহ উদ্দীন সিফাতকে দেখা গেছে।
এসময় তারা, 'যে হাত মানুষ মারে, সে হাত ভেঙে দাও' 'তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ', 'গোলামী না আজাদী, আজাদী আজাদী', 'দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা', 'লীগ ধর, জেলে ভর', 'ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাড়াও জনগণ'সহ নানা স্লোগান দেন।
অন্যদিকে শাহবাগ মোড়ের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছে ডাকসু ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। এসময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম, সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের, পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক আসিফ আবদুল্লাহকে দেখা গেছে।
শুক্রবার প্রকাশ হচ্ছে না প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা, অনলাইন কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ
হামলার কারণে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আজ শুক্রবার প্রকাশ হচ্ছে না প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা। গণমাধ্যম দু'টির অনলাইন কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিবিসি বাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পত্রিকা দু'টির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
তারা জানিয়েছেন, রাতে আকস্মিকভাবে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর কর্মীদের সবাইকে দ্রুত অফিস ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় পত্রিকা অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে শুক্রবার ছাপা পত্রিকা বের করা সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়া আপাতত অনলাইন স্থবির হয়ে পড়েছে। হামলার আগে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে দুটি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে খবর প্রকাশ পেয়েছে।
