ফাঁকি কমাতে এলপিজির আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নিচ্ছে এনবিআর
ভ্যাট ফাঁকি কমাতে এলপিজির স্থানীয় উৎপাদন ও বিপণনের বিভিন্ন পর্যায়ে বর্তমানে আরোপিত ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
পাশাপাশি এলপিজির স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট, ব্যবসায়ী পর্যায়ের ভ্যাট এবং আগাম করও অব্যাহতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি।
এনবিআরের এ উদ্যোগ অনুমোদনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে একটি প্রস্তাব তোলা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) খাত থেকে রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আনা এবং ভ্যাট ফাঁকি কমাতে স্থানীয় পর্যায়ের দুই–তিনটি ধাপে ভ্যাট আদায় ব্যবস্থা বাতিল করে কেবল আমদানি পর্যায়েই ভ্যাট আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের দুই কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, স্থানীয়ভাবে মূল্য সংযোজনের বিভিন্ন ধাপে বর্তমানে যে মোট ভ্যাট আদায় হয়, প্রস্তাবিত ১০ শতাংশ আমদানি পর্যায়ের ভ্যাটের পরিমাণ তার কাছাকাছি।
এক কর্মকর্তা বলেন, "নতুন ভ্যাট কাঠামোর ফলে ভোক্তাদের ওপর অতিরিক্ত কোনো ব্যয় চাপানো হবে না। তবে বর্তমান নন-কমপ্লায়েন্স গ্যাপ কমলে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে।"
বর্তমানে এ খাত থেকে এনবিআর বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, "দেশে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি এলপিজি আমদানি ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এই খাতে একাধিক স্তরে ভ্যাট আদায় ও রিফান্ড ব্যবস্থার কারণে নন-কমপ্লায়েন্স রয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে প্রকৃত ভ্যালু এডিশনের তথ্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না। ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।"
বাজারে প্রভাব ও সরবরাহ
ভ্যাট আদায়ের হার ও পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির দাম বাড়ার আশঙ্কা আছে কি না—এমন প্রশ্নে এনবিআরের ওই কর্মকর্তা বলেন, "ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কারণ বর্তমানে সরকার সব মিলিয়ে যে হারে রাজস্ব আদায় করছে, প্রস্তাবিত ব্যবস্থাতেও একই হারে আদায়ের কথা বলা হয়েছে।"
দেশে প্রতি মাসে এক থেকে দেড় লাখ টন এলপিজির চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং বাসাবাড়িতে নতুন পাইপলাইন গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় এলপিজির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
একই সঙ্গে গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না থাকায় শিল্পকারখানাতেও এ গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ এলপিজি আমদানি করতে হয়, যা মূলত কাতার, কুয়েত ও ইরান থেকে আসে।
দেশে সরবরাহ করা এলপিজির প্রায় ৮১ শতাংশ গৃহস্থালি কাজে, বিশেষ করে রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি শিল্প, বাণিজ্যিক এবং পরিবহন খাতেও (অটোগ্যাস) এর ব্যবহার রয়েছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতি মাসে এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণ করে, যা চাহিদা ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। বর্তমানে ১২ কেজি সিলিন্ডারের গ্যাসের দাম ১ হাজার ২৫৩ টাকা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাটের হার ও আদায় পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার ফলে আমদানিকারকদের মোট খরচ কমবে। এতে ব্যবসায়ীরা চাইলে গ্রাহকদের জন্য দাম কমিয়ে স্বস্তি দিতে পারবেন।
এ খাতের ব্যবসায়ীরাও সরকারের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব)-এর সভাপতি মোহাম্মদ আমিরুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট আদায় করলে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট আদায়ের ঝামেলা থাকবে না। এতে সরকারের কাজ সহজ হবে, একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের হিসাব সংরক্ষণের জটিলতাও কমবে।"
তিনি আরও বলেন, "বর্তমানে কিছু নন-কমপ্লায়েন্ট কোম্পানির কারণে স্থানীয় পর্যায়ের ভ্যাট হিসাবে অসঙ্গতি দেখা যায়। দু-একটি প্রতিষ্ঠানের এমন অনিয়মের জন্য পুরো খাতের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ ওঠে। নতুন এই ব্যবস্থায় এসব সমস্যা দূর হবে এবং অসম বাণিজ্যও কমে আসবে।"
