কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বোমা বিস্ফোরণ, ৪০০ লিটার কেমিক্যাল উদ্ধার
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর সেখানে অভিযান চালিয়ে ৪০০ লিটার তরল রাসায়নিক ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, সেখানে 'সুইসাইডাল ভেস্ট' বা আত্মঘাতী হামলার জ্যাকেট তৈরির কাজ চলছিল।
গতকাল শুক্রবার বিস্ফোরণের ঘটনার পর শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান কেমিক্যাল ও বিস্ফোরক উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, 'বিস্ফোরণের পরপরই আমরা অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটকে (এটিইউ) এবং সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটকে খবর দিই। ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে একটি মনিটর, বিভিন্ন ধরনের ৪০০ লিটার তরল রাসায়নিক এবং চারটি ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে।'
পুলিশ সূত্র জানায়, ওই মাদ্রাসায় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের সঙ্গে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে 'টিএটিপি' (উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক) তৈরি করা হচ্ছিল, যা সাধারণত আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহার করা হয়।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম জানান, শনিবার বিকেল পর্যন্ত বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট প্রায় ২৫০ কেজি বোমা তৈরির সরঞ্জাম নিরাপদে নিষ্ক্রিয় করেছে। এছাড়া সেখান থেকে অপরিশোধিত বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে হাসনাবাদ এলাকার 'উন্মুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা' ভবনে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে মাদ্রাসার পরিচালক শেখ আল আমিন ওরফে রাজিব (৩২), তার স্ত্রী আসিয়া বেগম (২৮), তাদের দুই ছেলে এবং পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির আহত হন। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ভবনের ছাদ ও বিমে ফাটল ধরে এবং মাদ্রাসার দুটি কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় শিক্ষার্থীরা না থাকায় বড় প্রাণহানি এড়ানো গেছে।
পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণের পর আল আমিন তার আহত স্ত্রী ও সন্তানদের প্রথমে স্থানীয় আদ-দ্বীন হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে পরিবারকে রেখে কৌশলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
আল আমিনের কোনো উগ্র সংগঠনের সঙ্গে যোগসাজশ আছে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আল আমিনের নামে ঢাকার আশেপাশে কয়েকটি মামলা আছে। আমরা তদন্ত চালু রেখেছি। জানা গেছে, দুইবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, জেলেও ছিলেন। ২০২৩ সালে জামিনে এসে অটোরিকশা চালিয়েছেন কিছুদিন। বর্তমানে উবার চালাতেন।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত আলামিনের স্ত্রী আসিয়া, ভাবি ইয়াসমিন আক্তার এবং আসমানি খাতুন নামে তিন নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ বর্তমানে পলাতক আল আমিন এবং ভবনটি ভাড়া নেওয়া মুফতি হারুনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।
