ভারতের জয়পুরে মসজিদে প্রতিবাদের ঘটনায় বিজেপি এমএলএর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের

ভারতের জয়পুরের ওয়াল্ড সিটি এলাকায় শুক্রবার রাতে জামে মসজিদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করার পর বিজেপি এমএলএ বালমুকুন্দ আচার্যের বিরুদ্ধে 'ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট' (এফআইআর) দায়ের করা হয়েছে।
স্ক্রল.ইন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে আচার্যের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে একটি জনসমাবেশের নেতৃত্ব দেন, যেখানে "জয় শ্রী রাম" স্লোগান দেওয়া হয় এবং মসজিদ প্রাঙ্গণে "পাকিস্তান মুর্দাবাদ" পোস্টার লাগানো হয়। কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে আচার্য এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে আর কখনো মসজিদে প্রবেশ না করার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, আচার্য ও তার সমর্থকরা গেরুয়া পতাকা এবং মশাল নিয়ে বাজে স্লোগান দিতে থাকেন।
জামে মসজিদ কমিটির সদস্য হাফিজ মনসুর আলী খান বলেন, "আচার্য রাত ৮টা ৩০ মিনিটের দিকে মসজিদে প্রবেশ করেন, 'পাকিস্তান মুর্দাবাদ' পোস্টারটি গেটে লাগান এবং 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান দেন।"
ঘটনাটি সিকিউরিটি ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয় এবং এর ফলে প্রায় ১,৫০০ জন লোক (হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের) বাদি চৌপরে জমায়েত হয়।
কংগ্রেস এমএলএ রফিক খান ও আমিন কাগজি এবং পুলিশ কমিশনার বিজু জর্জ জোসেফ পরিস্থিতি শান্ত করতে এবং উত্তেজনা বাড়তে না দেওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছান।
জামে মসজিদ কমিটির অভিযোগের পর জয়পুর পুলিশ আচার্যের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৮ (প্রার্থনার স্থান অপবিত্র করা বা ক্ষতিগ্রস্ত করা), ৩০০ (ধর্মীয় সমাবেশে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা), ৩০২ (ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্যে শব্দ উচ্চারণ করা), এবং ৩৫১ (সন্তাসী হুমকি দেওয়া) ধারায় এফআইআর দায়ের করে।
মণক চৌক পুলিশ স্টেশনের এসএইচও গুর ভূপেন্দ্র সিং বলেন, "শুক্রবার রাতে পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। আমরা ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক কষ্ট করেছি।"
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কংগ্রেস এমএলএ কাগজি ও খান বলেন, আচার্যের কর্মকাণ্ডে মুসলিম সম্প্রদায় গভীরভাবে আহত হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে, বিজেপি আচার্যের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে। রাজস্থান বিজেপির সভাপতি মদন রাঠোর বলেছেন, "আমি বালমুকুন্দ আচার্যের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছিলেন, তিনি পহেলগাম ঘটনার প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, তিনি মসজিদে পৌঁছানো ভিড়কে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। তবে আমি তাকে স্পষ্টভাবে বলেছি, কেউ মসজিদে প্রবেশ করা উচিত না। এমন কর্মকাণ্ড সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করে। আমাদের জাতীয় শত্রুদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে থাকতে হবে, নির্দোষ নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু বানানো উচিত নয়। আমরা সব ধর্মকে সম্মান করি।"
আচার্য হাওয়া মহল নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রথমবার নির্বাচিত এমএলএ। পূর্বে তিনি গরুর মাংস খাওয়া, মসজিদে লাউডস্পিকার ব্যবহারের বিরুদ্ধে, স্কুলে হিজাব পরা মেয়েদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং জয়পুর থেকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা শরণার্থী সরানোর দাবি তুলেছেন। তিনি হাথোজ ধাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিতও।