আইএফআইসি আমার বন্ড কেলেঙ্কারি: সালমান-শায়ান-শিবলী রুবাইয়াতকে আজীবন পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ছেলে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে দেশের পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বিএসইসি।
আজ বুধবার (৩০ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে বিএসইসি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৪ জুন ৮৭১ তম কমিশন সভায় 'আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড'- শীর্ষক ১৫০০ কোটি টাকার মূল্যের এবং ও ১০০০ কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ড অনুমোদিত হয়েছিল। ওই বছরের ১২ জুলাই ওই বন্ডের সম্মতি পত্র ইস্যু করা হয়েছিল।
বন্ডটির ইস্যুয়ার ছিল শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড; যা ২০২৩ সালের ২ মার্চ প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই ১১ এপ্রিল ওই বন্ড ইস্যুর আবেদন করেছিল।
ওই কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ২৪৮ কোটি টাকার নগদ অর্থ ভূমি ক্রয়/উন্নয়ন সংক্রান্ত কারণে উত্তোলন করা হয়েছিল; যেটি কমিশনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
এছাড়াও বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টর) হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, অ্যাডভাইজার অ্যান্ড অ্যারেঞ্জার হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড, ট্রাস্টি হিসেবে সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড, ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে এমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড (ইসিআরএল), নিরীক্ষক হিসেবে এম.জে. আবেদীন অ্যান্ড কো. চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস দায়িত্ব পালন করেছে।
আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি ওই বন্ড ইস্যু করেনি, মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ রিমিটেড (এসটিএল) ওই বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে 'আইএফআইসি আমার বন্ড' নামটি ব্যবহার করা হয়েছে। যা বিনিয়োগকারীকে ধারণা দেয় যে, এই বন্ড আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; কিন্তু আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি ছিল মূলত বন্ডটির জামিনদার।
এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়। এ বিষয়ে 'পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি' কর্তৃক অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালিত হয়েছে এবং এর প্রতিবেদন কমিশনে জমা হয়েছে।
এ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি'র তৎকালীন চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করার এবং পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি'র তৎকালীন ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা অর্থদন্ডে দণ্ডিত করার এবং পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্চিত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে বন্ড এবং বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগত নিয়মভঙ্গের কারণে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্চিত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়াও, আইএফআইসি ব্যাংক, বিএসইসি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার কারণে নানা শাস্তির মুখে পড়েছেন।
আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের তৎকালীন সিইও মো. ইমরান আহমেদকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সকল ধরণের কাজে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি'র তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে এমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডকে ১০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তৎকালীন কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্চিত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বরা হয়েছে, গতকাল (২৯ জুলাই) কমিশনের সভাকক্ষে কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে বিএসইসির ৯৬৫তম কমিশন সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে, ২০১০ সালের শেয়ার বাজারের পতনের পর; আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ৬০ জন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে,যাদের মধ্যে রয়েছেন সালমান এফ রহমানও ছিলেন; যারা শেয়ার বাজার কারসাজির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেছিলেন।
কমিটি সরকারকে ভবিষ্যতে কেলেঙ্কারি রোধ করতে সালমানের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্যও সতর্ক করে।
সালমান এফ রহমান ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাক্তন বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ছিলেন।