‘বাংলাদেশে গণহত্যা’ নিয়ে দিল্লিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের সংবাদ সম্মেলন শেষ মুহূর্তে স্থগিত

'বাংলাদেশে গণহত্যা' বিষয়ে কথা বলতে বুধবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রীরা। তবে অনুষ্ঠানের ঠিক আগমুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (বিএইচআরডব্লিউ) নামে একটি অস্তিত্বহীন সংগঠনের ব্যানারে গতকাল স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টায় এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের কথা ছিল। এর আয়োজক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী যিনি নিজেকে ওই সংগঠনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার মহাসচিব হিসেবে দাবি করেন।
সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেছেন তিনি। গত বছরের আগস্টে টানা ছাত্র আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকারের পতনের পর এ ধরনের কার্যক্রম আরও সক্রিয় হয়েছে।
আয়োজকরা জানিয়েছিলেন, সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের 'গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রীরা' গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক 'সহিংসতা' এবং দেশের 'গণহত্যা'র প্রসঙ্গে বক্তব্য দেবেন।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির সমাবেশ ঘিরে সহিংসতায় চারজন নিহত হন।
তবে সাংবাদিকরা সম্মেলনস্থলে জড়ো হওয়ার পর সিদ্দিকী এক বিবৃতিতে জানান, ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের সম্মানে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছে। ওই দুর্ঘটনায় ৩৫ জনের বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই শিশু, প্রাণ হারান এবং প্রায় ১৭০ জন আহত হন।
সিদ্দিকী বলেন, 'এই গভীর শোকাবহ পরিস্থিতিতে এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' তিনি জানান, অনুষ্ঠানটি পরবর্তী সময়ে নতুন তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।
বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে 'স্বাধীন তদন্ত' দাবি করেন সিদ্দিকী। পাশাপাশি তিনি অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অভিযোগ পুনরুল্লেখ করেন।
জানা গেছে, গত কয়েক দিনে আওয়ামী লীগের একাধিক সাবেক নেতা—যাদের মধ্যে হাসান মাহমুদ, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং মোহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল রয়েছেন—দিল্লি সফর করেছেন। তাদের কয়েকজনের এই সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
দিল্লিস্থ কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, এই সম্মেলন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনানুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ জানিয়েছিল। বিশেষ করে, আগামী ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক বছর পূর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী দেশের মাটিতে এমন একটি বিতর্কিত অনুষ্ঠান প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চলমান প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া, দিল্লি বরাবরই জানিয়ে এসেছে যে, তারা বাংলাদেশে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। আর এমন একটি রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর অনুষ্ঠান সেই নিরপেক্ষ অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।
গত বছর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতি ঘটে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর 'নিপীড়নের' ঘটনায় ভারত উদ্বেগ জানিয়েছে। পাশাপাশি ভারত বাংলাদেশি পণ্যের ওপর একাধিক আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যা স্থল ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।