‘এত ভালো ইংরেজি!’: লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্প; তবে ক্ষুব্ধ ও বিভ্রান্ত লাইবেরিয়ানরা

লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোয়াকাইয়ের ইংরেজি দক্ষতা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যে ক্ষোভ ও বিভ্রান্তি প্রকাশ করেছেন দেশটির নাগরিকরা।
বুধবার হোয়াইট হাউজে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ট্রাম্প বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, '[আপনার]ইংরেজি এত ভালো! খুব সুন্দর ইংরেজি।'
উল্লেখ্য, ১৮০০-এর সময় থেকেই পশ্চিম আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়ার সরকারি ভাষা ইংরেজি। তবে ট্রাম্প এখানেই থেমে থাকেননি।
ট্রাম্প আরও বলেন, 'আপনি এত সুন্দরভাবে কথা বলতে শিখলেন কোথায়? কোথায় পড়াশোনা করেছেন? লাইবেরিয়াতেই?'
ওই দিন হোয়াইট হাউজে পাঁচজন পশ্চিম আফ্রিকান নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে সাহায্য নয়, বাণিজ্য—এই কৌশলগত পরিবর্তনের বিষয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
দীর্ঘদিন ধরেই লাইবেরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দাসদের আফ্রিকায় পুনর্বাসনের পরিকল্পনার মাধ্যমেই গড়ে ওঠে এই সম্পর্ক।
লাইবেরিয়ার বিরোধী দল কংগ্রেস ফর ডেমোক্রেটিক চেঞ্জ-কাউন্সিল অব প্যাট্রিয়টসের চেয়ারম্যান ফোডে মাসাকুইও বলেন, 'এটি ট্রাম্পের বৈশ্বিক নেতাদের সঙ্গে আচরণের একটি চিরাচরিত ধরন হলেও, যেহেতু আলোচ্য নেতারা আফ্রিকান, তাই এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।'
তিনি বলেন, 'এটি আবারও প্রমাণ করে যে পশ্চিমারা আমাদের, আফ্রিকানদের, গুরুত্ব সহকারে নেয় না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অসম্মানজনক আচরণ করেছেন। তিনি আফ্রিকান নেতার প্রতি অত্যন্ত অবজ্ঞাসূচক ছিলেন।'
তবে লাইবেরিয়া প্রেসিডেন্টের দপ্তরের মুখপাত্র কুলা ফোফানা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, 'সাংবাদিক হিসেবে আপনারা সম্মেলনের গঠনমূলক আলোচনা নিয়ে ফোকাস করুন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য ও তার স্পষ্ট উপস্থাপনাকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশংসা করেছেন—এটি ইতিবাচক। তবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও জোরালো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়টিতেই অগ্রাধিকার দিচ্ছি।'
লাইবেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারা বেসলো নাইয়ান্তি এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেন, 'ট্রাম্পের মন্তব্যটি আমাদের আমেরিকান-প্রভাবিত উচ্চারণ ও ভাষাগত ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা, এবং এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।'
তিনি আরও লেখেন, 'আমাদের ভাষাগত ঐতিহ্য আমেরিকান সংস্কৃতিতে গভীরভাবে প্রভাবিত। ট্রাম্প সেটিই স্বীকার করেছেন মাত্র। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন মূল্যবোধ ও অর্থবহ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে আমরা যুক্তরাষ্ট্র-লাইবেরিয়া সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
তবে অনেক লাইবেরিয়ানের জন্য ট্রাম্পের এই মন্তব্য দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠা এক ধরনের বিশ্বাসভঙ্গের অনুভূতিকে আরও জোরদার করেছে।
চলতি মাসের শুরুতেই ট্রাম্প প্রশাসন ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) বাতিল করে এবং জানিয়ে দেয়, তারা আর 'দানভিত্তিক বৈদেশিক সহায়তা মডেল' অনুসরণ করবে না।
এই সিদ্ধান্ত লাইবেরিয়ায় দারুণ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। কারণ, দেশটির মোট জাতীয় আয়ের প্রায় ২.৬ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা থেকে আসে। সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট এর মতে, এটি বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ।
বহু লাইবেরিয়ান মনে করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কারণে তাদের উপর এই বোঝা চাপানো হবে না। দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থা, পতাকা এমনকি রাস্তাঘাটের সাইনবোর্ড, ট্যাক্সি ও স্কুলবাসের নকশাও যুক্তরাষ্ট্রের আদলে তৈরি।
'অবজ্ঞাপূর্ণ ও বিদ্রূপাত্মক'
লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ উইয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সিওকিন সিভিকাস বার্সি-জিয়াহ বলেন, 'লাইবেরিয়া একটি ইংরেজিভাষী দেশ। প্রাক্তন দাস এবং দাস-মালিকেরা একত্রিত হয়ে যারা দাসত্বে ছিল, তাদের মুক্ত করতে এই দেশ প্রতিষ্ঠা করেন।'
তার মতে, ট্রাম্পের বক্তব্য 'অবজ্ঞাপূর্ণ ও বিদ্রূপাত্মক' ছিল।
'জোসেফ বোয়াকাইকে প্রশংসা করা হয়নি, তাকে ব্যঙ্গ করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্ট,' বলেন তিনি।
তবে কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্পের ভাষাশৈলী বিবেচনায় তার মন্তব্যগুলো আসলে প্রশংসাসূচকই ছিল।
আফ্রিকান মেথোডিস্ট এপিসকোপাল ইউনিভার্সিটির গবেষণা পরিচালক আব্রাহাম জুলিয়ান ওয়েনাহ বলেন, 'কেউ কেউ মনে করতে পারেন, আফ্রিকান নেতারা মেধা বা বাগ্মিতায় পারদর্শিতা দেখালে তাতে পশ্চিমা বিশ্বের অবাক হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।'
'উপনিবেশ-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে ভাষাকে প্রায়ই বৈধতা ও সক্ষমতা প্রশ্নে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে,' বলেন তিনি।
তবে ট্রাম্পের বক্তৃতার ধরণ বিবেচনা করলে বোঝা যায়, বোয়াকাইয়ের পরিশীলন, মেধা ও বিশ্বমঞ্চে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রস্তুতিকে স্বীকৃতি দিতেই মন্তব্যটি করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন ওয়েনাহ।