'ভালো বন্ধু' ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চান ট্রাম্প

ভারতের ওপর ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক বসাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই হারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। চলতি সপ্তাহেই এ বিষয়ে একটি বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা চলছে, যার নির্ধারিত সময়সীমা ১ আগস্ট।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, 'হ্যাঁ, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।' স্কটল্যান্ড সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে ট্রাম্প বলেন, 'ভারত আমাদের ভালো বন্ধু, তবে ওরা প্রায় সবার চেয়ে বেশি শুল্ক ধার্য করে থাকে। এটা চলতে পারে না।'
এই ঘোষণার পর টানা তিনদিন ধরে পতন ঘটতে থাকা ভারতীয় রুপি আরও দুর্বল হয়েছে। ডলারের বিপরীতে রুপির মান ০.৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮৭.২৪। একইসঙ্গে ভারতের শেয়ারবাজার সূচক বিএসই সেনসেক্স শুরুর লাভ হারিয়ে স্থির হয়ে যায়।
২০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হারে শুল্ক বসানো হলে তা ভারতের জন্য হতাশাজনক হবে। এর আগে ট্রাম্প ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের সঙ্গে ১৯ শতাংশ হারে চুক্তি করেছিলেন। ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এমন একটি চুক্তির দিকে যাচ্ছিল, যেখানে শুল্ক হার ২০ শতাংশের নিচে থাকবে। তবে সেই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি ও দুগ্ধ খাত উন্মুক্ত করতে চাওয়ায় ভারত বাধা দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের মধ্যে ভারত থেকে প্রধানত আসে রত্ন ও গয়না, ওষুধ, যন্ত্রাংশ ও টেক্সটাইল এসব খাতেই প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির জন্য 'টার্মস অব রেফারেন্স' স্বাক্ষর করেছে। তবে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তির আশা করা হলেও তা অদূর ভবিষ্যতে সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ভারতের একজন সরকারি কর্মকর্তা। তবে শরতের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ চুক্তির ব্যাপারে ভারত আশাবাদী বলেও জানান তিনি। তার ভাষ্য, এখনো হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়নি ভারত কী ধরনের শুল্কের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
চুক্তি নিয়ে উভয় দেশ এখন পর্যন্ত পাঁচ দফা আলোচনা করেছে। আগস্টের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল আবারও দিল্লি সফর করবে বলে জানানো হয়েছে।
তবে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় বুধবার এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে পাঠানো ই-মেইলে কোনো জবাব দেয়নি।
সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা উত্তেজনার মধ্যে পড়েছে। এপ্রিল মাসে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের দাবি এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারতকে 'সেকেন্ডারি ট্যারিফ' হুমকি দেওয়ায় দিল্লির কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সোমবার বলেন, ভারত মার্কিন পণ্যের জন্য বাজার আরও উন্মুক্ত করতে কতটা প্রস্তুত তা বোঝার জন্য আরও সময় দরকার। এদিনই রয়টার্স জানিয়েছিল, ভারত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসানোর আশঙ্কা করছে।
ব্লুমবার্গের আরেক খবরে বলা হয়েছে, চুক্তিতে ভারতের 'রেড লাইন'গুলো স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে মোদি প্রশাসন। জেনেটিকালি মডিফায়েড ফসল আমদানিতে রাজি নয় ভারত এবং দুগ্ধ ও গাড়ি খাতেও বড় পরিসরে বাজার উন্মুক্ত করতে অনাগ্রহী। তবে কিছু পণ্যে, যেমন ওষুধ ও গাড়ির যন্ত্রাংশে শুল্ক একেবারে শূন্য করার প্রস্তাব দিয়েছে দিল্লি।
মোদি সরকার এখন সংবেদনশীল কৃষি খাত রক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ এই খাতেই বিপুলসংখ্যক ভারতীয়ের জীবিকা জড়িত। আর রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনের আগে কৃষকদের মন জয় করাও সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
প্রসঙ্গত, ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পাল্টা শুল্ক ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা, যার আওতায় একাধিক দেশের ওপর শুল্ক বসানো হবে। যদিও এপ্রিলেই ট্রাম্প নতুন শুল্কের ঘোষণা দেন, পরে আলোচনার সুযোগ দিতে তা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনেন। তবে এখন পর্যন্ত কিছু দেশের সঙ্গে চুক্তি হলেও বেশিরভাগ আলোচনাই অমীমাংসিত রয়ে গেছে।