ট্রাম্প আরও অস্ত্র পাঠানোর প্রতিশ্রুতির পর ইউক্রেনে ৭০০ ড্রোন হামলা চালালো রাশিয়া

রাশিয়া বুধবার ভোরে ইউক্রেনের ওপর রেকর্ডসংখ্যক ৭২৮টি ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে। এখন পর্যন্ত একক হামলায় এবারই সবচেয়ে বেশি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিয়েভকে আরও প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র সরবরাহের অঙ্গীকার করেন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অস্বাভাবিকভাবে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এটি ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলা বিমান হামলার সর্বশেষ ঘটনা, যেখানে শত শত ড্রোনের পাশাপাশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব হামলা ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বড় ধরনের চাপের মুখে ফেলছে।
কিয়েভের সামরিক বাহিনী প্রায় সব ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে, তবে রাশিয়ার ছোড়া ছয়টি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কিছু ক্ষতি হয়েছে বলে ইউক্রেনীয় টেলিভিশনে জানিয়েছেন বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহনাত। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পশ্চিম ইউক্রেনে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষে একজন নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা সামরিক বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি, ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত দোনেতস্ক অঞ্চলের ফ্রন্টলাইনে ড্রোন ও গাইডেড বোমার হামলায় আটজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলোর এক বৈঠকের আগে রোমে মার্কিন দূত কিথ কেলগের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন। জেলেনস্কি বলেন, এই হামলা দেখিয়ে দিচ্ছে রাশিয়ার আয়ের ওপর 'কঠোর নিষেধাজ্ঞা' আরোপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে — বিশেষ করে যেসব দেশ রাশিয়ার তেল কিনছে, তাদের ওপরও।
জেলেনস্কি পোপ লিওর সাথেও সাক্ষাৎ করেন। পোপ ভ্যাটিকানে শান্তি আলোচনা আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন। জেলেনস্কি বলেন, এ ধরনের আলোচনা 'সম্পূর্ণ সম্ভব' হলেও রাশিয়া এখন পর্যন্ত তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের একটি বিলের পক্ষে সমর্থন দেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন, যেখানে রাশিয়ার তেল, গ্যাস, ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য রপ্তানি পণ্য কিনে এমন দেশের ওপর ৫০০% শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রয়েছে।
একটি মন্ত্রিসভা বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, 'পুতিন আমাদের অনেক বাজে কথা শোনায়... কিন্তু সবসময় ভদ্র ব্যবহার করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেগুলো কোনো অর্থ বহন করে না।' এক সাংবাদিক যখন তাকে জিজ্ঞাসা করেন, পুতিনের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেবেন, তখন ট্রাম্প বলেন, 'আমি তা আপনাকে বলব না। আমরা চমক রাখতে চাই।'
এদিকে, ইউরোপও মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন একটি নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ নিয়ে কাজ করছে।
২০২২ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ বছর ক্ষমতায় ফিরে আসা ট্রাম্প মস্কোর প্রতি তুলনামূলকভাবে আরও সমঝোতামূলক অবস্থান নিয়েছেন — যা তার পূর্বসূরি জো বাইডেনের প্রশাসনের কিয়েভের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের বিপরীত।
কিন্তু এখন পর্যন্ত রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি, কারণ ট্রাম্প যে শর্তহীন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং যেটি কিয়েভ গ্রহণ করেছে, তা মস্কো এখনও মেনে নেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র সরবরাহের অঙ্গীকার পেন্টাগনের কয়েক দিন আগের একটি সিদ্ধান্তকে উল্টে দিয়েছে — যেখানে ইউক্রেনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গোলাবারুদ সরবরাহ স্থগিত রাখার কথা বলা হয়েছিল, যদিও সাম্প্রতিক রুশ হামলায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছে।
বুধবারের হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেন, যুদ্ধ সমাধানে কূটনৈতিক পথ এখন প্রায় শেষ। তিনি কিয়েভকে সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।
মের্ৎস আরও বলেন, তিনি বৃহস্পতিবার রোমে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে ইউক্রেনকে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার প্রস্তাব দেবেন।
কিয়েভ ও অন্যান্য বড় শহরের বাসিন্দারা হামলার কারণে রাতটা আশ্রয়কেন্দ্রে, এমনকি মেট্রো স্টেশনেও কাটিয়েছেন।
রাশিয়ার রাতের হামলার একটি অংশ ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল, যা ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের সীমান্তের কাছাকাছি। জেলেনস্কি জানান, প্রধান লক্ষ্য ছিল উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লুতস্ক, যা পোল্যান্ড থেকে প্রায় ২০০ কিমি (১২৫ মাইল) দূরে অবস্থিত। তিনি আরও জানান, ইউক্রেনজুড়ে আরও ১০টি প্রদেশে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
পোল্যান্ডের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, আকাশপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পোল্যান্ড ও মিত্রদেশগুলোর যুদ্ধবিমান উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
লুতস্কে ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে যুদ্ধ শুরুর পর শহরের ওপর সবচেয়ে বড় বিমান হামলা — তবে কোনো প্রাণহানি বা আহতের খবর পাওয়া যায়নি। লুতস্ক শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ।
শহরের মেয়র ইহোর পলিশচুক বলেন, একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের গুদাম ও কিছু পার্কিং স্থাপনা আগুনে পুড়ে গেছে।
ভোলিন অঞ্চলের (যেখানে লুতস্ক অবস্থিত) গভর্নর ইভান রুদ্রনিত্সকিই জানান, রাতে প্রায় ৫০টি রাশিয়ান ড্রোন ও পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র এ অঞ্চলের আকাশপথে প্রবেশ করেছিল।