৬ ঘণ্টা পর শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুন নিয়ন্ত্রণে: বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন দমকলকর্মীরা।
আজ শনিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় কেউ নিহত হয়নি বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে রাত ৯টা থেকে বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে নিশ্চিত করা যাচ্ছে যে আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে। রাত ৯টা থেকে সব ফ্লাইট কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিজে বিমানবন্দরে অবস্থান করে সমগ্র পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হবে। অগ্নিকাণ্ডের উৎস শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
আজ শনিবার (১৮ অক্টোবর) বেলা আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটসংলগ্ন কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। তবে আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানা যায়নি।

এর আগে সন্ধ্যায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আগুন 'অনেকটাই' নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেছিল। তবে সেই সময় ঘটনাস্থল থেকে আমাদের আলোকচিত্রী জানিয়েছিলেন, আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বরং তা ক্রমেই বাড়ছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট কাজ করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একাধিক ফায়ার ইউনিট যোগ দেয়।
অন্তত ২৫ আনসার সদস্য আহত
আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে গিয়ে আনসারের ২৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের দ্রুত সিএমএইচ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপপরিচালক ও গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আশিকউজ্জামান বলেন, 'বিমানবন্দরের নিরাপত্তা দায়িত্বে নিয়োজিত আনুমানিক এক হাজার আনসার সদস্য উদ্ধার ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছেন। এ সময় কর্তব্যরত অবস্থায় ২৫ জন আনসার সদস্য আহত হন। তাদের দ্রুত সিএমএইচ ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।'

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান বলেন, 'এয়ারপোর্টে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আমাদের হাসপাতালে ৮জন রোগীকে আনা হয়েছে। তবে তাদের কেউ আগুনে দগ্ধ হননি। অতিরিক্ত গরমে কিংবা দৌড়াদৌড়িতে সামান্য আহত হয়েছেন। সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, সুস্থ আছেন। গরমের কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় একজনকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে।'

ঘটনাস্থল থেকে জোন কমান্ডার (উত্তর) মো. গোলাম মওলা তুহিন বলেন, 'আনসার সদস্যরা অগ্নিকাণ্ডের প্রাথমিক মুহূর্তেই আগুন দেখতে পেয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন এবং ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সাহসিকতার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ঘটনাটির সার্বিক তদারকি করছে এবং আহত সদস্যদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও সহায়তা নিশ্চিত করেছে।'
চট্টগ্রামে অন্তত আট ফ্লাইটের জরুরি অবতরণ
রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগায় ঢাকাগামী অন্তত আট ফ্লাইট চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেছে।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। অবতরণ করা ফ্লাইটগুলোর মধ্যে দুটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট, আর বাকি ছয়টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট; তিনটি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের, একটি এয়ার এরাবিয়ার মধ্যপ্রাচ্য থেকে ঢাকার ফ্লাইট এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি ফ্লাইট।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, হঠাৎ করে কয়েকটি ফ্লাইট অবতরণ করলেও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের সব কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগুন নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত ৩৬টি ইউনিট কাজ করছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া কাজ করছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিট।

ঢাকাগামী ফ্লাইট নামলো সিলেটে
কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের জেরে ফ্লাইট চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত থাকায় সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।
আজ বিকাল ৩টা ৩১ মিনিটে ৩৯৬ জন যাত্রী নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৩৪০ ফ্লাইটটি সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসমানী বিমানবন্দরের ম্যানেজার হাফিজ উদ্দিন আহমদ।
এদিকে, শাহজালালে আগুনের কারণে সিলেট থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না ঢাকাগামী কোনো ফ্লাইট। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনটি ফ্লাইট যথাসময়ে ছেড়ে যায়নি। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
আব্দুস সামাদ নামের দক্ষিণ সুরমার এক বাসিন্দার সিলেট থেকে বিকেল সাড়ে ৪টায় ইউএস বাংলার ফ্লাইটে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, রাতেই ঢাকা থেকে ফ্লাইটে আমার দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার কথা। অগ্নিকাণ্ডের কারণে ওই ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে। এতে অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে আমাকে।

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, যে অংশে আগুন লেগেছে সেখানে আমদানি করা পণ্য মজুদ ছিল। অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ফ্লাইট ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।