দুই সপ্তাহ ইন্টারনেট ছাড়া স্মার্টফোন ব্যবহারে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়: গবেষণা

আমরা কি স্মার্টফোনের প্রতি অতিমাত্রায় আসক্ত? বাস্তবতা হলো, আমাদের হাতে যখন ইন্টারনেট ২৪ ঘণ্টা সহজলভ্য, তখন এর থেকে দূরে থাকা কঠিন।
কিন্তু এটি কি আমাদের মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর? সম্ভবত, হ্যাঁ। 'ডুমস্ক্রলিং'-এর মতো শব্দের প্রচলনই এই উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়। তবে অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ও মনোযোগ হ্রাসের সম্পর্ক থাকলেও, সরাসরি কারণ নির্ধারণ করা কঠিন।
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গবেষকরা এক অভিনব পরীক্ষা চালান। অংশগ্রহণকারীদের স্মার্টফোনে সম্পূর্ণ ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয় টানা দুই সপ্তাহের জন্য। তারা ফোন কল ও এসএমএস পাঠাতে পারলেও, অনলাইনে যেতে হলে কম্পিউটার ব্যবহার করতে হতো।
পিএনএএস জার্নাল প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, স্বল্পমেয়াদি পরীক্ষা হলেও অংশগ্রহণকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য, মনোযোগ এবং সামগ্রিক ভালো থাকার অনুভূতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটিয়েছে।
গবেষণার সহলেখক এবং ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের সহযোগী অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান ওয়ার্ড বলেন, 'গত ১৫ বছরে স্মার্টফোন আমাদের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এনেছে, কিন্তু মানুষের মৌলিক মনস্তত্ত্ব একই রয়েছে। আমাদের মূল প্রশ্ন ছিল—আমরা কি সর্বক্ষণ সংযুক্ত থাকার উপযোগী? গবেষণার তথ্য বলছে, আমরা নই।'
এই গবেষণায় ৪৬৭ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন, যাদের গড় বয়স ছিল ৩২ বছর। এক মাসব্যাপী এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের দুই দলে ভাগ করা হয়—এক দল মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেনি, এবং অন্য দল শেষ দুই সপ্তাহ। এরপর তারা ভূমিকা বদল করে, যাতে গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, ইন্টারনেট ব্যবহারে বিরতি নেওয়ার প্রভাব কতদিন স্থায়ী হয়।
বিশেষ একটি আইফোন অ্যাপ ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীদের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হতো, এবং তারা এটি চালু করলে তা রেকর্ড করা হতো। পাশাপাশি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন বোঝার জন্য সেলফ-রিপোর্টেড জরিপ ও কম্পিউটার-ভিত্তিক মনোযোগ পরীক্ষাও নেওয়া হয়।
ফলাফলে দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী অন্তত একটি সূচকে উন্নতি করেছেন, এবং ৭৫ শতাংশের বেশি ব্যক্তি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির কথা জানিয়েছেন। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, মনোযোগ বৃদ্ধির হার ১০ বছরের বয়স-সংক্রান্ত স্বাভাবিক মনোযোগ কমে যাওয়ার বিপরীত পরিমাণ। অর্থাৎ, এই পরিবর্তন ছিল বয়সজনিত মনোযোগ হ্রাসের স্বাভাবিক প্রবণতাকে উল্টে দেওয়ার মতো।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র দুই সপ্তাহ ইন্টারনেট ছাড়া থাকার ফলে হতাশা কমানোর ক্ষেত্রে এটি অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্টের চেয়েও বেশি কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির দিক থেকে কগনিটিভ বিহেভিয়োরাল থেরাপির সঙ্গে তুলনীয়। তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, এটি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির প্রচলিত গবেষণাগুলোর মতো নয়।
কেন এমন হলো? গবেষক অ্যাড্রিয়ান ওয়ার্ড মনে করেন, স্মার্টফোন ছাড়াই সময় কাটানো মানুষকে বাস্তব জীবনের আনন্দময় কাজে ব্যস্ত রেখেছে।
তিনি বলেন, 'অংশগ্রহণকারীরা বই পড়া, শখের কাজ করা, মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা বা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর মতো কাজ বেশি করেছেন। এতে তারা ভালো ঘুম পেয়েছেন, সামাজিকভাবে বেশি সংযুক্ত হয়েছেন এবং নিজেদের সিদ্ধান্তের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ অনুভব করেছেন।'
মাত্র দুই সপ্তাহের ছোট্ট বিরতি যদি এত বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, তবে এটি আশাব্যঞ্জক। হয়ত আমাদের অনেকেরই মস্তিষ্কের অতিরিক্ত ডিজিটাল চাপ কাটিয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। তবে এই গবেষণা স্বল্পমেয়াদি ছিল, তাই দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বোঝার জন্য আরও বড় পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন।