৭ অক্টোবরের মধ্যে ‘শাপলা’র পরিবর্তে অন্য প্রতীক বেছে নিতে এনসিপিকে ইসির চিঠি

নিবন্ধনের প্রাথমিক পর্যালোচনায় গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের তালিকা থেকে একটি প্রতীক বেছে নিতে চিঠি দিয়েছে ইসি।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ নতুন দল নিবন্ধন সংক্রান্ত ইসির সিদ্ধান্ত জানানোর পর এ চিঠি এনসিপির আহ্বায়কের বরাবর পাঠানো হয়। তবে দলটির পক্ষ থেকে প্রথম পছন্দ হিসেবে রাখা প্রতীক 'শাপলা' বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, 'জাতীয় নাগরিক পার্টি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল, যা প্রাথমিক পর্যালোচনায় গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। দলটির আবেদনপত্রে পছন্দের প্রতীকের ক্রমানুযায়ী শাপলা, কলম ও মোবাইল উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৯(১) অনুযায়ী প্রার্থীর অনুকূলে বরাদ্দের জন্য নির্ধারিত প্রতীকের তালিকায় 'শাপলা' প্রতীকটি বর্তমানে অন্তর্ভুক্ত নেই। এমতাবস্থায়, দলটিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯০৮ (১) (খ)-এর বিধান সম্পর্কে অবগত করা হয়। ওই বিধান অনুযায়ী, কোনো দল কর্তৃক মনোনীত সকল প্রার্থীর জন্য নির্ধারিত প্রতীক থেকে পছন্দকৃত যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা হবে এবং এইভাবে বরাদ্দকৃত প্রতীক দলটির জন্য সংরক্ষিত থাকবে। যদি না দলটি পরবর্তীতে অন্য কোনো প্রতীক লাভে ইচ্ছা প্রকাশ করে।'
এ জটিলতা নিরসনে নির্বাচন কমিশন এখন জাতীয় নাগরিক পার্টিকে দ্রুত নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৯(১) অনুযায়ী ইসির তালিকাভুক্ত অব্যবহৃত প্রতীকগুলোর মধ্যে থেকে একটি বেছে নিতে বলেছে।
তবে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী অভিযোগ করেছেন, শাপলা প্রতীক বরাদ্দে কোনো আইনি বাধা না থাকলেও ইসি তাদেরকে 'হাস্যকর প্রতীক' দিতে চাইছে।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বাংলামটরের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'ইসির কাছ থেকে নিবন্ধন সংক্রান্ত চিঠি আমরা পেয়েছি। সেখানে আমাদের জন্য আলমিরা, উটপাখি, কাপ-পিরিচ, থালাবাটি প্রতীক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এগুলো খুবই হাস্যকর। ইসি আমাদের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারী ও বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা আগেই জানিয়েছি- এনসিপির শাপলা প্রতীক পেতে কোনো আইনি বাধা নেই। ইসিরও অন্য কোনো চাপ অনুভব করার কথা নয়। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের দাবি তুলেছিলাম। কিন্তু বর্তমান কমিশন একদলীয় অফিসে পরিণত হয়েছে। তাদের কার্যক্রম সংবিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।'
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর অভিযোগ করে আরও বলেন, 'অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতীক জাতীয় প্রতীকের উপাদান থেকে নেওয়া হলেও এনসিপির ক্ষেত্রে শুধু আপত্তি তোলা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রতীক না পেলে আমরা কী করব? জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক উপায়ে আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব।'
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ''জাতীয় লীগ' নামে একটি দল নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে। অথচ এ পর্যন্ত আমরা দলটির কোনো মিছিল, সভা বা সেমিনার দেখিনি। এসব কারণে ইসির প্রতি আমাদের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।'
এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ আমলে নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে নতুন দলের জন্য বরাদ্দযোগ্য প্রতীকের সংখ্যা ৫০টি। এর মধ্যে এনসিপিকে যেসব প্রতীক থেকে বেছে নিতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো- বেগুন, কলা, বেলুন, লিচু, স্যুটকেস, টিফিন ক্যারিয়ার, আলমিরা, খাট, উটপাখি, ঘুড়ি, কাপ-পিরিচ, চশমা, দালান, চার্জার লাইট, কম্পিউটার, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, ফ্রিজ, তবলা, বক, মোরগ, কলম, তরমুজ, বাঁশি, লাউ, কলস, চিংড়ি, থালা, বেঞ্চ, দোলনা, প্রজাপতি, ফুটবল, ফুলের টব, মোড়া, বালতি, কলা, বৈদ্যুতিক পাখা, মগ, মাইক, ময়ূর, মোবাইল ফোন, শঙ্খ, সেলাই মেশিন, সোফা, হরিণ, হাঁস ও হেলিকপ্টার।