রাজশাহীতে গভীর নলকূপ থেকে উদ্ধার শিশুটি বেঁচে নেই
রাজশাহীর তানোরে গভীর নলকূপের জন্য খনন করা গর্তে পড়ে যাওয়া দুই বছর বয়সী শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুজ্জামান দ্বায়িত্বরত চিকিৎসকের বরাত দিয়ে টিবিএস'কে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শিশু সাজিদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানিয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী। আজ (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে চলমান উদ্ধার অভিযান নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান তিনি।
এসময় তিনি বলেন, '৪৫ ফুট পর্যন্ত খনন করেও শিশুটির উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। শিশুটি যে গর্তে পড়েছে সেটার প্রস্থ সরু হওয়ায় এবং মাটি এঁটেল-দোঁআশ মাটি হওয়ায় শিশুটিকে ওই গর্ত থেকে বের করা সম্ভব না। এজন্য পাশাপাশি সমান্তরাল গর্ত করে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন প্রতি ১০ ফুট অন্তর অন্তর গর্ত খুঁড়ে শিশুটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আরও গভীর খনন করার জন্য এস্কেভেটর দিয়ে মাটি দূরে সরিয়ে মাটির ব্যালান্স করা হচ্ছে। যাতে ওপর থেকে মাটি নিচে না পড়ে।'
এজন্য কাজে ধীরগতি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী বিভাগের উপপরিচালক মো. মঞ্জিল হক জানান, ৩৫ ফুট খননের পরও শিশুটিকে শনাক্ত করা যায়নি। পরে আবার গর্তে পাইপ ঢোকানো হয়। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট গভীরতার পর পাইপ আর নিচে নামছে না।
তিনি বলেন, "পাইপের নিচে কী রয়েছে তা দেখার জন্য সার্চ ভিশন লাইট পাঠানো হবে। এজন্য পাইপের গোড়ায় থাকা পিলারের ব্যালান্স ঠিক রাখতে এস্কেভেটর দিয়ে আবার মাটি সরানো হচ্ছে।"
এর আগে, সকালে এস্কেভেটর দিয়ে খননকাজ শেষ হওয়ার পর খনন করা গর্ত থেকে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সেই গভীর নলকূপের গর্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন উদ্ধার কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম বলেছিলেন, শিশুটি যে গর্তে পড়ে গেছে, তার পাশেই এস্কেভেটর দিয়ে ৩৫ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। এখন রেসকিউ টিম সেই খননকৃত গর্ত থেকে নলকূপের গর্তে সুড়ঙ্গ তৈরি করছে।
"সুড়ঙ্গ করার পরও সেখানে শিশুটিকে না পেলে আর খনন করা সম্ভব হবে না। তখন ওই গর্ত থেকেই অন্য কৌশলে উদ্ধার করতে হবে। কারণ নলকূপটির গভীরতা ১৫০ থেকে ২০০ ফুট—শিশুটি ভেতরে যেকোনো জায়গায় আটকে থাকতে পারে," জানিয়েছিলেন তিনি।
এর আগে, গতকাল বুধবার দুপুর একটার দিকে বাড়ির পাশে বিলে মায়ের সঙ্গে যাওয়ার সময় পিছলে পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যায় দুই বছরের শিশু সাজিদ।
স্থানীয়রা প্রথমে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট এসে ভেন্টিলেশন দেয়। পরে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আরও দুটি ইউনিট এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
প্রথমে চার্জ ভিশন ক্যামেরায় শিশুটির অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হলেও ৩৫ ফুট গভীরে তার সন্ধান না পাওয়ায় পাশেই রাতভর এস্কেভেটর দিয়ে খনন করা হয়। সকালে ৩৫ ফুট পর্যন্ত খনন শেষে এখন সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
এদিকে উদ্ধার তৎপরতা ঘিরে ফায়ার সার্ভিস, মেডিকেল টিম ও স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছে। শত শত মানুষ সেখানে জড়ো হয়ে শিশুটি নিরাপদে ফেরার আশায় প্রার্থনা করছেন।
