হাদি হত্যাচেষ্টা মামলা: পুলিশের গাফিলতিতে কি ভুল ব্যক্তি রিমান্ডে?
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পুলিশের তদন্তে বড় ধরনের গাফিলতি প্রকাশ পেয়েছে, যা তাদের কর্মপদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিভিন্ন আলামত থেকে জানা গেছে, হামলার পর মোহাম্মদপুর থেকে আব্দুল হান্নানকে ভুলভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, হাদিকে গুলি করার সময় ব্যবহৃত সুজুকি জিক্সার মোটরসাইকেলটি তার। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী তখন এই গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছিলেন।
তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট পরে জানায়, হামলায় ব্যবহৃত আসল মোটরসাইকেলটি ছিল হোন্ডা হর্নেট (কমলা-সিলভার রঙের, ঢাকা মেট্রো ল-৫৪-৬৫৭৪)। হামলাকারীরা এতে একটি ভুয়া নম্বর প্লেট (ঢাকা মেট্রো ল-৫৪-৬৩৭৬) লাগিয়েছিল। রেজিস্ট্রেশন নম্বরের এই বিভ্রান্তির কারণে র্যাব হান্নানের গাড়িটিকে হামলাকারীর গাড়ি মনে করে ভুল গ্রেপ্তার করেছিলেন।
১৪ ডিসেম্বর সকাল পৌনে ৯টার দিকে শেরেবাংলা নগর থানার বনলতা আবাসিক এলাকা থেকে সিটিটিসি ওই মোটরসাইকেল, হেলমেট এবং ভুয়া নম্বর প্লেট উদ্ধার করে। মোটরসাইকেলটি একটি ভবনের পার্কিং এলাকা থেকে এবং নম্বর প্লেটটি পাশের একটি ম্যানহোল থেকে পাওয়া যায়।
ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে এগুলো উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নম্বর প্লেটটি ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল। তদন্তকারীরা বাইকের মালিকানার ইতিহাস ঘেঁটে দেখেন, এটি আটবার হস্তান্তর হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, বাইকটি মঈনুদ্দিন ইসলামের সঙ্গে যুক্ত, যিনি এই মামলার প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের সহযোগী মো. কবিরের আইডি ব্যবহার করে বাইকটি কিনেছিলেন। উদ্ধারকৃত আলামতগুলো পরবর্তী তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অপর দিকে, হান্নান ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, তিনি মোটরসাইকেলটি একটি সেকেন্ড-হ্যান্ড শোরুমে বিক্রি করেছিলেন, কিন্তু তার অসুস্থতার কারণে মালিকানা বদল বা নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শেষ করেননি।
আদালতে তিনি বলেন, 'পুলিশ যখন আমাকে গ্রেপ্তার করে, আমি তাদের বলেছিলাম বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করতে এবং প্রয়োজনে আমাকে ওই শোরুমে নিয়ে যেতে। কিন্তু তারা তা করেনি।' বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শুনানির সময় তাকে আইনি সহায়তার জন্য কোনো আইনজীবী দেওয়া হয়নি।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে শুনানি করেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী এবং অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) শামসুদ্দোহা সুমন। শুনানিকালে এপিপি সুমন উল্লেখ করেন, নিবন্ধনের নথিপত্রে হান্নানকেই মোটরসাইকেলটির মালিক হিসেবে দেখাচ্ছে। তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে অভিযোগ করেন যে, অতীতের বিভিন্ন ঘটনাতেও হান্নানের সম্পৃক্ততা ছিল। রাষ্ট্রপক্ষ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানালেও আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
র্যাব ও সিটিটিসির দেওয়া তথ্যের এই বৈপরীত্য মামলার তদন্তের মান ও গভীরতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসির কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। অন্যদিকে র্যাবের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
পিপি ফারুকী জানান, রেজিস্ট্রেশন নম্বরের গরমিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন জমা দিলেই আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
