যেভাবে মাত্র ৫ মিনিটে ‘স্ট্রেস’ কমাবেন

ব্যস্ততা এখন জীবনের নিত্যসঙ্গী। মিটিং, কাজের তালিকা, ঘরের নানা দায়িত্ব—সবকিছু মিলিয়ে আমরা প্রায়শই বুঝতেই পারি না, কখন 'স্ট্রেস' বা উদ্বেগ আমাদের দেহ-মনের ওপর ছাপ ফেলছে। এর প্রভাব পড়ে ঘুম, মনোযোগ ও শরীরের সামগ্রিক সুস্থতায়।
কিন্তু ভালো খবর হলো, উদ্বেগ কিংবা মানসিক চাপ কমাতে জটিল কোনো কৌশলের দরকার নেই। বিজ্ঞান বলছে, একদম ছোট ছোট কিছু অভ্যাসই শরীর ও মনকে শান্ত করতে পারে। নিচে এমন ৬টি কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো, যেগুলো আপনি এখনই চেষ্টা করতে পারেন:
পাঁচবার গভীরভাবে শ্বাস নিন
আপনার স্নায়ুতন্ত্রের ওপর শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রভাব দ্রুত ও গভীর। গবেষণায় দেখা গেছে, গভীর শ্বাস নেওয়া রক্তচাপ কমায়, হৃদস্পন্দন ধীর করে এবং হার্ট রেট ভ্যারিয়েবিলিটি বাড়ায়—যা মানসিক স্থিতিশীলতার একটি বড় সূচক। একই সঙ্গে এটি কর্টিসলের মাত্রা কমায়—এই স্ট্রেস হরমোন ঘুম ও মনোযোগের ব্যাঘাতসহ নানা সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
সময় কম? তাহলে 'কোহেরেন্ট ব্রিদিং' চেষ্টা করুন—ছয় সেকেন্ড শ্বাস নিন, ছয় সেকেন্ড ছাড়ুন, কোনো বিরতি নয়, একটানা ছন্দে। মাত্র কয়েক মিনিটেই স্নায়ু শান্ত হতে শুরু করবে।
কারও হাত ধরুন, বা নিজেকেই আলতো স্পর্শ করুন
মানবিক স্পর্শ আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে স্বস্তির বার্তা পাঠায়। একবার আলতো করে জড়িয়ে ধরা বা হাত ধরা শরীরে অক্সিটোসিন নামক হরমোন নিঃসরণ ঘটায়, যা মানসিক স্থিতি ফিরিয়ে আনে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো চ্যালেঞ্জিং কাজের আগে যারা একে অপরকে ২০ সেকেন্ড জড়িয়ে ধরেছিলেন, তাদের হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ অন্যদের তুলনায় কম ছিল।
কিন্তু আপনার পাশে কেউ না থাকলেও চিন্তার কিছু নেই। নিজেকে ছোঁয়া—যেমন বুকে হাত রাখা, বাহুতে হাত বুলানো বা মুখে আলতো স্পর্শ—এগুলোও কর্টিসলের মাত্রা কমাতে পারে।
সূর্যের আলোতে বাইরে দাঁড়ান
প্রাকৃতিক আলো আর খোলা বাতাস মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। রোদের আলো শরীরের ভিটামিন ডি উৎপাদনে সাহায্য করে এবং ঘুমের ছন্দ ঠিক রাখে, যা উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পার্কে যাওয়ার সময় না থাকলেও, বারান্দায় বা জানালার পাশে দাঁড়ালেও উপকার পাবেন।
পাঁচ মিনিট হাঁটুন
হাঁটা শুধু শরীরের জন্য নয়, মনের জন্যও উপকারী। হাঁটার সময় মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ে, মনোযোগ ও চিন্তা পরিষ্কার হয়। এতে সৃজনশীলতা বাড়ে এবং উদ্বেগ কমে।
গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটার সময় মানুষ আরও বেশি উদ্ভাবনী চিন্তা করতে পারে—এবং সেই ইতিবাচক প্রভাব হাঁটা শেষের পরেও থাকে।
সোজা হয়ে বসুন
আপনার ভঙ্গি আপনার মনের ওপরও প্রভাব ফেলে। কুঁজো হয়ে বসলে ক্লান্তি ও নেতিবাচক চিন্তা বাড়তে পারে, আর সোজা হয়ে বসলে আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্থিতি তৈরি হয়।
পরামর্শ: কাঁধ পেছনে, বুক উঁচু করে, মাথা যেন ওপরের দিকে টানা হচ্ছে—এই অবস্থানে কিছুক্ষণ থাকলে মনও সতেজ লাগে।
প্রিয় গান শুনুন
গান আমাদের আবেগ ও স্মৃতির সঙ্গে জড়িত। প্রিয় গান শুনলে কর্টিসল কমে, ডোপামিন বাড়ে—যা উদ্বেগ দূর করে আনন্দ ও প্রশান্তি এনে দেয়।
গান মানসিক স্বস্তি বাড়ায়, ঘুমে সাহায্য করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা পর্যন্ত বাড়াতে পারে।