Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
July 12, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, JULY 12, 2025
হাঙ্গেরির যে গ্রামে শত শত স্বামী তাদের স্ত্রীদের হাতে খুন হয়েছিলেন

আন্তর্জাতিক

দ্য টাইমস
11 July, 2025, 12:10 pm
Last modified: 11 July, 2025, 12:26 pm

Related News

  • খুলনায় বহিষ্কৃত যুবদল নেতাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা
  • ভারতে বাবার গুলিতে টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদব নিহত
  • ইসরায়েল আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল: ইরানের প্রেসিডেন্ট 
  • চট্টগ্রামে বোরকা পরে এসে যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যা 
  • গাজীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানায় পোশাক শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ১

হাঙ্গেরির যে গ্রামে শত শত স্বামী তাদের স্ত্রীদের হাতে খুন হয়েছিলেন

১৯১১ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে, নাজগ্রেভ ও আশপাশের টিসাজুগ অঞ্চলের ২৬ নারী ও ২ পুরুষসহ মোট ২৮ জনকে ১০১টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তবে ধারণা করা হয়, প্রকৃত সংখ্যা ছিল আরও অনেক বেশি—সম্ভবত ৩০০ এর কাছাকাছি। 
দ্য টাইমস
11 July, 2025, 12:10 pm
Last modified: 11 July, 2025, 12:26 pm
১৯২৯ সালে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন নারীর একটি প্রেস ফটো। সূত্র: হাঙ্গেরিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হাঙ্গেরির ছোট্ট এক কৃষিগ্রাম নাজগ্রেভের নারীরা চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। গৃহস্থালি কাজ, সন্তান ও বৃদ্ধ আত্মীয়দের দেখাশোনা ছাড়াও কৃষিকাজের ভারও তাদের কাঁধে এসে পড়েছিল। 

তাদের স্বামীরা হয় যুদ্ধে আহত, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বা মদে আসক্ত—তাই পরিবারে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না।

সামাজিক কাঠামোতেও নারীদের জন্য সহানুভূতির কোনও ঠাঁই ছিল না। বরং নারীর প্রতি সহিংসতাকে এখানে প্রথাগতভাবে মেনে নেয়া হতো। গ্রামে প্রচলিত ছিল এক ভয়ঙ্কর প্রবাদ: 'স্ত্রী ভালো তখনই, যখন তাকে পেটানো হয়'!

এই সহিংসতা, দারিদ্র্য আর নিস্তেজ জীবনের বোঝায় দমে আসা নারীরা বাঁচার উপায় খুঁজে না পেয়ে,শেষ পর্যন্ত এমন এক পথ বেছে নেন, যা নাজগ্রেভের ইতিহাসে বিষাক্ত স্মৃতি হয়ে গেঁথে যায়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নাজগ্রেভের নারীদের ভেতরে জন্ম নিতে থাকে তাদের ভাগ্য বদলানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষা।। শুরুতে এসব গুপ্ত আলাপ এবং কানাঘুষা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকলেও একপর্যায়ে গ্রামের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে একের পর এক অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর।

১৯১১ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে, নাজগ্রেভ ও আশপাশের টিসাজুগ অঞ্চলের ২৬ নারী ও ২ পুরুষসহ মোট ২৮ জনকে ১০১টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তবে ধারণা করা হয়, প্রকৃত সংখ্যা ছিল আরও অনেক বেশি—সম্ভবত ৩০০-এর কাছাকাছি। 

যেসব লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল, সেগুলোর দেহে পাওয়া যায় আর্সেনিক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিহতরা ছিলেন পুরুষ।

এই নারীরাই ঘটান ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিষপ্রয়োগ-ভিত্তিক হত্যাকাণ্ড—এবং সেটিও ছিল নারীনেতৃত্বাধীন।

তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয় ১৯২৯ সালের ডিসেম্বর মাসে, নাজগ্রেভ থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরের ছোট শহর সোলনকের আঞ্চলিক আদালতে। তখনকার কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই ভয়াবহ ঘটনাটিকে তুলে ধরেছিল। কিন্তু তার প্রায় নব্বই বছর পর পেরিয়ে যাওয়ার পরও, হাঙ্গেরির তখনকার অনেকেরই এই ইতিহাস সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না।

হয়তো দুইটি বিশ্বযুদ্ধের অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির ভেতর হারিয়ে গেছে এই ঘটনা। অথবা হাঙ্গেরির দীর্ঘ, প্রায়শই যুদ্ধবিধ্বস্ত ইতিহাসে এটি কোনো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে ঠাঁই পায়নি কখনও।

কিন্তু প্রশ্ন তো থেকেই যায়—কী এমন ঘটেছিল, যা এত নারীকেই ঠেলে দিয়েছিল হত্যার পথে? আর কেন তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দুই দশক বিচার হয়নি?

১৯১০ সালে যখন প্রথম বিষপ্রয়োগের ঘটনা ঘটে, তখন নাজগ্রেভ ছিল মাত্র ১,৫০০ জনের একেবারে ছোট একটি গ্রাম। কালের আবর্তে গ্রামটি আরও সঙ্কুচিত হয়েছে। 

২০১৯ সালে নাজগ্রেভের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৬৭০ জন। তবে সেখানকার গ্রামীণ জীবনযাত্রা এখনও অপরিবর্তিত—নারীরা এখনও হাতে তৈরি দীর্ঘ শাল পরেন, আর লোকজন হেঁটেহেঁটে কিংবা সাইকেল চালিয়ে চলাফেরা করেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগেই নাজগ্রেভে মদপানের প্রবণতা ছিল ব্যাপক। বুদাপেস্ট থেকে প্রায় ৭০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে তিসা নদীর তীরে অবস্থিত এই গ্রামটি হাঙ্গেরির বৃহত্তম মদ উৎপাদন অঞ্চল কুনশাগে পড়ে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ছিল নিজস্ব আঙুরক্ষেত, আর সেখান থেকে তৈরি হতো ঘরোয়া মদ।

সেখানকার পুরুষদের জীবনে মদপান ছিল নিত্যদিনের অংশ। কিন্তু যুদ্ধ শেষে তা নতুন মাত্রা পায়।যুদ্ধে আহত বা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অনেক পুরুষ নিজের যন্ত্রণা ভুলতে বা চাপ সামলাতে মদকেই আশ্রয় করে 'চিকিৎসা' হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। 

এর সঙ্গে যুক্ত হয় জুয়ার আসর।যদিও খেলাটি নিষিদ্ধ ছিল, তবুও বেশ জমজমাটভাবেই চলত। কেউ জিতলে উদযাপন করত, কেউ হারলে দুঃখ ভুলতে মুখে নিত পালিঙ্কা—হাঙ্গেরির ঐতিহ্যবাহী এক ধরনের শক্তিশালী ব্র্যান্ডি।

এই আসরগুলো প্রায়ই শেষ হতো ঝগড়া ও হাতাহাতিতে। আর সেই সহিংসতার ধারাবাহিকতা গিয়ে থামত পরিবারের নারী ও সন্তানদের গায়ে।

নাজগ্রেভের ঘরবাড়ি ছিল একতলা, কাঁচা মাটির দেয়াল আর খড়ের ছাউনির তৈরি। প্রতিটি ঘরের মাঝখানে থাকত রান্নাঘর। এটাই ছিল নারীদের প্রধান কর্মস্থল—যেখানে তারা রান্না করতেন, প্রতিবেশী নারীদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, আর শোনাতেন স্বামীদের প্রতি ক্ষোভের কথা।

বিষবালার ছদ্মবেশ: 'সুজি খালা' 

রান্নাঘরের টেবিল ঘিরে বসে থাকা নারীদের কথোপকথনে একজন বিশেষ নারী ছিলেন, তিনি বেশিকিছু বলতেন না, বরং নিরবে বাকিদের আলাপ মনোযোগ দিয়ে শুনেই যেতেন। তিনি ছিলেন সুজানা ফাজেকাস, গ্রামের সবার কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন 'সুজি খালা' হিসেবে।

১৮৬২ সালে নাজগ্রেভেই জন্ম তার। তবে ১৮৮৪ সালে বিয়ে করে চলে যান পাশের গ্রাম টিসাইনোকায়, এক দরিদ্র কৃষকের ঘরে। ১৮৯০ নাগাদ স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পড় তিন সন্তানসহ তিনি আবার ফিরে আসেন নাজগ্রেভে।। 

১৯২৮ সালে হঠাৎ তার স্বামী হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তবে গ্রামের অনেকেই বলত, ওই মৃত্যু আসলে বিষপ্রয়োগেই হয়েছিল। এমনকি পুলিশও পরবর্তীতে সুজিকে একজন সন্দেহভাজন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।

চাপা ঠোঁট, মোটা কালো ভ্রু, গভীর চোখের চাউনি আর শক্ত করে বাঁধা খোঁপা—সুজি রূপেগুনে গ্রামের অন্য নারীদের তুলনায় ছিলেন বেশ আলাদা। 

আচরণেও তিনি ছিলেন স্রোতের বিপরীতে। প্রায়ই দেখা যেত, স্থানীয় বারে বসে তিনি পাইপ বা সিগার টানছেন। এমন সাহসী, সীমালঙ্ঘনকারী আচরণ নারীদের জন্য ছিল অপ্রত্যাশিত, অনেকের চোখে অনুচিতও। কিন্তু এই পরিসরেই সুজি ছিলেন প্রাণবন্ত, সাহসী আর অন্যদের চেয়ে আলাদা।

হাঙ্গেরি সরকার তখন প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে প্রশিক্ষিত ধাত্রী নিয়োগে উৎসাহী ছিল—যারা সন্তান জন্মের সময় মা ও শিশুর সেবা ও পরিচর্যা করতেন। প্রায় ১৯০০ সালের দিকে ধাত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সুজি ছিলেন নাজগ্রেভের হাতে গোনা কয়েকজন আয়ক্ষমতা থাকা নারীর একজন।

গ্রাম পরিষদের দেওয়া একতলা একটি ঘরে থাকতেন সুজি।সেই বাড়ির রান্নাঘরের কাবার্ডের ওপরে ঝুলানো ছিল তার সনদপত্র। কাবার্ডের ওপর ছিল সারি সারি কাচের জার।

এই জারগুলোই ছিল তার সবচেয়ে আলোচিত 'ঔষধি মিশ্রণ'।এই মিশ্রণ তৈরি হতো ফ্লাইপেপার গলিয়ে, যা থেকে তৈরি হতো এক ধরনের আরসেনিকযুক্ত তরল। শুরুতে এটিকে মনে করা হতো কীটনাশক কিংবা চিকিৎসা সহায়ক কোনও উপাদান। 

সুজির বাড়ির পেছনে ছিল একটি বড় বাগান। প্রায়ই তাকে দেখা যেত সেখানে, গাছপালা আর ফুলের যত্ন নিচ্ছেন। পরবর্তীতে সেই বাগানের মাটির নিচেই খুঁজে পাওয়া যায় কয়েকটি বিষভর্তি শিশি।

সুজি খালা, ছবি: দ্য টাইমস

নাজগ্রেভে তখন কোনো ডাক্তার ছিল না। ফলে ধাত্রীর দায়িত্বের বাইরে সুজিই হয়ে উঠেছিলেন গ্রামের একমাত্র চিকিৎসাকর্মী। এমনকি একবার গ্রামের এক বিচারক আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছিলেন, কীভাবে সুজি তার হার্নিয়ার অস্ত্রোপচারে সাহায্য করেছিলেন।

এইভাবেই, একাধারে ধাত্রী, ভেষজ-চিকিৎসায় পারদর্শী অন্যদিকে গোপনে বিষের যোগানদাতা হয়ে উঠেছিলেন সুজি। 

নিজের পেশাগত দক্ষতার জন্য সুজির নামডাক থাকলেও তার ভূমিকা ঘিরে গড়ে উঠে নানা কৌতূহল, গুজব আর কুৎসার বাতাবরণ। সন্তান জন্ম, মানবদেহ ও যৌনতা নিয়ে তার স্বাভাবিক জ্ঞানকে তখনকার সমাজ 'অশ্লীল' বা 'অপবিত্র' বলে মনে করত। 

আবার সে সময় অনেক ধাত্রীকেই দেখা হতো যৌনকর্মী হিসেবে।ভেষজ ও উদ্ভিদভিত্তিক চিকিৎসা জানার কারণে দ্রুতই তার নামে ছড়িয়ে পড়ে নানা অপবাদ—'ডাইনি', 'পতিতা' ইত্যাদি। তবে কোথাও এমন কোনো প্রমাণ নেই যে নিজেকে নিয়ে এসব কুসংস্কার দূর করতে সুজি কখনো কোনো উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

তবু ধাত্রীর মতো একটি সরকারি পদ তাকে দিয়েছিল এক ধরনের সামাজিক মর্যাদা। এই পদই তাকে গ্রামের প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি পরিবারের জীবনে প্রবেশাধিকার দিত। আর সেই সুবাদেই তিনি জানতে পারেন গ্রামের প্রায় সবার গোপন কথা, চাপা যন্ত্রণা, না বলা অভিমান।

সুজির পাশের বাড়িতেই থাকতেন মারিয়া ভারগা। মারিয়ার স্বামী ইস্টভান যোলিয়ার্ট ছিলেন এক যুদ্ধফেরত সৈনিক, যিনি রাশিয়ান ফ্রন্টে চোখ হারিয়ে ফেলেন এবং পাঁচ মাস কাটান রুশ বাহিনীর বন্দি শিবিরে। 

যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ইস্টভান আর আগের মত ছিলেন না। কখনো তিন দিন, কখনো টানা পাঁচ দিন ঘুমাতেন না। ঘুমহীনতা, আতঙ্ক, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আর হতাশায় জর্জরিত হয়ে তিনি প্রায়ই মারিয়াকে বলতেন—যুদ্ধে মারা গেলেই নাকি ভালো হতো।

হিংস্র, সন্দেহপ্রবণ ও রাগী ইস্টভান প্রায়ই মারিয়ার ওপর চালাতেন শারীরিক নির্যাতন।

১৯১৬ সালের দিকে মারিয়ার ঘরে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে ওঠে। শেষমেশ তিনি যান সুজির কাছে—চান পরামর্শ, কীভাবে তার স্বামী ইস্টভানকে 'শান্ত' রাখা যায়।

সুজি তাকে দেন এক ধরনের 'স্টমাক ড্রপস'—দেখতে সাধারণ ওষুধের মতোই, কিন্তু ভেতরে ছিল ফ্লাইপেপার গলিয়ে এক বিষাক্ত মিশ্রণ। প্রথমদিকে এর প্রভাব অনেকটা ঘুম পাড়িয়ে দেয়ার মতো।

কিন্তু সুজির একের পর এক 'চিকিৎসা সফরের' পর, ধীরে ধীরে সেই মিশ্রণ তার আসল কাজ শুরু করে। তিন সপ্তাহের মাথায় মারা যান ইস্টভান।

গ্রামে এই ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও খুব বেশি প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে গোপনে গুঞ্জন—তাদের 'খারাপ' স্বামীদের সরিয়ে দিতে এই পথই হতে পারে তাদের একমাত্র মুক্তির উপায়! 

জীবনের দুঃসহ বোঝা বইতে থাকা নারীদের কাছে সুজি খালার রান্নাঘর তখন একান্ত আশ্রয়স্থল। সেখানেই তারা খুঁজে পেতেন এক ধরনের 'চিকিৎসা'—যেখানে 'মুক্তি' মিলত এক চুমুক মৃত্যুর স্বাদে।

অল্প সময়ের মধ্যেই সুজি হয়ে উঠলেন এক জমজমাট বিষব্যবসায়ী, সাথে ছিলেন বেশ চতুরও। তিনি অনেককে বিষ দিতেন তাদের নির্ধারিত আয়ের ভিত্তিতে। 

অনেকেই তাকে মজুরি হিসেবে দিত ডিম, হ্যাম, মুরগি কিংবা অন্যান্য ঘরোয়া খাবার। এমনও শোনা যায়, কেউ কেউ নিঃস্ব থাকায় বিনামূল্যেই পেয়ে যেতেন সেই প্রাণঘাতী তরল।

অস্ট্রিয়ার একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে নাজগ্রেভ কাণ্ডের অন্যতম আলোচিত মুখ সুজি খালা, ছবি: দ্য টাইমস

তবে সুজি ছাড়াও গ্রামে আরও কয়েকজন নির্ভরযোগ্য চিকিৎসক ও অভিজ্ঞ প্রবীণ নারী ছিল, যাদের কাছে বিষ প্রস্তুত করার জ্ঞান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়েছিল।

রোজালিয়া তাকাচস ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। লেখা-পড়া খুব একটা পারতেন না। জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি কাজ করতেন শরীর মালিশের কাজ এবং অসুস্থদের সেবা করে।

মাত্র ১৭ বছর বয়সে, রোজালিয়া বিয়ে করেন লাজোস নামে এক মদ্যপ ব্যক্তির সঙ্গে, যিনি তাকে নিয়মিত মারধর করতেন। ১৯১০ সালের শেষ দিকে, রোজালিয়ার পাশে দাঁড়ান তার প্রতিবেশী ও পুরনো বন্ধু রোজা ফারকাস—এক প্রবীণ বিধবা। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি রোজালিয়াকে উৎসাহ দেন 'ফ্লাইপেপার পদ্ধতি'তে বিষপ্রয়োগের কথা ভাবতে।

সম্ভবত রোজা এই বিষপ্রয়োগের ধারণা পেয়েছিলেন ১৮৯৭ সালের একটি ঘটনার সূত্রে—হডমেজোভাসারহেলি শহরের 'মারি জাগার কাণ্ড' থেকে।

নাজগ্রেভ থেকে ৪০ মাইল দক্ষিণে, ওই ঘটনায় মারি জাগার নামের এক ধাত্রী কয়েকজন নারীকে তাদের স্বামীদের হত্যা করতে সহায়তা করেছিলেন—উদ্দেশ্য ছিল জীবন বীমার অর্থ লাভ।

১৯১১ সালের দিকে বাজারে ইঁদুরমারা বিষ হিসেবে সরাসরি আর্সেনিক অ্যাসিড পাওয়া যেত পাউডার আকারে। এছাড়াও 'ফ্লাইস্টোন' নামে এক ধরনের পাথর ব্যবহৃত হতো, যার গায়ে লেগে থাকত বিষাক্ত আর্সেনিক ট্রাইঅক্সাইড। নারীরা ওই পাথর পানি বা ভিনেগারে ভিজিয়ে বিষ বের করতেন।

তবে সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় ছিল ফ্লাইপেপার গলানোর পদ্ধতি। রান্নাঘরের হাঁড়িতে তিন থেকে চারটি 'মিলিওস লেগিপাপির' বা 'মিলিয়ন-ফ্লাই' নামের স্টিকি ফ্লাইপেপার ফেলে তা পানি বা ভিনেগারে সেদ্ধ করা হতো। এই ফ্লাইপেপারগুলো ছিল আঠাল কাগজের স্ট্রিপ, যেগুলোতে লেগে থাকত বিষাক্ত রাসায়নিক। সেখান থেকেই তৈরি হতো সেই বিষাক্ত মিশ্রণ।

নাজগ্রেভের নারীরা ফ্লাইপেপার কিনতেন গ্রামের কেন্দ্রস্থল ফেল্ডমায়ারের দোকান থেকে অথবা আশপাশের শহর-গ্রামের ফার্মেসি থেকে। তবে ১৯২৭ সালে হাঙ্গেরিতে এই পণ্যটি নিষিদ্ধ হয়ে যায়, কারণ তা বিষপ্রয়োগের সঙ্গে যুক্ত থাকা নিয়ে সন্দেহ ছিল।

রোজালিয়া তাকাচস তার বন্ধু ও বয়স্কদের পরামর্শ মেনে প্রথমে সুজির কাছে যান। তিনি তাকে বিষ প্রয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দেন।

রোজালিয়া তিন পাঁজর ফ্লাইপেপার গলিয়ে তা মেশান স্বামী লাজোসের ওষুধে। ওই বিষাক্ত মিশ্রণ দিয়েই 'চিকিৎসা' শুরু করেন। এরপর দেখার অপেক্ষায় থাকেন কী ঘটে।

কিন্তু প্রথম সাতবার বিষপ্রয়োগেও কিছু হয় না, লাজোস টিকে যান। হতাশ হয়ে অবশেষে রোজালিয়া সরাসরি কিনে আনেন আর্সেনিক অ্যাসিড—এক ধরনের ইঁদুরমারা বিষ—এবং তা মিশিয়ে দেন স্বামীর খাবারে।

ফলে ১৯১১ সালের ১১ জানুয়ারি, খাবার খাওয়ার সাত দিন পর মারা যান লাজোস। এটিই ছিল নাজগ্রেভের নারীদের দ্বারা সংগঠিত প্রথম নিশ্চিত বিষপ্রয়োগের ঘটনা।

তখনও তারা পরীক্ষামূলক পর্যায়ে ছিলেন—পদ্ধতি, উপাদান ও ডোজ ঠিক করার চেষ্টা চলছিল। সফলতার পর তাঁরা আর পিছনে তাকাননি।

প্রায় দুই দশক পর, ১৯৩০ সালের ১৪ অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন রোজালিয়া। শুধু স্বামীকে হত্যার কথা নয়, তিনি স্বীকার করেন—তার মৃত্যুর জন্য তিনি 'বিকৃত এক গর্ব'ও অনুভব করেন।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এরপরের বিশ বছরে রোজালিয়া আরও ছয় নারীর বিষপ্রয়োগে সহায়তা করেন—প্রায় সবাই ছিলেন নির্যাতনের শিকার।

নাজগ্রেভের নারীনেতৃত্বাধীন বিষপ্রয়োগের চক্রে সুজি খালার পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম ছিল জুলিয়ানা লিপকা। মাত্র তিন বছর বয়সে অনাথ হওয়া জুলিয়ানার শৈশব কেটেছে চরম দারিদ্রে। দশ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন বাড়িতে কাজ শুরু করেন।

১৯০০-এর দশকের শুরুতে তিনি কাজ নেন এক অসুস্থ বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে। পরবর্তীতে অভিযোগ ওঠে, যুদ্ধের আগেই তিনি আর্সেনিক দিয়ে তাদের হত্যা করেছিলেন।

সুজি খালার সঙ্গে তার কিছুটা প্রতিযোগিতা থাকলেও, জুলিয়ানা ছিলেন ভিন্ন ধরণের। তিনি বিষ দিয়ে নারীদের সাহায্য করতেন আর্থিক লাভের জন্য নয়, বরং সহানুভূতি ও সমব্যথিত মনোভাব থেকেই।

১৯১৯ সালের নভেম্বরের এক দিনে, জুলিয়ানা যান মারিয়া কোটেলেস নামের এক সেলাই-কর্মীর কাছে নতুন পোশাক নিতে। কথা বলতে বলতে মারিয়া খুলে বলেন তার স্বামী লাসলোর অত্যাচারের কথা—এক যুদ্ধফেরত, রূঢ়, মদ্যপ পুরুষ, যিনি প্রায়ই মারধর করতেন, বন্দুক তাকাতেন, অপমান করতেন, স্ত্রীকে ডাকতেন 'পতিতা' বলে।

সেই দিনের দুপুরেই জুলিয়ানা বাড়ি ফিরে তিন পাঁজর ফ্লাইপেপার গলিয়ে নিয়ে আসেন এক শিশিতে। মারিয়া সেই বিষাক্ত তরল মিশিয়ে দেন লাসলোর পানীয়তে। সন্ধ্যায় লাসলো তা পান করার কিছুক্ষণ পরেই মারা যান।

জুলিয়ানা লিপকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আরেক মারিয়া—মারিয়া পাপাই। তার স্বামী ছিলেন কদর্য, সন্দেহভাজন ও মদ্যপ; নিয়মিত মারিয়াকে মারধর করতেন। 

১৯২৩ সালে সহ্যের সীমা পেরিয়ে মারিয়া সিদ্ধান্ত নেন স্বামীকে হত্যা করবেন এবং তারপর আত্মসমর্পণ করবেন। বন্ধু জুলিয়ানার কাছে এই কথা বললে, জুলিয়ানা তাকে পরামর্শ দেন তরল আর্সেনিক ব্যবহারের—যাতে মৃত্যু স্বাভাবিক মনে হয় এবং স্বীকারোক্তির প্রয়োজন না পড়ে।

মারিয়া রাজি হন। প্রথমে বিষ আনেন সুজি খালার কাছ থেকে, কিন্তু প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে জসুসি খালা তাকে আর্সেনিক পাউডার দেন, যা মারিয়া মিশিয়ে দেন স্বামীর কফিতে।

এইবার পরিকল্পনা সফল হয়। মারিয়ার স্বামীকে মৃত্যুর পর 'স্ট্রোক' বলে ঘোষণা করা হয়। 

নাজগ্রেভের শুধুমাত্র পুরুষরাই নিহত হননি। অনেক দরিদ্র নারীরাই জানতেন, তাদের নবজাতক সন্তানকে তারা স্বাভাবিকভাবেই পালতে সক্ষম হবেন না। এমনই একজন ছিলেন আন্না চের। ১৯০৯ সালে স্থানীয় এক আতিথেয়তার মালিকের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকে তার জীবন পরিণত হয় এক কঠিন সংগ্রামে।

স্বামীর পাশাপাশি তাকে দেখভাল করতে হত তার অসুস্থ শ্বশুর-শাশুড়িকে। এর মধ্যেই স্বামীর হিংস্রতা ছিল সীমাহীন। মদ্যপ ও অত্যাচারী এই মানুষটি গর্ভবতী অবস্থাতেও আন্নাকে মারধর করতেন। এক পুলিশের কাছে আন্না লিখেছিলেন, 'সে আমাকে পেটাত। আমাকে একা কখনো ছাড়ত না। ছুরি দিয়ে আঘাত করত, আমাকে ধাক্কা মেরে চেয়ার ভেঙে দিয়েছিল। আমার পুরো শরীর নীল হয়ে গিয়েছিল।'

এই নির্যাতন, দারিদ্র্য আর দায়িত্বের চাপে অনেক নারীই তখন নবজাতকের ভবিষ্যৎ দেখতে পান না। অনেকে এই অসহায়ত্ব থেকে মুক্তির পথ খুঁজে নেন বিষের মধ্যেই।

১৯১৬ সালে তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় আন্না সম্পূর্ণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন—তার দুধ নেই, নবজাতক কন্যাকে দুধ খাওয়ানোর উপায় নেই। আগস্ট ১৯১৬-এ, সুজি খালার সাহায্যে আন্না একটি মিশ্রণ তৈরি করলেন—চিনির শরবত আর এক চামচ আর্সেনিক। তিনি তা নবজাতককে খাওয়ালেন। শিশুটি কয়েকদিনের মধ্যেই মারা যায়।

এই 'সমাধান' তখন নাজগ্রেভের নারীদের গোপন স্বস্তি হয়ে উঠলেও, তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের গ্রামেও। অনেক নারী বিষ তৈরি করতেন রান্নাঘরে, আর তা বিনিময় হতো রান্নার চর্বি, গোলাপফুল বা ডিমের বিনিময়ে। তিসাকুর্ত গ্রামে ধাত্রী ক্রিস্টিনা চোর্ডাস ও এসজতার সাবো ঠিক এভাবেই বিষ সরবরাহ করতেন।

তবে নাজগ্রেভ ছিল এ বিষযজ্ঞের কেন্দ্রস্থল। ২৮ অভিযুক্তের মধ্যে ২০ জনই এখানকার বাসিন্দা, এবং বিষে নিহত ৭৩ শতাংশ মানুষও এখানকার।

পুরো গ্রামেই বিষে মৃত্যু ছিল এক ধরনের 'ওপেন সিক্রেট'। স্বামী, স্ত্রী, শাশুড়ি—সবাই জানতেন কী ঘটছে। কিন্তু একাকী ও বিচ্ছিন্ন এই সম্প্রদায়গুলো কর্তৃপক্ষের প্রতি অবিশ্বাসী ছিল এবং সম্ভবত বিষপ্রয়োগকারীদের প্রতিশোধের আশঙ্কায় মুখ খুলতে পারত না—হয় সমর্থনে, নয়তো আতঙ্কে।

১৯২০-এর দশকের শুরুতে, অবশেষে কিছু সাহসী ব্যক্তি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে গোপনে চিঠি পাঠাতে শুরু করেন, যেখানে নারীদের বিষপ্রয়োগের বিস্তারিত তথ্য ছিল। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে ফাঁস হতে থাকে নাজগ্রেভের এই নারীকেন্দ্রিক বিষযজ্ঞের ইতিহাস—যা পৃথিবীর ইতিহাসে নারীদের দ্বারা পরিচালিত সবচেয়ে বড় সিরিয়াল পয়জনিং কেলেঙ্কারি।

নাজগ্রেভে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিষপ্রয়োগের ঘটনাগুলোতে কর্তৃপক্ষ বহুবার হস্তক্ষেপের সুযোগ হাতছাড়া করেছিল।

১৯২৪ সালের অক্টোবরে রোজালিয়া হোলিবা নামে এক নারী তার যুদ্ধফেরত স্বামীকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করেন। এই হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেছিলেন সুজি ও তার বোন লিডিয়া সেবেস্টিয়েন।

হোলিবা যখন স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে স্বামীর মৃত্যুর সনদ নিতে যান, তখন চিকিৎসক বেশ অবাক হন—মাত্র এক সপ্তাহ আগেও তিনি ওই ব্যক্তিকে দেখেছিলেন, যার শরীরে তেমন কোনো গুরুতর অসুস্থতা ছিল না। সন্দেহ জাগে তার।

পরে পুলিশ হোলিবার বাড়িতে তল্লাশি চালালেও, কোনো প্রমাণ পায়নি।

এভাবেই বছর গড়িয়ে যায়। কিন্তু ১৯২০-এর দশকের শেষভাগে গোপন চিঠি ও অভিযোগের সংখ্যা এতটাই বেড়ে যায় যে, শেষমেশ তদন্ত শুরু করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।

রোজালিয়া হোলিবা, লিদিয়া সেবেস্টিয়েন, জুলিয়ান্না লিপকা ও মারিয়া কোটেলেস—হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ১৯২৯ সালের ডিসেম্বর মাসে হাঙ্গেরির সলোনোক শহরে আদালতে। ছবি: দ্য টাইমস

১৯২৯ সালের ১৫ জুন শুরু হয় প্রাথমিক তদন্ত। তিসাকুর্ত গ্রামে লেফটেন্যান্ট যোজেফ জসলদোস নেতৃত্বে দরজা-দরজা তদন্তে নামে পুলিশ। সেদিনই এক দম্পতিকে আটক করা হয়, যারা স্বীকার করে যে, তারা ধাত্রী ক্রিস্টিনা চোর্ডাসের কাছ থেকে আর্সেনিক পেয়েছিল। আর ক্রিস্টিনা জানান, সেই বিষের উৎস ছিলেন সুজি খালা।

মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে, ২৯ জুন, গ্রেপ্তার করা হয় সুজিকে। যদিও তিনি নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন এবং পরে জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু এটি ছিল তাদের পুলিশি কৌশল—তাকে নজরে রেখে, গোটা বিষচক্রের অন্য সদস্যদের ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তদন্তকারীরা।

১৯ জুলাই সকালে, সুজি জানতে পারেন, পুলিশ তাকে খুঁজছে। কয়েক দিন ধরে তিনি বুঝতে পারছিলেন, সময় ফুরিয়ে আসছে। কখনও ঘরের কোণে লুকিয়ে, কখনও রাস্তার দিকে তাকিয়ে কাটছিল তার দিন।

সেই সকালে যখন পুলিশ তার বাড়ির সামনে এগিয়ে আসে, তখন আর দেরি করেননি সুজি। নিজের পোশাকের পকেট থেকে আর্সেনিক মিশ্রণের একটি ছোট শিশি বের করে মুখে নিয়ে নেন এক চুমুক বিষ।

ঘটনাটি সামনে থেকে দেখছিলেন তার মেয়ে। চিৎকার করে ওঠেন, 'মা, তুমি কি করছ?'

কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। 

সুজি তখন মাটিতে পিঠে শুয়ে, পায়ে লাফাচ্ছিলেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে শুধু কাঁপুনি আর গুঞ্জন ছাড়া আর কিছু বলতে পারছিলেন না। ডাক্তার দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে তাকে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন, বিষ নিঃসরণের জন্য। কিন্তু সুজি পুরোটা সময় মুখ বন্ধ করে রেখেছিলেন—তিনি বাঁচতে চাননি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

১৯২৯ সালের আগস্ট মাসে পুলিশ আরও অসংখ্য সন্দেহভাজনকে খুঁজে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। ৮ আগস্ট রোজালিয়া তাকাচসকে গ্রেফতার করা হয়, যিনি সঙ্গে সঙ্গেই স্বীকারোক্তি দেন। এই অভিযানটির নেতৃত্ব দেন সার্জেন্ট জানোস বারটক, যিনি তাঁর অফিসারদেরকে সহিংসতা ও কৌশল ব্যবহার করে স্বীকারোক্তি আদায়ের নির্দেশ দেন।

নারীদের গ্রুপে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো, দিনরাত যে কোনো সময়, কখনো কখনো একাধিকবার। আগস্টের এক দুপুরে রোজালিয়া হোলিবা ও লিডিয়া সেবেস্টিয়েন—যারা মূল সন্দেহভাজন—একটি ঘরে একসঙ্গে রাখা হয়।

ঘটনাচক্রে, লিডিয়া রোজালিয়াকে তার যুদ্ধজয়ী স্বামী হত্যার স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য রাজি করাতে চেষ্টা করছিলেন; বিনিময়ে তিনি তার মেয়েকে দত্তক নেবেন বলে আশ্বাস দেন।

তারা জানত না, সার্জেন্ট বারটক সেই ঘরের বিছানার নিচে লুকিয়ে ছিলেন। স্বীকারোক্তির মুহূর্তে বারটক হঠাৎ বিছানার নিচ থেকে ঝাঁপিয়ে উঠে বিজয়ী ভঙ্গিতে রোজালিয়াকে ধরে ফেলেন।

অবশেষে, তিসাজুগ অঞ্চলের ৪৩ জন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়। তবে সুজি খালার মতো অনেক নারী আত্মহত্যা করে বসেন, বিচার শুরু হওয়ার আগেই।

মোট ১২টি বিচারের পর ২৮ জন অভিযুক্তের রায় ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে আটজন মুক্তি পান, বাকিরা দোষী সাব্যস্ত হন।

রোজালিয়া তাকাচস, জুলিয়ানা লিপকা, মারিয়া কার্ডোস, এসজতার সাবো এবং ক্রিস্টিনা চোর্ডাসকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়। তবে জুলিয়ানা ও রোজালিয়ার সাজা পরবর্তীতে আপিলের মাধ্যমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে কমিয়ে আনা হয়।

নাজগ্রেভের বিষযজ্ঞের এই ইতিহাস ছিল নারীদের সংগ্রামের এক নিষ্ঠুর অধ্যায়, যেখানে অনেকেই শাস্তি পেয়েও মুক্তি পাননি, আর কেউ কেউ তাদের নিজেই বিচার ও কষ্ট থেকে পালানোর পথ খুঁজে নিয়েছিলেন।

এই নারীদের মধ্যে হত্যা করার ভাবনা কীভাবে ছড়িয়ে পড়ল? প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরের নাজগ্রেভ ছিল এক দরিদ্র, সহিংসতার ছায়ায় গ্রস্ত সমাজ—যেখানে নারীরা সহিংসতাকে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে সন্তান হত্যাও তাদের কাছে অপরিহার্য মনে হত।

তারা বহু আত্মহত্যার ঘটনাও দেখেছিল, আর গৃহস্থালীর নির্যাতন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে আর তা উপেক্ষা করা যেত না।

এই নির্যাতন যখন একেবারে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, আর তখনই বিষপ্রয়োগের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

'তাকে নিয় কেন এত চিন্তা কেন করো?'—এই কথাটি সুজি খালাসহ বিষপ্রয়োগকারী নারীদের মুখে মুখে ঘুরে ফিরে, নারীদের মধ্যে একটি নতুন ভাষা তৈরি করেছিল।

এই ভাষা ও মানসিকতা তাদের পীড়ন থেকে মুক্তির একটি পথ হিসেবে কাজ করেছিল, যেখানে হত্যা কোনো অপরাধ নয়, বরং নিস্তার লাভের এক উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের কাছে।

Related Topics

টপ নিউজ

হাঙ্গেরি / বিষপান / হত্যা / নাজগ্রেভ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ব্যবসায়ীকে হত্যার পর লাশের ওপর প্রকাশ্যে নৃশংসতা: নেপথ্যে ‘অবৈধ’ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব
  • জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোটের সম্ভাবনা নেই, এনসিপির জন্য দরজা এখনো খোলা: সালাহউদ্দিন
  • হাঙ্গেরির যে গ্রামে শত শত স্বামী তাদের স্ত্রীদের হাতে খুন হয়েছিলেন
  • শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ৪৪ কোটি টাকার প্রকল্প; পোস্টার, ক্যালেন্ডার, প্রশিক্ষণেই খরচ ২৬ কোটি টাকা
  • দরপত্রের পদ্ধতি, একক দরদাতা যেভাবে ২৫০ কোটি ডলারের বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অচল করে রেখেছে
  • চিকেনস নেকের ওপর নির্ভরতা কমাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে রেলপথে বাকি দেশের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ ভারতের

Related News

  • খুলনায় বহিষ্কৃত যুবদল নেতাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা
  • ভারতে বাবার গুলিতে টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদব নিহত
  • ইসরায়েল আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল: ইরানের প্রেসিডেন্ট 
  • চট্টগ্রামে বোরকা পরে এসে যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যা 
  • গাজীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানায় পোশাক শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ১

Most Read

1
বাংলাদেশ

ব্যবসায়ীকে হত্যার পর লাশের ওপর প্রকাশ্যে নৃশংসতা: নেপথ্যে ‘অবৈধ’ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব

2
বাংলাদেশ

জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোটের সম্ভাবনা নেই, এনসিপির জন্য দরজা এখনো খোলা: সালাহউদ্দিন

3
আন্তর্জাতিক

হাঙ্গেরির যে গ্রামে শত শত স্বামী তাদের স্ত্রীদের হাতে খুন হয়েছিলেন

4
বাংলাদেশ

শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ৪৪ কোটি টাকার প্রকল্প; পোস্টার, ক্যালেন্ডার, প্রশিক্ষণেই খরচ ২৬ কোটি টাকা

5
বাংলাদেশ

দরপত্রের পদ্ধতি, একক দরদাতা যেভাবে ২৫০ কোটি ডলারের বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অচল করে রেখেছে

6
আন্তর্জাতিক

চিকেনস নেকের ওপর নির্ভরতা কমাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে রেলপথে বাকি দেশের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ ভারতের

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net