রায় জালিয়াতির অভিযোগ: আদালতে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল বললেন, 'ইটস নট ট্রু'

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায়কে কেন্দ্র করে বেআইনি আদেশ প্রদান, নথিপত্র জালিয়াতি ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ এনেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে জানিয়েছেন খায়রুল হক।
শুনানি চলাকালে আদালতে দাঁড়িয়ে খায়রুল হক বলেন, 'ইট'স নট ট্রু' (এটা সত্য নয়)।
বুধবার (৩০ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহর আদালতে তার রিমান্ড শুনানিকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। আদালত এদিন তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাথায় হেলমেট, দুই হাতে হাতকড়া ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে খায়রুল হককে আদালতে হাজির করে পুলিশ। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে তাকে এজলাসে তোলা হয় এবং ১০ মিনিট পর শুনানি শুরু হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক খালেক মিয়া শুনানিতে তার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। তিনি বলেন, 'ওনার রায়ের কারণে তিনটি প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। এ রায় কেন দিয়েছেন? কার নির্দেশে দিয়েছেন? কারা জড়িত—তা জানা দরকার।'
রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার শুনানিতে বলেন, 'রিটায়ার্ড হওয়ার ১৬ মাস পর তিনি এই রায় দেন। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারকে স্বৈরাচার বানানোর উদ্দেশ্যে তিনি এ রায় দিয়েছেন।'
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, 'সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী বাতিল করে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি সুপ্রিম কোর্টে বিতর্কিত রায় দেন। এই ঘটনায় দণ্ডবিধির ২১৯ ও ২৬৪ ধারায় মামলা হয়েছে। এতে ৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের একটি পুরোনো রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করতে এই রায় ব্যবহার করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিলে শেখ হাসিনা, তার দোসর বিচারপতিরা এবং আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কেও তথ্য বের করা সম্ভব হবে।'
এই অভিযোগগুলোর জবাবে এ বি এম খায়রুল হক বলেন, 'ইট'স নট ট্রু।'
এদিন শুনানিতে আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। শুনানি শেষে আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের সংক্ষিপ্ত আদেশ ২০১১ সালের ৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে দেওয়া হয়, যেখানে খায়রুল হকের সঙ্গে তিনজন বিচারপতি একমত থাকলেও তিনজন ভিন্নমত পোষণ করেন।
রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়, ১৬ মাস পর ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর খায়রুল হক ইচ্ছাকৃত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুর্নীতিমূলকভাবে সংক্ষিপ্ত আদেশকে উপেক্ষা করে আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় লেখেন। এতে তিনি এবং আরও তিন বিচারপতি বেআইনিভাবে রায় প্রকাশ করেন এবং বিচারক হিসেবে লোভ ও বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে জালিয়াতি করেন।
প্রাথমিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে পুলিশ জানায়, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ১৩তম সংশোধনী বাতিল ও এর সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে।
২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এতে দণ্ডবিধির ২১৯ ও ৪৬৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, খায়রুল হক শেখ হাসিনার ইচ্ছা পূরণ ও অবসর পরবর্তী পদায়নের লোভে দুর্নীতিমূলকভাবে রায় পরিবর্তন করে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।
গত ২৪ জুলাই ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এরপর তাকে এক কিশোর হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।