পরিবার ও সরকার নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়ার পরও পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাকে বাংলাদেশে পুশইন বিএসএফের

কাজের জন্য ভারতের মহারাষ্ট্রে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ৩৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। কিন্তু তাকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী সন্দেহে আটক করে মহারাষ্ট্র পুলিশ এবং গত শনিবার ভোর রাতে তাকে বাংলাদেশে পুশইন করে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ, রাজ্যের অভিবাসী কল্যাণ বোর্ড এবং ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও মহারাষ্ট্র পুলিশ ও বিএসএফ মেহবুব শেখকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
পশ্চিমবঙ্গ অভিবাসী কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'শেখের পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর আমরা মহারাষ্ট্র পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সমস্ত (প্রয়োজনীয়) কাগজপত্র তাদের পাঠানো হয়। তারা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করেনি, আর বিএসএফ শেখকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।'
শেখের পরিবার জানিয়েছে, তারা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ভাগবনগোলা থানার মহিসাস্থলী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার হোসেননগর গ্রামের বাসিন্দা। ৩৬ বছর বয়সী মেহবুব শেখ মহারাষ্ট্রে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।
শেখের ছোট ভাই মুজিবুর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ফোনে মুর্শিদাবাদ থেকে বলেন, 'গত দুই বছর ধরে শেখ মহারাষ্ট্রে কাজ করছিলেন। তিনি মুম্বাইয়ের কাছাকাছি থানের মীরা রোড এলাকায় থাকতেন। পাঁচ দিন আগে (বুধবার, ১১ জুন) চা খাওয়ার সময় পুলিশ তাকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে এবং কানাকিয়া থানায় নিয়ে যায়।'
তিনি আরও বলেন, 'তিনি কানাকিয়া থানা থেকে আমাদের ফোন করেছিলেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন, আমাদের পঞ্চায়েত প্রধান এবং অভিবাসী কল্যাণ বোর্ডকে বিষয়টি জানাই। তারা জানায় যে, মহারাষ্ট্র পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। শুক্রবারের মধ্যেই আমরা মহারাষ্ট্র পুলিশের কাছে মেহবুব শেখের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড এবং এমনকি পঞ্চায়েত কর্তৃক প্রত্যয়িত আমাদের পারিবারিক বংশতালিকাও পাঠিয়ে দিই।'
মহিসাস্থলী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শাব্বির আহমেদ বলেন, মেহবুব শেখকে শিলিগুড়ির একটি বিএসএফ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জানতে পেরে তারা দ্রুত সেখানে ছুটে যান।
পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, 'শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় থানার পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয় যে, মহারাষ্ট্র পুলিশ তাদের অবহিত করেছে যে মেহবুবকে শিলিগুড়ির একটি বিএসএফ ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। আমার ভাই মুজিবুর সঙ্গে সঙ্গে ওই ক্যাম্পে ছুটে যায়। কিন্তু সেখানে আমাদের কোনো কথাই শোনা হয়নি। আমাদের সঙ্গে কেউ সহযোগিতা করেনি।'
পরিবারের দাবি, শনিবার (১৪ জুন) মেহবুব শেখ তাদের ফোন করে জানায়, বিএসএফ ভোর রাত সাড়ে ৩টায় তাকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে।
মুজিবুর বলেন, 'ওইদিন শনিবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে বিএসএফ তাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বলে সে ফোনে জানায়। সে একটি গ্রামের আশ্রয়ে ছিল, সেখান থেকেই ফোন করেছিল। ফোনে সে কাঁদছিল। তার স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। আমরা শুধু চাই সে ফিরে আসুক। আমরা জানি না বাংলাদেশে সে আর কতদিন টিকে থাকতে পারবে।'
অন্যদিকে, মহারাষ্ট্র পুলিশ তাদের পদক্ষেপের পক্ষে সাফাই দিয়ে জানিয়েছে, মেহবুব নিজের জাতীয়তা প্রমাণে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে "ব্যর্থ" হয়েছে। তারা আরও জানায়, আধার কার্ড ও প্যান কার্ডকে নাগরিকত্ব প্রমাণের কাগজ হিসেবে গণ্য করা হয় না।