নিলামে আরও চড়া দামে ১০ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

ডলারের বাজারকে ঊর্ধ্বমুখী করার ইঙ্গিত দিতে কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল (২৩ জুলাই) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নিলামের মাধ্যমে ১০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। এর ফলে মাত্র আট দিনের ব্যবধানে কাট-অফ রেট ০.৪৫ টাকা বাড়ানো হলো।
নিলামে ডলার কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর টিবিএসকে জানান, গতকাল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কেনার ক্ষেত্রে ১২১.৯৫ টাকা কাট-অফ রেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ১৩ ও ১৫ জুলাই দুটি নিলামে ১২১.৫০ টাকা দরে ৪৮৬ মিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ এই লেনদেনের ফলে নিলামের মাধ্যমে মোট ডলার কেনার পরিমাণ দাঁড়াল ৪৯৬ মিলিয়ন ডলারে।
শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল দুপুরে আমাদের নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান করে। তারা নিলামে দাম বাড়িয়ে মার্কেটকে মূলত আপওয়ার্ড সিগন্যাল দিয়েছে। এই সিগন্যালের কারণে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ডলারের দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে।'
তিনি আরও বলেন, আগের নিলামগুলোতে ব্যাংকগুলো অনেক বেশি ডলার বিক্রির আগ্রহ দেখালেও গতকাল খুব বেশি ব্যাংক আগ্রহ দেখায়নি। ফলে চড়া দর দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ডলার কিনতে পারেনি।
বাজারের গতিপ্রকৃতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৌশল
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার কেনার নীতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, ব্যাংকগুলো কী পরিমাণ ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করবে, সেটি তাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।
তিনি বলেন, 'গত কয়েকদিনে বাজারে ডলারের দাম কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো আমদানি এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করায় ডলারের বাজার বর্তমানে কিছুটা টাইট।'
মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, আগামী সপ্তাহে ডলারের প্রবাহ বাড়লে বাজারের তারল্য পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। 'ডলারের বাজার প্রতি সপ্তাহেই ওঠা-নামা করে। গত কয়েকদিনে ডলারের রেট বাড়লেও সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে না বলেই আমাদের মনে হয়। সপ্তাহ দুয়েক আগে ডলারের বাজারে যে অস্থিতিশীলতা ছিল, সেটি এখন প্রায় নেই বললেই চলে। তবে বাজারকে আমাদের আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করতে হবে।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ডলারের বাজারে স্পট বিনিময় হার ছিল ১২১.৯৪ টাকা। আর ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক বাজারে ১২১.৬০ টাকা থেকে ১২২.০২ টাকা দরে ডলার লেনদেন করেছে।
শীর্ষস্থানীয় আরেকটি বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'বুধবার আন্তঃব্যাংক বাজারেই ডলারের দাম ১২২ টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপওয়ার্ড সিগন্যালের পর আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সেটি আরও বাড়বে।'
তিনি আরও বলেন, 'এই সম্ভাবনার (স্পেকুলেশন) ওপর ভিত্তি করে অধিকাংশ ব্যাংকই কম দামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি না করে ধরে রেখেছে। এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে।'
এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে প্রায় আধা বিলিয়ন ডলার কেনার কারণে ব্যাংকগুলোর তারল্যেও কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওই ব্যাংকার।
উল্লেখ্য, এক সপ্তাহের মধ্যে ডলারের দাম প্রায় ৩ টাকা কমে যাওয়ার পর গত ১৩ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনে। সেদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২১.৫০ টাকা দরে ১৭৩ মিলিয়ন ডলার কেনে।
তখন ব্যাংকগুলো ১২০ থেকে ১২০.৫০ টাকায় ডলার বিক্রির প্রস্তাব দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারদর বাড়ানোর ইঙ্গিত দিতে একটি ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে বেশি দামে ডলার কিনেছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরেকটি নিলামের মাধ্যমে একই দরে আরও ৩১৩ মিলিয়ন ডলার কেনে। পরপর দুটি নিলামে বেশি দামে ডলার কেনার পর মুদ্রাটির দাম বাড়তে শুরু করে। গতকাল রেমিট্যান্স ও আন্তঃব্যাংক বাজারে ডলারের দর ১২২ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে ব্যাংকগুলো আমদানি এলসি নিষ্পত্তির জন্য ১২২.৫০ টাকা পর্যন্ত রাখছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেকজন নীতি নির্ধারণী কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ডলারের রেট সরাসরি নির্ধারণ করতো, তখন একটি নির্দিষ্ট দরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনত। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে নেওয়া ঋণের শর্তানুযায়ী, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করা হয়।
এই ঋণের আলোচনার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফকে আশ্বস্ত করেছিল, তারা আগের মতো আর সরাসরি বাজারে হস্তক্ষেপ করবে না, কখনও বাজার থেকে ডলার কেনার প্রয়োজন হলে মার্কেট রেটেই কিনবে। সে অনুযায়ীই বর্তমানে বাজার থেকে ডলার কেনার ক্ষেত্রে নিলামের আয়োজন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।