ওয়াকফ আইন প্রত্যাখান মমতার, রাজনৈতিক স্বার্থে দাঙ্গা না লাগানোর অনুরোধ

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে বলেছেন, তার সরকার নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রণীত ওয়াকফ আইন পশ্চিমবঙ্গে বাস্তবায়ন করবে না।
শনিবার (১২ এপ্রিল) মুর্শিদাবাদ জেলার সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর প্রসঙ্গ টেনে মমতা জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং রাজনৈতিক স্বার্থে দাঙ্গা না লাগানোর জন্য সব ধর্মের সকল মানুষের প্রতি অনুরোধ করেন।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ বাংলায় এক পোস্টে লেখেন, 'আমরা এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে বলেছি - আমরা এই আইনকে সমর্থন করিনা। এই আইন আমাদের রাজ্যে লাগুও [বাস্তবায়ন] হবে না। তাহলে দাঙ্গা কিসের?'
মমতা ব্যানার্জি জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়ে আরও বলেন, 'সব ধর্মের সকল মানুষের কাছে আমার একান্ত আবেদন, আপনারা দয়া করে শান্ত থাকুন, সংযত থাকুন। ধর্মের নামে কোনো অ-ধার্মিক আচরণ করবেন না। প্রত্যেক মানুষের প্রাণই মূল্যবান, রাজনীতির স্বার্থে দাঙ্গা লাগাবেন না। দাঙ্গা যারা করছেন তারা সমাজের ক্ষতি করছেন।'
গতকাল শুক্রবারের জুমার নামাজের পর মুর্শিদাবাদের কিছু অংশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ আইন বিষয়ে কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়লে তার জেরে এ সহিংসতা শুরু হয়। এর পরদিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা এ বিবৃতি দিলেন।
পুলিশ মহাপরিচালক রাজীব কুমারের ভাষ্যমতে, ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ফলে এলাকাজুড়ে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হয়, যার জেরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে।
ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, সহিংসতায় অন্তত ১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। সরকারি ভবন, পুলিশ ফাঁড়ি, রেলওয়ে অফিস এবং দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে 'ভয়াবহ রাত' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তারা অভিযোগ করেন, প্রথম দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না।
'কোনো পুলিশ ছিল না। তারা ভয়ে ছিল। আমাদের মতো তারাও ঘরে বসে ছিল,' বলেন ধুলিয়ানের এক দোকানদার। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ওই সহিংসতায় পুড়ে যায়।
মমতা ব্যানার্জি তার পোস্টে জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেন, এই বিতর্কিত ওয়াকফ আইন তার দল তৃণমূল কংগ্রেস নয়, বরং বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, 'মনে রাখবেন, যে আইনের বিরুদ্ধে অনেকে উত্তেজিত, সেই আইনটি কিন্তু আমরা করিনি। আইনটি কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। তাই উত্তর যা চাওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চাইতে হবে।'
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি। 'দাঙ্গায় যারা উস্কানি দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা আমরা নেবো। কোনো হিংসাত্মক কার্যকলাপকে আমরা প্রশ্রয় দিই না।'
মুখ্যমন্ত্রী মমতা কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে অপব্যবহারের অভিযোগও তোলেন। তিনি বলেন, 'কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছেন। তাদের প্ররোচনায় পা দেবেন না।'